মানুষের হাত দুটি। কিন্তু সুযোগ সন্ধানী মানুষের হাতের সংখ্যা ‘অজুহাত’। এই অজুহাত করোনাভাইরাসের মতোই অদৃশ্য। সঠিকভাবে কোনো কিছু করতে না পারা বা বলতে না পারলেই অজুহাত দেখিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করেন। ৭ দিনের কঠোর লকডাউনে রাজধানী ঢাকায় দেখা গেছে অজুহাতের ছড়াছড়ি। অকারণে রাস্তায় বের হচ্ছেন মানুষ। চেকপোস্টে থামালেই ‘জরুরি’ কাজের অজুহাত দেখিয়ে পার পাচ্ছেন। কেউ কেউ আটকও হচ্ছেন।
করোনা নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে কঠোর লকডাউনের গতকাল ছিল দ্বিতীয় দিন। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি আর লকডাউনে সড়ক অনেকটাই ছিল ফাঁকা। জরুরি সেবা ও পণ্যবাহী যানবানবাহন ছাড়া তেমন যানবাহনের চলাচল করেনি। তবে রাজধানীর প্রধান সড়কে প্যাডেল রিকশার চলাচল দেখা গেছে।
অফিস আদালত বন্ধ তবুও জরুরি কাজের অজুহাত দিয়ে কেউ কেউ অহেতুক ঘর থেকে বের হচ্ছেন। তবে সড়কে থাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্টে গিয়ে আটকে যাচ্ছেন তারা। উপযুক্ত কারণ না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
রাজধানীর বিভিন্ন চেকপোস্টে নিয়োজিত পুলিশ-র্যাব-আনসার ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রথমেই চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বুঝিয়ে বলছেন। এরপর ঘর থেকে বের হওয়ার কারণ জানতে চাইছেন। জরুরি কারণটি যুক্তিসঙ্গত হলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আর যারা অহেতুক কারণ উপস্থাপন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকা চেকপোস্ট ঘুরে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়।
যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তান, পল্টন, বিজয়নগর, মালিবাগ, কমলাপুর, আব্দুল্লাহপুর, হাউজবিল্ডিং, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, ক্যান্টনমেন্ট, বনানী, গুলশান, বাড্ডা, মহাখালী, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট থাকতে দেখা গেছে। পল্টনের আইন-শৃংখলা বাহিনীর এক সদস্য বলেন, যাকেই ধরি অজুহাতের ছড়াছড়ি। অহেতুক জরুরি অজুহাত দেখিয়ে চলে যাচ্ছেন। অদৃশ্য করোনার মতো অজুহাত দেখা যায় না। তাই অযথা ঘর থেকে বের হওয়াদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টি। মূলত এই কারণে সড়কে খুব বেশি মানুষ বের হতে দেখা যায়নি। তবে আমরা চেকপোস্টে বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জরুরি কারণ না হলে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
ঘর থেকে বের হয়ে যারাই চেকপোস্টের সামনে আসেন, তাদের সবাই আমাদের কাছে জরুরি প্রয়োজনগুলো উল্লেখ করছেন। জরুরি নানা কাজের অজুহাত দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে চাইছেন। এদিকে অনেক প্রাইভেটকার ফাঁকা সড়কে চলাচল করছে। সেগুলো আটক করা হচ্ছে। কারণ লকডাউনের নির্দেশনায় জরুরি সেবা ও পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া কোনো যানবাহন সড়কে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবুও অনেকে বিনা কারণে যানবাহন বের করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর প্রবেশ মুখ আব্দুল্লাহপুরে রয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) চেকপোস্ট। সেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে রেইনকোর্ড পরে আবার কেউ ছাতা মাথায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। সড়কে যানবাহনের দিকে নজদারি করছিলেন।
আব্দুল্লাহপুর চেকপোস্টের দায়িত্বরত এসআই মো. হাসীব বলেন, বৃষ্টি হোক আর ঝড়, আমরা দায়িত্বে নিয়োজিত আছি। তবে শুক্রবার হওয়ার কারণে এই সড়কে তেমন যানবাহন চলাচল করছে না। তবে রিকশায় আসা যাত্রীদের জরুরি কারণ জেনেই তাদের যেতে দেওয়া হচ্ছে।
রাজধানীর হাউজবিল্ডিং, জসিম উদ্দিন রোড, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত এলাকায় সড়ক একেবারেই ফাঁকা, অনেক সময় পরপর একটি দু’টি মোটরসাইকেল বা প্রাইভেটকার চলাচল করতে দেখা গেছে। এছাড়া শুক্রবার বিধায় জরুরি সেবা ও পণ্যবাহী যানবাহনের চলাচলও ছিল সীমিত। তবে সড়কের পাশে থাকা বাস স্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রীর অপেক্ষায় রিকশা চালকদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
ঘর থেকে বের হওয়ার উপযুক্ত কারণ দেখাতে না পাড়ায় যাত্রাবাড়ী চেকপোস্টে দুপুর পর্যন্ত একটি প্রাইভেটকার আটকে মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল দেখলেই থামিয়ে তল্লাশি ও বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে অনেকেই যেতে পারছেন। যাত্রাবাড়ীতে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ঘর থেকে যারাই বের হচ্ছেন, পুলিশ চেকপোস্টে এসে তাদের অহেতুক কারণগুলো জরুরি হিসেবে দেখাচ্ছেন। নানান অজুহাত দেখিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে, রাজধানীর সড়কগুলো একেবারে ফাঁকা থাকায় কিছু কিছু প্রাইভেটকার বেপরোয়া গতিতে চলাচল করছে। কারণ সড়কে চেকপোস্টগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থাকলেও সিগন্যাল না থাকায় তেমন ট্রাফিক পুলিশ নিয়োজিত থাকতে দেখা যায়নি। সবাই বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিয়োজিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন