শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

নির্বাচন দু’বছর দূরে কেসিসি’র মেয়র পদে আ’লীগের মনোনয়ন ইচ্ছুকরা প্রচারে সক্রিয়

প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের এখনও বাকি দুই বছর। তাই নির্বাচন নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে এ নিয়ে এখনও তেমন আগ্রহ নেই। তবে শাসকদল আওয়ামী লীগের মধ্যে এ নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যেই নড়াচড়া শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মেয়র পদে প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা, মতবিনিময়, গ্রæপিং-লবিং এবং খুলনাবাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা আরম্ভ হয়েছে বলে দলটির বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।
২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত কেসিসির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহানগর সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেককে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন খুলনা মহানগর বিএনপিসাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি। ২০০৮ সালে তালুকদার খালেক মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারে অবশ্য প্রেক্ষাপট ভিন্ন। নির্বাচনের এমন একটি আবহ তৈরি হয়েছে যে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার অর্থ হচ্ছে নির্বাচনে বিজয় মোটামুটি নিশ্চিত। দলের টিকিট পাওয়াটাই হচ্ছে মূল বিষয়। এ কাজটি করে খুলনার মেয়র হওয়ার দৌড়ে অংশ নিতে মনে অনেকেরই আকাক্সক্ষা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু সেজন্যে দলে নিজের অবস্থান, কর্মীদের সমর্থন, সামাজিক অবস্থান, আর্থিক সামর্থ্য ইত্যাদিও বিবেচনায় নিতে হয়। এসব বিবেচনায় খুব কম লোকই প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার সাহস করেন। যাদের এমন সাহস ও সামর্থ্য আছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাই অনেক আগে থেকেই মাঠ প্রস্তুতের কাজে নেমে পড়েছেন।
খুলনা আওয়ামী লীগে মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় আগ্রহী তিনজনের নাম এ পর্যন্ত দলের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের নাম এ পর্যন্ত সবার আগে রয়েছে। তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন, দলের জন্যে তার অবদান এবং মেয়র হিসেবে তার ৫ বছর দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা তাকে প্রার্থী হবার দৌড়ে এগিয়ে রেখেছে। মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রে কথা বলে জানা যায়, তালুকদার খালেককে কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দিলে দলীয় ফোরামের কোনো পর্যায়ে সে ব্যাপারে দ্বিমত করার মতো অবস্থা নেই। তবে শেষ মেয়র নির্বাচনের সময় তালুকদার খালেকের সর্বত্র রূঢ় আচরণ করা এবং ৫ বছর মেয়র থাকাকালীন লাখপতি থেকে কয়েক কোটি টাকার মালিক হওয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এসব কারণে কেন্দ্র থেকে পুনরায় তাকে মনোনয়ন নাও দেয়া হতে পারে বলে দলের একটি সূত্র জানায়। এ বিষয়ে কথা বলার জন্যে দু’দিন চেষ্টা করেও তালুকদার খালেকের ফোনে ঢোকা সম্ভব হয়নি।
নগরীর সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম মেয়র পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। তিনি বেশ আগে থেকেই এ লক্ষ্য সামনে নিয়ে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করে চলেছেন। তিনি নৌ-পরিবহন মালিক গ্রæপের মহাসচিব এবং আরও দু’একটি ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া সংগঠনের নেতা হিসেবে বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে জনমনে এবং মিডিয়ায় তার উপস্থিতি বেশ অনেকদিন ধরেই অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ক্লাব ও সামাজিক সংগঠনে আর্থিক সাহায্য প্রদান করে সমর্থন বাড়ানোর কাজও করে চলেছেন। তবে তার জন্যে একটি অসুবিধাও রয়ে গেছে। কয়েক মাস আগে একটি চেক জালিয়াতির মামলায় চট্রগ্রামের একটি আদালত তাকে ৬ মাসের কারাদÐ প্রদান করেছে। এ অবস্থায় তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ বিষয়ে কথা হলে সাইফুল ইসলাম বলেন, দল নোমিনেশন দিলে তিনি মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে প্রস্তুত। আইনগত কোনো সমস্যা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার দৃষ্টিতে তো সমস্যা নেই।
মেয়র পদে নির্বাচনে আগ্রহী রয়েছেন মহানগর যুবলীগের সভাপতি অ্যাড. সরদার আনিসুর রহমান পপলু। তিনিও ইতোমধ্যে সীমিত মাত্রায় জনসংযোগমূলক কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। তিনি সাংগঠনিক কার্যক্রমে বেশ দক্ষতা দেখিয়েছেন। অনেক কঠিন সময়ে তিনি সাহসিকতার সাথে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় থাকায় দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে তার একটি ভালো ইমেজ আছে বলে তার সমর্থকরা দাবি করেন। এছাড়া তিনি এবার খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে বিপুলভাবে জয়ী হন। এর আগে তিনি একবার আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকও হয়েছিলেন। সেখানে তিনি সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করায় সব দল ও মতের আইনজীবীদের কাছে তার ভালো গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। জনাব পপলুর সাথে কথা হলে তিনি জানান, সভাপতি তালুকদার খালেক প্রার্থী হতে চাইলে তিনি সব দিক থেকে যোগ্য।
এদিকে মেয়র পদের প্রার্থিতা নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগে গ্রæপিং চাঙ্গা হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানায়। এমনিতে নগর কমিটিতে সভাপতি তালুকদার খালেক ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানের গ্রæপের দ্ব›দ্ব অনেকদিন ধরেই রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক মিজান ২০০৩ সালের সংসদ নির্বাচনে খুলনা-২ আসনে তার পরাজয়ে তালুকদার খালেকের ভূমিকা ছিল বলে ধারণা করেন। একইভাবে ২০১৩ সালে মেয়র নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক তাকে পরাজিত করার যাবতীয় চেষ্টা করেছিলেন বলে তালুকদার খালেক দলীয় ফোরামেও অভিযোগ করেন। এ দ্ব›েদ্বর রেশ মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে পারে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন