বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বাবার স্মৃতি খুঁজে বেড়ায় এসি রবিউলের দুই সন্তান

হলি আর্টিজানের পাঁচবছর

মাহবুব আলম | প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০২১, ১১:২২ পিএম

পাঁচ বছর আগে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হন পুলিশ কর্মকর্তা এসি রবিউল করিম। মৃত্যুর একমাস পরেই জন্ম হয় রবিউলের দ্বিতীয় সন্তান কামরুন নাহারের। এখন তার বয়সও পাঁচ বছর। অন্যদিকে কামরুন নাহারের ভাই সাজেদুল করিমের বয়স এখন ১১ বছর। রবিউলের এই দুই সন্তান ছবির মধ্যে তাদের বাবার স্মৃতি খুজেঁ বেড়ায়। ছবির অ্যালবাম থেকে ইউনিফর্ম পড়া বাবার ছবি দেখে সালাম দেয় তারা। অন্যদিকে স্ত্রী সালমা স্বামী হারানোর বেদনা অনেকটা কাটিয়ে উঠলেও শূন্যতা যেনো কোনওভাবে কাটে না তার। বাবাকে খুঁজে বেড়ানো সন্তানদের বেদনা দেকে সালমার কাটিয়ে ওঠা বেদনার তীব্রতা আরও বৃদ্ধি করে। বাবার কথা জিজ্ঞাস করলে সন্তানদের জবাব, ‘বাবা আল্লাহর কাছে চলে গেছেন।’
বলছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে বিসিএস দিয়ে পুলিশ হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করা রবিউল করিমের কথা। ভালই চলছিল তার সংসার ও কর্মজীবন। মানবিক এই পুলিশ কর্মকর্তার স্বপ্ন ছিল সমাজের অবহেলিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা। এই জন্য তিনি প্রতিষ্ঠাও করেছেন শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতাহীন শিশু ও কিশোরদের জন্য একটি বিশেষায়িত বিদ্যালয়। তার আরও ইচ্ছে ছিল একটি বৃদ্ধাশ্রম এবং একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তাবায়নের আগেই ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় শহীদ হন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রবিউলের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীর দিন রবিউলের স্ত্রী উম্মে সালমার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। রবিউলের মৃত্যুর পর পরিবারের অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে তার স্ত্রী সালমাকে জাবি কর্তৃপক্ষ চাকরীর সুযোগ করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক কার্যালয়ের শিক্ষা শাখায় কর্মরত আছেন তিনি।
স্বামীর স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কামরুন নাহার তো বাবার স্পর্শ পায়নি। তবে আমার মনে হয় বাবা জিনিসটা কী তা সে অনুভব করতে পারে। ছবির অ্যালবাম থেকে ইউনিফর্ম পড়া বাবার সব ছবি খুঁজে দিতে পারে সে। সেসব ছবি দেখে দুই ভাইবোনই বাবাকে সালাম দেয়। আর কখনো বা এসে আমাকেই বাবা বলে ডাকে।’
সালমা রবিউলের স্বপ্নের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বেঁচে থাকতে রবিউল স্বপ্ন দেখতো শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতাহীন শিশু ও কিশোরদের জন্য একটি বিশেষায়িত বিদ্যালয়, একটি বৃদ্ধাশ্রম এবং একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার। তিনি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে পারলেও বাকী দুইটা কাজ করে যেতে পারেননি। আর স্কুল প্রতিষ্ঠা করলেও এখনও তা স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করেনি।’
বর্তমানে বিদ্যালয়টি রবিউলের ছোট ভাই শামসুজ্জামান শামস্ দেখাশোনা করেন বলে জানান সালমা। শামসুজ্জামান শামসও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ (৩৫তম ব্যাচ) থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। তিনি স্কুলটি সম্পর্কে বলেন, ‘স্কুলটিকে আমরা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। ভাইয়ের স্বপ্ন ছিলো আবাসিক স্কুলে রূপ দেওয়া কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। স্কুলে বর্তমানে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পঞ্চাশজন শিশু-কিশোর পড়াশোনা করে। আমরা তাদের প্রাথমিক শিক্ষাটা এখানে দিয়ে থাকি।’
বিশেষ ব্যক্তি বা সংগঠন যদি স্কুলটিকে আবাসিক করার কাজে এগিয়ে আসেন তাহলে ভাইয়ের স্বপ্ন পূরণ হবে বলে জানান তিনি। পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় রবিউল করিমের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচমেট মানিকগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা, তার ভাই শামসুজ্জামান শামসসহ তার বন্ধু ও শুভাকাঙ্খীরা। এছাড়া দুপুর ২টার দিকে রবিউল করিম প্রতিষ্ঠিত স্কুলে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন