বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারা দেশের মতো রাজধানীতেও চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। গতকাল ছিল লকডাউনের দ্বিতীয় দিন। দিনটি শুক্রবার এমনিতেই সপ্তাহিক ছুটির দিন, তার ওপর ভোর থেকেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। সব মিলিয়ে মাগরিবের নামাজ পর্যন্ত দেখা গেছে রাজধানীর সড়কগুলো মোটামুটি ফাঁকা। গণপরিবহন নেই, রিকশা খুবই কম এবং রাস্তায় মানুষজনের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। এখানে-ওখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়ছে শুধু। রাস্তায় যানবাহনের উপস্থিতিও নগণ্য।
গতকাল শুক্রবার যাত্রাবাড়ি, ধোলাইপাড়, পুরান ঢাকার ওয়ারী, চাঁনখারপুল, গুলিস্তান, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, টিএসসি, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, কাকরাইল, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, শান্তিনগর, মালিবাগ, ফার্ম গেইট, মতিঝিলের বক চত্বর, তেজগাঁও, মহাখালীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। গুলশান, বনানী, এয়ারপোর্ট রোডের চিত্র ছিল অভিন্ন। প্রচণ্ড ব্যস্ত ও নিয়মিত যানজটের এই সড়কগুলোতে যানবাহন তেমন চোখে পড়েনি।
আষাঢ় মাস চলছে। শুক্রবার ভোর থেকেই শুরু হয় বৃষ্টি। সপ্তাহিক ছুটির দিনে এমন বৃষ্টি হলে এমনিতেই রাজধানীর রাস্তাঘাট থাকে ফাঁকা। এর মধ্যেই বিধিনিষেধের প্রথমদিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে তৎপরতা দেখিয়েছে, তার কারণেই মানুষ খুব একটা বের হয়নি।
রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ততম মোড় যাত্রাবাড়ি দেখা গেল একেবারেই ফাঁকা। যে দু’একটি রিকশা আসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রিকশার যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। হাটখোলা রোড, আরকে মিশন রোড, গুলিস্তান, মতিঝিল, কাকরাইল, মালিবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় পরিবহন বলতে কেবল রিকশা। প্রাইভেট কারের সংখ্যা খুব কম। কেউ কেউ সাইকেল নিয়ে বের হয়েছেন। মোটরসাইকেলও খুব একটা চোখে পড়েনি। এর মধ্যে যাদের রাস্তায় দেখা গেছে, তারা বেশিরভাগই বের হয়েছেন সপ্তাহিক বাজার করার জন্য।
যাত্রাবাড়িতে কথা হয় সংবাদকর্মীর সঙ্গে। বাজার করতে আসা সংবাদকর্মী জানান, প্রতি সাপ্তাহে শুক্রবার বাজার করি। যাত্রবাড়িতে পাইকারি দরে মাছ পাওয়া যায়, সে জন্য এসেছি। বাজারে লোকজন কম তবে দাম আগের চেয়ে বেশি। শান্তিনগর এলাকায় কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী লতিফুল ইসলামের সঙ্গে। বললেন, আমরা কেউ বিধিনিষেধের মধ্যে বের হচ্ছি না। কিন্তু বাসায় বাজার নেই। কঠোর বিধিনিষেধের আগেই বাজার করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বাজারে অনেক ভিড় শুনে আর যাইনি। গতকাল বৃহস্পতিবার বের হলে কী হবে না হবে, সেই চিন্তা করে গতকালও বের হইনি। কিন্তু এখন বাজার না করলেই চলছিল না। তাই বের হয়েছি। এসে তো দেখলাম বাজারে অনেকেই আছেন।
মহাখালী-তেজগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এই এলাকায় যানবাহনের উপস্থিতি সামান্য বেশি। এসব যানবাহনের প্রায় সবই ব্যক্তিগত গাড়ি। মোটরসাইকেলের উপস্থিতিও রয়েছে কিছু। হেঁটে বা রিকশা নিয়ে যারা যাচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগেরই গন্তব্য হাসপাতাল।
নাবিস্কো বাসস্ট্যান্ড এলাকার পাশেই নাখালপাড়া সকালের বাজারে গিয়ে দেখা গেল, বাজার অন্যান্য শুক্রবারের মতো জমজমাট না হলেও ক্রেতাদের উপস্থিতি কম। তাতে সামাজিক দূরত্ব অনুসরণ হচ্ছে না। ক্রেতা-বিক্রেতা দুয়েকজনের মুখে নেই মাস্কও। পূর্ব নাখালপাড়া ঢুকে রাস্তার ওপরেই মাছ ও মুরগি বিক্রেতাদেরও দেখা গেল। তাদের কাছ থেকেও দরদাম করে মাছ-মুরগি কিনছেন ক্রেতারা। গুলিস্তান ও মতিঝিলে দেখা গেল একেবারেই ফাকা। দু’একজন মানুষ পায়ে হেঁটে চলাফেরা করছেন।
লকডাউন চলছে। ছুটির দিন, বৃষ্টি আর সড়কে মানুষজনের উপস্থিতি কম বলেই হয়তো সড়কে পুলিশের চেকপোস্টগুলোতে খুব একটা কড়াকড়ি চোখে পড়েনি। তবে পুলিশ বলছে, তারা সতর্ক অবস্থানেই রয়েছে। বিধিনিষেধ ভঙ্গ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। গতকালও কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তেজগাঁও থানার উপপরিদর্শক শরিফুল ইসলাম যেমন বললেন, বৃষ্টির জন্য এমনিতেই রাস্তায় লোকজন কম। গতকাল পুলিশের আটক-গ্রেফতারের জন্যও বোধহয় বিনা কারণে বের হওয়ার প্রবণতা কমেছে। তারপরও আমরা সতর্ক আছি। যারা আসছেন-যাচ্ছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ। কাঁচাবাজার ও মুদি দোনান সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়ে মার্কেট ও শপিংমল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধের নির্দেশনায়।
এর আগে, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় ১ জুলাই থেকে সরকার ৭ দিনের জন্য সারা দেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। সেই বিধিনিষেধের প্রতিপালন করতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দিনভর কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন