শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

বার্ধক্যে ঘাড়ে ব্যথা

প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঘাড়ে ব্যথার নানাবিধ কারণ রয়েছে যেমন-যে কোন ধরনের আঘাত লাগা, পজিশনাল অর্থাৎ ঘাড়ের নড়াচড়ার কারণে ব্যথা, হাড়ের ইনফেকশন, অস্টিওপরোসিস, টিউমার, অস্টিও- ম্যালেসিয়া বা ভিটামিন ডি এর অভাব, সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস ইত্যাদি। তবে সাধারণত বয়স বাড়লে ঘাড়ে ব্যথা সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিসের জন্য বেশি হয়। যাদের বয়স ৪৫ বৎসরের বেশি তাদের মধ্যেই এ রোগ বেশি দেখা যায়।
সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস ঘাড়ের দুই হাড়ের মধ্যবর্তী তরুণাস্থির বার্ধক্যজনিত পরিবর্তনের ফলে হয়।
উপসর্গ
*ঘাড়ের ব্যথা হওয়া
*ঘাড় নড়াতে না পারা এবং ঘুরালেই ব্যথা বৃদ্ধি পাওয়া
*ঘাড়ের মাংসপেশী কামড়ানো
*ঘাড়ের ব্যথাসহ হাতের আঙ্গুল ঝিন ঝিন করা
*ঘাড়ে ব্যথাসহ হাত বা হাতের আঙ্গুলে অবশ অবশ ভাব হওয়া
*ঘাড়ের পিছনের ব্যথা মাঝে মাঝে শরীরের অন্যস্থানে ছড়িয়ে যায়- যেমন কাঁধে, হাতে অথবা মাথার পিছনের দিকে।
এ রোগের চিকিৎসা :
সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস রোগটি ভালো হওয়ার রোগ নয় ভালো থাকার রোগ। তাই এ রোগের চিকিৎসায় রোগীর সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। এ রোগে ভাল থাকতে হলে-
*ব্যথা উপশমকারী ওষুধ যেমন-ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম, আইবুপ্রোফেন, নেপরোকসিন ইত্যাদি গ্রুপের অষুধ ভরা পেটে খাওয়া যেতে পারে। ব্যথা বেশি হলে অথবা পেপটিক আলসার থাকলে পায়ু পথে কিংবা মাংসপেশীতে ইনজেকশনের মাধ্যমে এ জাতীয় অষুধ ব্যবহার করা যায়। অনেক সময় রোগীকে মাংসপেশী শিথিলকরণ ওষুধ যেমন-ডায়াজিপাম দেয়া হয়ে থাকে।
সকল ক্ষেত্রে একমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক নির্দিষ্ট মাত্রায় সঠিক নিয়ম অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে।
সার্ভাইক্যাল কলার
ঘাড়ে প্রচ- ব্যথা থাকা অবস্থায় ঘাড়কে বিশ্রাম দেয়া একান্ত জরুরি। ঘাড়ে প্রচ- ব্যথা অবস্থায় সার্ভাইক্যাল কলার ব্যবহার করে ঘাড়কে বিশ্রাম দিতে হবে। কলার রাতে ঘুমের সময় খুলে ফেলা উচিত।
সার্ভাইক্যাল ট্রাকসন
সাধারণত : কম ওজন দিয়ে সার্ভাইক্যাল ট্রাকসন শুরু করতে হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৬-১২ কেজি ওজনের ট্রাকসন দেয়া হয়। অবশ্য রোগীর ওজন, বয়স, এবং পুরুষ/মহিলা ভেদে কম বেশি হয়। সার্ভাইক্যাল ট্রাকসন দেয়ার সময় রোগীর কোন অসুবিধা হলে অবশ্যই ট্রাকসন দেয়া বন্ধ করতে হবে। এজন্য বলা হয়ে থাকে রোগী যতটুকু ওজনে আরামবোধ করেন ততটুকু ওজন দিয়ে শুরু করা উচিত এবং এ আরামবোধ ধরে রেখেই আস্তে আস্তে ওজন বাড়ানো উচিত।
থার্মো থেরাপীৎ
ডিপহিট জাতীয় চিকিৎসা এ রোগে প্রয়োগ করা হয়। যেমন-সর্ট ওয়েভ ডায়াথারমি, মাইক্রোওয়েভ ডায়াথারমিও আল্ট্রাসাউনড থেরাপি।
এক্সারসাইজ বা ব্যয়াম
থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ যেমন-আইসোমেট্রিক নেক্্ মাসল্্স স্ট্রেনদেনিং এক্সারসাইজ, সোল্ডার ইলিভেসন এক্সারসাইজ ইত্যাদি করতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এসব থেরাপি ও ব্যয়াম কোন্ কোন ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে তা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন। কারণ সকল ক্ষেত্রে থেরাপি ও ব্যায়াম দেয়া যাবে না।
এ রোগে ভাল থাকার জন্য কিছু পরামর্শ-
*চলাফেরা করার সময় সবদা কলার ব্যবহার করুন।
* ছোট নরম একটা বালিশ রোল ব্যবহার করবেন।
* যে কোন এক কাত হয়ে ঘুম থেকে উঠবেন।
*ঝুঁকে কোন কাজ করবেন না।
*চেয়ারে বসার সময় ঘাড় ও পিট সোজা রেখে বসবেন।
*সোজা হয়ে গোসল করবেন।
*টিউবওয়েল চাপবেন না।
*ঘাড় সোজা রেখে দাঁড়িয়ে রান্না করবেন। প্রয়োজন হলে চেয়ারে বসবেন।
*ঘাড় পিছনের দিকে বাঁকিয়ে কোন কাজ (যেমন উপরের দেয়ালের ময়লা পরিষ্কার করা, গাল সেভ করা ইত্যাদি) করবেন না।
*আধ শোয়া অবস্থা শুয়ে কোন কাজ (যেমন খবরের কাগজ পড়া, টিভি দেখা ইত্যাদি) করবেন না।
* গাড়িতে চড়ার সময় সামনের আসনে বসবেন, কখনো দাঁড়িয়ে থাকবেন না।
* কলার পরা অবস্থায় নিজে গাড়ি চালাবেন না।
*চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাবেন না।
*ব্যথা থাকা অবস্থায় মালিশ ও ব্যায়াম করবেন না।
সুস্থ থাকা অবস্থায় এসব উপদেশ মেনে চললে ঘাড়ে ব্যথা হতে দূরে থাকা সম্ভব। তাই আসুন আমরা সকলে এগুলো মেনে চলি এবং ঘাড়ে ব্যথা এড়িয়ে চলি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন