বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়নি বলে মনে করে ব্রিটেন। বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক বৃহস্পতিবারের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। ২০২০ সালের ঘটনাগুলো পর্যালোচনায় ওই রিপোর্ট তৈরি এবং মন্তব্য এসেছে। বন্ধুরাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগী ব্রিটেনের ওই প্রতিবেদন বিষয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। লন্ডনের পক্ষে অবশ্য বলা হয়েছে, চলতি ২০২১ সালে কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা ও উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের মানববাধিকার পরিস্থিতির পরিবর্তন তথা সুশাসন ও গণতন্ত্র ইস্যুতে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাবে ব্রিটেন।
বৃটিশ সরকারের প্রতিবেদন মতে, করোনা মোকাবিলা নিয়ে সরকারের সমালোচনা ঠেকাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগসহ গণমাধ্যমের ওপর আরো বিধিনিষেধ এবং নারী ও কন্যাশিশুদের ওপর অব্যাহত সহিংসতা যুক্তরাজ্যের উদ্বেগের বড় জায়গা। ২০২০ সালেও বাংলাদেশে গণমাধ্যম চাপের মধ্যে ছিলো বলে দাবি করা হয়। একই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের গ্রেফতার-হয়রানির বিভিন্ন ঘটনাও প্রতিবেদনে জায়গা পেয়েছে। ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি: দ্য ২০২০ ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস রিপোর্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারকে উদ্বৃত্ত করে বলা হয়, তাদের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৫১তম স্থানে নেমে এসেছে, যা এ পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বনিম্ন অবস্থান।
‘আর্টিকেল ১৯’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থাকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৫১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। ৪১টি মামলায় ৭৫ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ৩২ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিবেদন মতে, গত বছরের মার্চ মাসে সরকার খালেদা জিয়ার কারাদন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়া ও বিদেশে না যাওয়ার শর্তে তাকে কারামুক্তি দেয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে তার কারাদন্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০২০ সালজুড়ে তিনি ‘হাউস অ্যারেস্ট’ ছিলেন।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতা সীমিত দাবি করে বলা হয়, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীদের ওপর হামলা ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর ব্যাপক অভিযোগ ছিল। গত নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে ভোটারদের হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার আরও ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রসফায়ার, নির্যাতনসহ ২২৫টি বিচারবহির্ভূত হত্যার জন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দায়ী। গত বছরের আগস্ট মাসে পুলিশের হাতে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়টি জনগণের কাছে নজিরবিহীন গুরুত্ব পায়। এরপর বিচারবহির্ভূত হত্যার সংখ্যা কমেছে। এ ছাড়া অন্তত ৩১টি গুমের তথ্য রয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন