গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে আছে প্রায় ১ লাখ বাসিন্দা। এতে সাধারণ মানুষের যেন ভোগান্তির অন্ত নেই। গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের বলাইখা, বিজয় নগর, দক্ষিণপাড়া, নাগেরবাগ, ৫নং ক্যানেল, উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, তারাব পৌরসভার কর্ণগোপ, মাসাবো, তারাব, রূপসী, খাদুন, মৈকুলী, কাঞ্চন পৌরসভার কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল দখল, যত্রতত্র বালু ভরাট, অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ ও জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতা পানিবদ্ধতার মূল কারণ হিসেবে জানা যায়।
গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, এ ইউনিয়নের ৪ নম্বর, ৫ নম্বর ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। বর্ষা মৌসুম আসলেই এ তিনটি ওয়ার্ডে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গত ৫ বছরে এ ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দারা এ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এ ইউনিয়নের গড়ে ওঠা পদ্মা টেক্সটাইলসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি পানি নিষ্কাশনের খালটি দখল করে রেখেছে। এছাড়া পানি নিষ্কাশনের জন্য মধ্যপাড়া এলাকার স্লুইচগেট, কয়েকটি কোম্পানি কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে জমি ক্রয় করে বন্ধ করে রেখেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। এসকল কারণে সাধারণ মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে বছরের পর বছর। সর্বশেষ পানিবদ্ধতায় পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়। পানিবদ্ধতার জন্য ওই নারীর দাফনেও ভোগান্তি পোহাতে হয় পরিবারের লোকজনকে। এছাড়া গত শুক্রবার ফাহিম নামে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়। ফাহিমের বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় সে ঘর থেকে ফ্রিজ বের করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়।
পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ মানুষ কেউ হাঁটু পানিতে আবার কেউ গলা পানিতে নেমে চলাচল করছে। মানুষের ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। পানি প্রবেশের কারণে রান্না, চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ভুক্তভোগী জাকির হোসেন বলেন, পদ্মা টেক্সটাইলসহ কয়েকটি কোম্পানি পানি নিষ্কাশনের খাল দখল করে রাখায় রাস্তাঘাট ও ঘরের ভেতরে পানি প্রবেশ করেছে। আমার বেশ কয়েকটি ঘর ভাড়া দেয়া ছিল। সবকটি ঘরে পানি প্রবেশ করায় ভাড়াটিয়ারা চলে গেছে। একদিকে করোনা অন্যদিকে পানিবদ্ধতায় আমাদের মতো সাধারণ মানুষের না খেয়ে মরার উপক্রম হয়েছে।
কথা হয় ভ্যানচালক মিঠুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাগো ঘরে পানি গেছে অহন আমরা যামু কই। করোনার লাইগা ভ্যান লইয়া বাইরে যাইতে পারি না পুলিশ দইরা মারে। আর ঘরে মইধ্যে পানি যাওনে ঘরে থাকন যায় না’।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহ্ নূসরাত জাহান, উপজেলার কয়েকটি এলাকায় পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলে শুনেছি। পানিবদ্ধতা নিরসনের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আশা করি শিগগিরই পানিবদ্ধতার নিরসন হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন