শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ছুটির দিনে লোক ও যান চলাচল কম

লকডাউনের নবম দিনে বেড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

লকডাউনের নবম দিন গতকাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাটে গাড়ি চলাচল ছিল অনেক কম। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সড়কে গাড়ি তেমন দেখা যায়নি। তবে অনেক সড়ক ছিল রিকশার দখলে। বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজন এবং প্রয়োজন ছাড়াও যারা বের হয়েছেন তারা রিকশা নিয়েই গন্তব্যে ছুটে গেছেন। আইন শৃংখলাবাহিনীর টহল ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে কঠোর। রাজধানীর, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, পল্টন, মতিঝিল এসব এলাকায় রিকশায় এবং হেঁটে অনেক লোকজন চলাচল করেতে দেখা গেছে। গতকালও রাজধানীসহ সারাদেশে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাবসহ আইন শৃংখলাবাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল। তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে টহল, চেকপোস্ট ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। দোকানপাট, বিপনীবিতান, শপিংমল সবই ছিল বন্ধ। তবে পাড়া মহল্লায় দোকান খোলা ছিল। বিভিন্ন কাঁচা বাজারে ছিল উপচে পড়া ভিড়। নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই। উম্মুক্ত স্থানে কাঁচাবাজার সরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ বাজার আগের মতো চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে উদাসীন। হাটবাজারে নেই প্রশাসনের কোন তদারকি।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ৫৮৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ডিএমপি এলাকার ৫১টি থানায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার এডিসি ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১২৯ জনকে এক লাখ ৫৬ হাজার ৭৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ ৪১৪ গাড়িকে ৮ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আমাদের সংবাদদাতারা দেখেন, যাত্রাবাড়ী এলাকায় বিপুল সংখ্যক প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, রিকশা, ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান চলাচল করেছে। মাঝে মাঝে চোখে পড়ছে সিএনজি চালিত অটোরিকশাও। অনেককে ভ্যানে করে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। মানুষবোঝাই পিকআপ ভ্যানও এই মহাসড়ক ধরে চলতে দেখা গেছে। শনির আখড়ায় চেকপোস্টে কিছুটা কড়াকড়ি ছিল, তবে গাড়ির সংখ্যা ছিল বেশি। বিধিনিষেধের শুরুর দিকে মহাসড়কের পাশের দোকানপাট বন্ধ থাকলেও শুক্রবার সকাল থেকেই সেগুলো খোলা দেখা গেছে। এদিকে, ট্রাফিক পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অলিগলি দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে মোটরসাইকেল চালকরা। তবে প্রধান সড়কে উঠলে ট্রাফিক পুলিশ মামলা দিচ্ছে। মামলার টাকা উঠাতে ফের সড়কে নামলে জরিমানার দিতে হচ্ছে, এমন অভিযোগ চালকদের। গতকাল রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে কথা হয় বেশ কয়েকজন চালকের সঙ্গে। তারা জানান, পেছনে যাত্রী দেখলেই মামলা দিচ্ছে পুলিশ। এ ছাড়া সারাদেশের সংবাদদাতাদের পাঠানো রিপোর্ট তুলে ধরা হলো।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, সর্বাত্মক লকডাউনেও চট্টগ্রামে ঠেকানো যাচ্ছে না জনসমাগম। রাস্তায়,পাড়া-মহল্লা আর হাটবাজারে ভিড় জটলা লেগেই আছে। ভিড় জটলায় অনেকের মুখে নেই মাস্ক। নেই সামাজিক দূরত্বের বালাই। গতকাল ছুটির দিনে সড়কে যানবাহন চলাচল কিছুটা কম থাকলেও অলিগলিতে মানুষের ভিড় জটলা লেগেই ছিলো। হাটবাজারে ছিলো উপচেপড়া ভিড়। নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই। উম্মুক্ত স্থানে কাঁচাবাজার সরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ বাজার আগের মতো চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে উদাসীন। হাটবাজারে নেই প্রশাসনের কোন তদারকি। নগরীর চাকবাজার, রেয়াজুুদ্দিন বাজার, কাজির দেউড়ি, কর্ণফুলী কাঁচাবাজার, বহদ্দারহাট, স্টিল মিলবাজারসহ বড় বড় হাটবাজার এলাকায় যানজট এবং জনজটের সৃষ্টি হয়। নগরীর খোলা জায়গায় মানুষের ভিড় জমে। পতেঙ্গা সৈকত, সিটি আউটার রিং রোড, বায়েজিদ সংযোগ সড়ক, মেরিনার্স রোড, কর্ণফুলী সেতু এলাকায় ভিড় জটলা দেখা যায়। শুরুতে বেশ কয়েকদিন সড়কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেলেও এখন সড়কে অবাধে চলছে ব্যক্তিগত যানবাহন। কোন কোন এলাকায় অটোরিকশা, টেম্পু, মিনিবাসও চলছে। মহানগরীতে কিছুটা কড়াকড়ি থাকলেও গ্রামে লকডাউনের তেমন কোন প্রভাব নেই।
সিলেট ব্যুরো জানায়, লকডাউনের কড়াকড়ি থাকলেও রাস্তাঘাটে যানবাহন ও জনগনের চলাচল বেড়েছে। আইনশৃংখলা বাহনীর তৎপরতা থাকলেও বিধিব্যবস্থা দুর্বল যেন হয়ে পড়ছে। এদিকে সিলেটে করোনা সংক্রমণ ্ও মৃত্যুতে অতীতে সকল রেকর্ড ছাপিয়ে নতুন পরিসংখ্যানে এগুচ্ছে। গতকাল জুম্মার নামাজ শেষে মোনাজাতে করোনা থেকে রক্ষায় আকুতি জানিয়ে মহান আল্লাহর দরবারের কান্না করেন মুসল্লীরা। নগরীর প্রতিটি মসজিদেই মোনাজাতের চিত্র ছিল একই। এদিকে, করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনার লক্ষ্যে সিলেটে বিভাগীয় টাস্কফোর্স গঠন করে দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
মাগুরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, জেলার ৪ উপজেলায় কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। সাথে রয়েছে জেলা যুবলীগের হটলাইনটীম ও নবগঙ্গা রোভার স্কাউট দল। এছাড়াও মাঠে রয়েছে মাগুরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণের নেতৃত্বে ১৪ টি ভ্রাম্যমাণ আদালত। লকডাউনে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে দিন মজুরসহ সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষেরা। তাই অনেকে বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ছুটছেন টিসিবির পণ্য কিনতে। এতে স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষিত।
নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা জানান, কঠোর লকডাউনকে সফল করার লক্ষ্যে গ্রামে গ্রামে চলছে শিক্ষকদের টিম ওয়ার্ক। লকডাউনকে ঘিরে সরকারের বিধিনিষেধকে সফল করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি এবারই প্রথম মাঠ পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন শিক্ষক সমাজ। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৭২টি ওয়ার্ডের প্রতিটি গ্রামের মোড়ের চা-স্টলে, ছোট ছোট সাপ্তাহিক হাট ও বাজারে আসা মানুষদের লকডাউন সফল করার লক্ষ্যে শিক্ষকরা কাজ করছেন।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া সংবাদদাতা জানান, লকডাউনের নবম দিনে ১১ জনকে অর্থদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল পৌর শহরের চৌরাস্তা এবং নুতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জগৎ বন্ধু মন্ডল। এ সময় সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মুল আইন ও সড়ক পরিবহন আইনে ১১ জনকে মোট চার হাজার জরিমানা করা হয়।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী সংবাদদাতা জানান, কঠোর লকডাউন ও বন্যার কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী, ছোট ব্যবসায়ী ও নিন্মআয়ের হাজার হাজার মানুষ। ভ্যান চালক ছামেদ আলী এই জানান-কঠোর লকডাউন চলছে তার পর আবার বন্যা এ জন্য ভাড়াই পাচ্ছি না। সারাদিন বেকার বসে থেকে সন্ধায় বাড়ি ফিরছি খালি হাতে। কোন কামাই- রোজগার নেই। না খেয়েই কাটছে দিন।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কঠোর লকডাউনেও বাল্যবিয়ের আয়োজন করায় তা বন্ধ করে দিলেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জন কুমার সরকার। উপজেলার ছনখোলা গ্রামে বাল্যবিবাহ বন্ধের ঘটনাটি ঘটে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা জানান, লকডাউন কঠোরভাবে হচ্ছে। আইনশৃ্খংলাবাহিনী তৎপর রয়েছে। দোকানপাট, মার্কেট সব বন্ধ। লকডাউনে দিশেহারা খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ফোন পেলেই খাবারের ব্যাগ হাতে নিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন