ফোস্কাযুক্ত চর্মরোগ বললেই চলে আসে অসংখ্য চর্মরোগের নাম। কিন্তু এতগুলো সবিস্তারে বর্ণনা একবারে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই সংক্ষিপ্ত আকারে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফোস্কাযুক্ত চর্মরোগ নি¤েœ বর্ণনা করা হলো। ফোস্কাযুক্ত চর্মরোগ বলতে আমরা সাধারণভাবে বুঝব যে ত্বকের বহিস্তক-অন্তস্তক থেকে আলাদা হয়ে উঠবে যেখানে ধারণ করবে স্বচ্ছ পানি জাতীয় তরল পদার্থ। এর গভীরতা ত্বকের ইপিডারমিসের যে কোনো স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। এই রোগ বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করা হয়েছে, যেমনÑ ১. জন্মগত : এপিডারমোলাইসিস বুলোসা ২. অ্যান্টিজেন অ্যান্টিবডি বিক্রিয়া : পেম্পিগার, পেম্পিগয়েড, ডার্মাটাইটিস হারপিটিফরমিস ইত্যাদি। ৩. ইনফেশনজনিত : ইমপেটিগো, বসন্ত, ত্বকের স্টেটেফাইলোকক্কাস ইনফেকশন। ৪. জানা কারণ : এরিথেমা মাল্টিফরমি, টক্সিক এপিডারমাল নেকরোলাইসিস। ফোস্কাযুক্ত রোগের মধ্যে পেম্পিগাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রোগ। এবার পেম্পিগাসের কথা অতি সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক। পেম্পিগাস : অজ্ঞাত কারণে এই রোগটি ইহুদি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হতে দেখা যায় যদিও বিশ্বজুড়ে এর বিস্তার। সাধারণভাবে এ রোগটি ২০-৪০ বছর বয়সের মধ্যেই বেশি হতে দেখা যায় যদিও যে কোনো বয়সেই এটা হতে পারে। উপসর্গ : রোগটি আস্তে আস্তে আরম্ভ হতে শুরু করে। প্রথমে এই রোগটি মুখগহ্বরের ঝিল্লিতে শুরু হয় এবং ত্বকের দিকে ক্রমে ক্রমে বিস্তার ঘটতে থাকে। স্বাভাবিক ত্বকে প্রথমে একটি ফোস্কার আকারে দেখা দেয়, যেটা সহজেই রক্তপাত হতে পারে এবং যা কিনা ভালো হতে চায় না অর্থাৎ চিকিৎসা না হলে ওই অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে থাকে। একসঙ্গে অসংখ্য ক্ষত বা ঘা সৃষ্টি হতে দেখা যায়। এ ধরনের ফোস্কা শরীরের যে কোনো স্থানেই হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় মুখম-ল, বুক ও পিঠ, শরীরের ভাঁজযুক্ত স্থান ও দেহের চাপপড়া স্থানসমূহ। ফোস্কাযুক্ত স্থানগুলো সেরে গেলে সেই স্থানগুলোতে কালো দাগ হতে দেখা যায়। কিছু দিন পর পর সেরে যাওয়া ও আবার দেখা দেয়া এ প্রক্রিয়া পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে। রোগটি নির্ণয় করতে এক বায়োপসি, ইমিউনোপ্লোরেন্স পদ্ধতিতে ও্এ অ্যান্টিবডি নির্ণয় ও ঞুধহপশ টেস্ট করা হয়ে থাকে। এখানে উল্লেখ্য, এই পেম্পিগাস রোগের মধ্যে আবার কয়েকটি ভাগও করা হয়েছে। আর একটি উল্লেখযোগ্য রোগ যার নাম হচ্ছে ডার্মোটাইটিস। হাপিটিফরমিস (উঐ) ডার্মোটাইটিস ফোস্কা হতে দেখা যায় এবং এই রোগটি সাধারণভাবে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি হতে দেখা যায়। বাচ্চাদের হঠাৎ করেও শুরু হতে পারে, আবার আস্তে আস্তেও দেখা দিতে পারে। রোগটি এক একটি স্থানে একত্রিত হয়ে ছোট ছোট ফোস্কার আকারে লালচে ভাব নিয়ে ফুটে উঠে, যাতে থাকে প্রচ- রকম চুলকানি। সাধারণত এটা দেহের উভয় পাশের একই স্থানগুলোতে হতে দেখা যায়। সাধারণভাবে আক্রান্ত স্থানগুলো হলো এলবো, নিবাটক, সোল্ডারের স্যাকরাল এরিয়া। ফোস্কাগুলো ফেটে গেলে তখন ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং তা সেরে যাওয়ার পর জায়গাটা দেখতে সাদা রঙের অথবা কালো রঙের হয়ে ফুটে ওঠে। এই রোগটির ক্ষেত্রে ড্যামপসন নামক ওষুধটি দারুণ কার্যকর। ওষুধটি শুরু করার কয়েক দিনের মধ্যেই উল্লেখযোগ্য উপকারিতা ফুটে উঠতে দেখা যায়।
ষ আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন