শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

স্ট্রোকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পৃথিবিতে প্রতি ছয় সেকেন্ডে একজন স্ট্রোকে মারা যায়। স্ট্রোকের ফলে মানুষ হারাচ্ছে কার্যক্ষমতা এবং ব্যায় হচ্ছে প্রচুর অর্থ। শুধুমাত্র ভুল চিকিৎসার কারণে স্ট্রোক আক্রান্ত রোগী হয়ে যাচ্ছে শারীরিক, মানষিক ও কর্মক্ষেত্রে অক্ষম। আমাদের দেশে প্রচলিত একটি ধারণা আছে, হার্টে বা হৃদপি-ে স্ট্রোক হয়। আসলে এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। স্ট্রোক একটি মস্তিষ্কের রক্তনালীর জটিলতাজনিত রোগ।
আসুন এবার জেনে নেয়া যাক স্ট্রোক কি, কেন হয় এবং স্ট্রোক রোগীর ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপির প্রয়োজনিয়তা সম্পর্কে।

স্ট্রোক কি?
কোন কারণে মস্তিষ্কের নিজস্ব রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে স্মায়ুকোষ নষ্ট হয়ে যাওয়াকে স্ট্রোক বলে। স্ট্রোককে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় সেরিব্রো ভাসকুলার এ্যাকসিডেন্ট বলা হয়। যা বাংলা করলে দাঁড়ায়, মস্তিষ্কের রক্তনালীর দুর্ঘটনা। আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন জায়গা আমাদের শরীরের বিভিন্ন কাজের জন্য নির্দিষ্ট থাকে। তাই মস্তিষ্কের কোথায়, কতটুকু আক্রান্ত হয়েছে তার উপর নির্ভর করে স্ট্রোকের ভয়াবহতা।

স্ট্রোকের কারণসমূহ :
সাধারণত দুটি কারণে স্ট্রোক হয়ে থাকে
মস্তিষ্কের রক্তনালীতে কোন কিছু জমাট বাধলে:
যার ফলে রক্তের নালীকা বন্ধ হয়ে যায় এবং মস্তিষ্কের আক্রান্ত অংশের স্মায়ুকোষগুলো অক্সিজেনের অভাবে মারা যায়।
২. মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটলে: উচ্চ রক্তচাপ এই স্ট্রোকের অন্যতম কারণ যেখানে ছোট ছোট রক্তনালীকা
ছিড়ে রক্তক্ষরণ হয়, ফলে মস্তিষ্কের মধ্যে চাপ বেড়ে যায় এবং অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের স্মায়ুকোষগুলো মারা যায়।

স্ট্রোক এর উপসর্গসমূহ :
১. হঠাৎ অতিরিক্ত মাথা ব্যথা।
২. হঠাৎ মুখ, হাত ও পা অবশ হয়ে যাওয়া (সাধারণত শরীরের যে কোন এক পাশ)অনেক সময় মুখের মাংস পেশি অবশ হয়ে যায়, ফলে লালা ঝড়তে থাকে।
৩. হঠাৎ কথা বলতে এবং বুঝতে সমস্যা হওয়া।
৪. হঠাৎ এক চোখে অথবা দুই চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া।
৫. হঠাৎ ব্যালেন্স বা সোজা হয়ে বসা ও দাঁড়াতে সমস্যা হওয়া, মাথা ঘুরানো এবং হাটতে সমস্যা হওয়া।
স্ট্রোক পরবর্তী সমস্যা :
শরীরের এক পাশ অথবা অনেক সময় দুই পাশ অবশ হয়ে যায়, মাংসপেশীর টান প্রাথমিক পর্যায়ে কমে যায় এবং পরে আস্তে আস্তে টান বাড়তে থাকে, হাত ও পায়ে ব্যথা থাকতে পারে, হাত ও পায়ের নড়াচড়া সম্পূর্ন অথবা আংশিকভাবে কমে যেতে পারে, মাংসপেশী শুকিয়ে অথবা শক্ত হয়ে যেতে পারে, হাটাচলা, উঠাবসা, বিছানায় নড়াচড়া ইত্যাদি কমে যেতে পারে, নড়াচড়া কমে যায় যার ফলে চাপজনিত ঘা দেখা দিতে পারে, শোল্ডার বা ঘাড়ের জয়েন্ট সরে যেতে পারে ইত্যাদি
চিকিৎসা পদ্ধতি
স্ট্রোক পরবর্তী সমস্যাগুলো দূর করে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নিয়মিত দিনে ৩-৪ বার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে ২-৬ মাস। এবং মনে রাখবেন, স্ট্রোকের পর যত দ্রুত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু করা যাবে, রোগীর কার্যক্ষমতা ফিরে আসার সম্ভাবনা তত বেশি থাকে।
স্ট্রোকের প্রাথমিক অবস্থায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা :
১। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করণ
২। সঠিক পজিশনিং
৩। মাংস পেশীর স্বাভাবিক দৈর্ঘ্য বজায় রাখা
স্ট্রোকের ২-৩ সপ্তাহ পর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা:
১। মাংস পেশীর স্বাভাবিক টান ফিরিয়ে আনা
২। শরীরের স্বাভাবিক অ্যালাইনমেন্ট ফিরিয়ে আনা
৩। শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের স্বাভাবিক নাড়ানোর ক্ষমতা বা মুভমেন্ট ফিরিয়ে আনা
৪। ব্যালেন্স ও কো-অরডিনেশন উন্নত করা স্বাভাবিক হাঁটার ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা
৫। রোগীর কর্মদক্ষতা বাড়ানো
৬। রোগীর মানষিক অবস্থা উন্নত করা
৭। রোগীকে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে যেতে সাহায্য করা
অতএব রোগীর শারীরিক সমস্যা দূর করে কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ভূমিকা অপরিসীম। সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকুন।
ষ ডা: এম ইয়াছিন আলী
বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল,
বাড়ি-১২/১, রোড-৪/এ, ধানমন্ডি, ঢাকা ।
মোবা : ০১৭১৭ ০৮ ৪২ ০২

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
MOHOSIN KABIR ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:২৮ পিএম says : 0
amar baba 27/10/2020 stroke kora left side a bol passa na bed a asa. nol dia khabad dita hoy. left hand and left leg samanno movement kortapara. faridpur nu medicine dhakhano hoisa. akhon ame kee korta pari. poramosho dila upokito hotam.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন