বেক্সিমকো অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকিতে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর ভারতকে ৫-৪ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশের যুবারা। এর আগে ১৯৯৬ ও ২০০৪ সালে অনূর্ধ্ব-২১ জুনিয়র এশিয়া কাপে ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। গত শনিবার মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে দারুণ রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে প্রথম পেনাল্টি কর্ণার পায় বাংলাদেশ। আরশাদ হোসেনের হিট আটকে দেন প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়। ম্যাচের ১৬ মিনিটে দ্বিতীয় পেনাল্টি কর্ণার কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যায় যুবারা। ফজলে রাব্বীর পুশ নাইম উদ্দীন স্টপ করার পর আশরাফুলের হিট ঠিকানা খুঁজে পায়। ২০তম মিনিটে পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে ধারমিন্দর সিং-এর করা গোলে সমতায় ফেরে ভারত। আরশাদ সার্কেলের মধ্যে ধারমন্দিরকে ফেলে দিলে পেনাল্টি স্ট্রোকের সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। পাঁচ মিনিট পর কনজেংরাম সিংয়ের গোলে এগিয়ে যায় ভারত। ২৭তম মিনিটে প্রথম আম্পায়ার পেনাল্টি স্ট্রোকের সিদ্ধান্ত দিলেও পরে দুই আম্পায়ারের আলোচনায় পেনাল্টি কর্ণার পায় বাংলাদেশ। এতে রাজুর পুশ নাইম থামানোর পর আশরাফুলের গতিময় হিট জালে জড়ায়। দারুণ উত্তেজনাকর ম্যাচে ৫০তম মিনিটে রাব্বীর গোলে ফের এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ৫-৪ স্কোর লাইন ধরে রেখে জয়ের উৎসবে মেতে ওঠে রাব্বী-আশরাফুলরা। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের এ জয় গৌরবের। অলিম্পিকে একবার চ্যাম্পিয়ান হওয়া ভারতকে হারানো সহজ নয়। বাংলাদেশের তরুণরা অসামান্য নৈপুণ্য দেখিয়ে ভারতকে হারিয়েছে। তাদের এ বিজয় অভিনন্দনযোগ্য।
বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। ক্রিকেটে বাংলাদেশের তরুণরা একের পর এক তাক লাগানো সাফল্য এনে দিয়েছে। ক্রিকেটবিশ্বে বাংলাদেশ এখন সমীহ জাগানিয়া দলে পরিণত হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে চলেছে। এবার অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকিতে পরাশক্তি ভারতকে হারিয়ে হকিতেও বাংলাদেশের যুবারা শক্তি সামর্থ্যরে জানান দিল। এজয় শুধু তাদের নয়, এজয় গোটা জাতির। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ভারতের বিপক্ষে জয় পাবে, খেলার আগে কেউ না ভাবলেও কোচ কাওসার আলীর আত্মবিশ্বাস বাড়ে প্রতিপক্ষের অনুশীলন দেখে। তিনি বলেন, ছেলেরা পরিকল্পনা মতো খেলতে পারলে জেতা সম্ভব। বিজয়ের পর তিনি বাহবাও দিয়েছেন। কার্যত দেশবাসীও তাদের বাহবা দিচ্ছে এই বীরোচিত বিজয়ের জন্য। এই বিজয়ে পরিপূর্ণ আত্মতৃপ্ত হবার সুযোগ নেই কারণ বাংলাদেশকে যেতে হবে বহুদূর। এজন্য প্রয়োজন রয়েছে সকলের উদ্যোগ ও আন্তরিকতার। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলার যোগ্যতা অর্জনের জন্য তাদের উপযোগী করে তুলতে হলে খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। একথা সকলেই মনে রাখা দরকার, আধুনিক বিশ্বে খেলার মাধ্যমে ইতিবাচক বাংলাদেশকে তুলে ধরা সম্ভব হলে তার সুফল সর্বত্র পাওয়া সম্ভব।
এই টুর্নামেন্ট পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য আমরা বেক্সিমকো গ্রুপকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। বলার অপেক্ষা রাখে না, বেক্সিমকো ক্রীড়া ক্ষেত্রে বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। আমরা শুধু বেক্সিমকোকে নয়, এই সঙ্গে দেশের সকল সামর্থ্যবান প্রতিষ্ঠানকেও ক্রীড়া ক্ষেত্রের অগ্রগতিতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। এতে দেশের ক্রীড়া-অঙ্গন যেমনি এগিয়ে যাবে তেমনি বাড়বে দেশের মান-মর্যাদা। বিশ্ব দেখতে পাবে বাংলাদেশীদের ইতিবাচক সাফল্য এবং যোগ্যতা। হকিতে বাংলাদেশের যুবকরা তাদের সামর্থ্যরে পরিচয় দিয়েছে। এখন প্রয়োজন তাদেরকে যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে এগিয়ে নেয়া। এ কাজটি হকি ফেডারেশনকে করতে হবে। তাদেরকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে এবং সাফল্য পেতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ক্রীড়া ক্ষেত্রে যে নতুন একটি সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তা কাজে লাগাতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন