করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সারা দেশে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের দ্বিতীয় দিনেও তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিভিন্নস্থানে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, সর্বাত্মক লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে ফাঁকা ছিলো চট্টগ্রামের রাস্তাঘাট। গতকাল কলকারখানা বন্ধ থাকায় জনসমাগম ছিলো না। তবে হাটবাজার আর অলিগলিতে ভিড় জটলা লেগেই আছে। নগরীর প্রতিটি প্রবেশ পথে সেনাবাহিনী ও পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশি চলে। এসব এলাকায় জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া লোকজনের জটলা দেখা যায়। নগরীর আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, নিউমার্কেট, ইপিজেড এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও প্রধান প্রধান সড়ক ছিলো প্রায় ফাঁকা। রিকশা চলাচল ছিলো স্বাভাবিক। প্রতিটি মোড়ে ছিলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর টহল। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই নগরীর মসজিদে মসজিদে পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করা হয়। সিটি করপোরেশন এলাকায় সেনাবাহিনীর ৬টি টিম কাজ করছে। এছাড়াও বিজিবির ৬টি টিম নগরজুড়ে টহল দিচ্ছে। মাঠে আছে পুলিশও। জেলা প্রশাসনের ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন নগরীতে। উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্বে আছেন নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনাররা (ভূমি)। গতকালও স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গের দায়ে মামলা এবং জরিমানা আদায় করা হয়।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে দ্বিতীয় দিনেও কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল সকাল থেকে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও পাড়া মহল্লার গলিপথেও টহল দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যদের পাশাপাশি রাজশাহী সিটি এবং প্রতিটি উপজেলায় সেনাবাহিনীর দুইটি করে টিম টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি তিন প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করছে।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক জানিয়েছেন, সরকারি প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা অনুযায়ী সর্বাত্মক বিধিনিষেধ বা লকডাউন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ ও আনসার সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছে। সিটি করপোরেশন ছাড়া উপজেলাগুলোতেও সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র্যাব টহল দিচ্ছে।
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে জনগণকে সচেতন করতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শহরের প্রধান সড়ক ফাঁকা রয়েছে। কয়েকটি অটোরিকশা ও পণ্যবাহী সিএনজি, পিকআপ চলাচল করতে দেখা গেলেও তার সংখ্যা অনেক কম। তবে গ্রামের কিছু কিছু বাজারে কয়েকটি দোকানের স্যার্টার অর্ধেক খোলা রাখতে দেখা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পুলিশের চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। বিভিন্ন সড়কে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা টহলে রয়েছে। জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. খোরশেদ আলম খান জানান, লকডাউন কার্যকর করতে মাঠে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ও পুলিশ প্রশাসন কাজ করছেন।
বরিশাল ব্যুরো জানান, দক্ষিণাঞ্চলেও কঠোর লাকডাউন অব্যাহত রয়েছে। গতকাল দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি নগর মহানগরসহ উপজেলায় জনজীবন প্রায় স্থবির ছিল। কঠোর লকডাউন সফল করতে বরিশাল মহানগর পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই জুমার নামাজে মুসুল্লীগণ অংশ নেন। দক্ষিণাঞ্চলে ওষুধ ও মুদিদেকান এবং রেস্টুরেন্ট ছাড়া সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। গত দুদিন ব্যাংকও বন্ধ ছিল।
সিলেট ব্যুরো জানান, গতকাল সকালে সিলেট নগরের সড়ক অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে। রাস্তায় সকাল থেকে রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি চোখে পড়ছে একেবারেই কম। পুলিশ, বিজিবি, র্যাব’র পাশাপাশি সেনাবাহিনী ছিল সক্রিয়। এছাড়া নগরীকে ঘিরে চেকপোস্ট ছিল পুলিশের। গতকাল সিলেটের শাহজালাল (রহ.), শাহপরাণ (রহ.) মসজিদসহ নগরীর বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে বিশেষ মোনাজাতে করোনা মহামারি থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করেন ইমাম, খতিবসহ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
স্টাফ রির্পোটার, মাদারীপুর থেকে জানান, মাদারীপুরে লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের জন্য গতকাল সকাল থেকে জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুনের নেতৃত্বে ১৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাথে রয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্যরা।
পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীতে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। দ্বিতীয় দিনে মাঠে তদারকি অব্যাহত রেখেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ পিপিএম। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ওবিজিবি সদস্যরা লকডাউন কার্যকর করতে কাজ করে যাচ্ছেন।
মৌলভীবাজার জেলা সংবাদদাতা জানান, মৌলভীবাজারে লকডাউনের ২য় দিনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মীর নাহিদ আহসানের নেতৃত্বে শুক্রবার সকাল থেকে জেলার সকল উপজেলায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। সকাল থেকে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনসার জেলার সকল উপজেলায় লকডাউন কার্যকরে মাঠে কাজ করছেন।
নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীর ডোমারে সোনারায় বসুনিয়া হাটের ইজারাদারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও আটজনকে ৫ হাজার ১শ’ টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল শুক্রবার দুপুরে ডোমার বাজার রেলগেট মোড়ে ও বসুনিয়া হাটে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মনোয়ার হোসেন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, কঠোর লকডাউনে শহরের সকল বিপনি বিতান ও দোকান পাট ২য় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে। কাঁচাবাজারগুলোতেও লকডাউনের প্রভাব পড়েছে। জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায় লকডাউনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ১৫৪ জন ব্যাক্তিকে ৮৮হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ভোলা জেলা সংবাদদাতা জানান, ভোলায় জেলা, উপজেলা প্রশাসনের কঠোর তৎপরতার সাথে মাঠে রয়েছে নৌবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ এবং আনসার সদস্যরা। গতকাল সকাল থেকেই চলছে জেলা উপজেলায় এ কঠোর লকডাউন। লকডাউন নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুজিত হালদার ইনকিলাবকে বলেন, লকডাউন নিয়ে সরকারের যে নির্দেশনা রয়েছে তা যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন