শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সতর্কতা নয়তো মৃত্যু

লকডাউনে রাস্তায় বাড়ছে জনসমাগম রাজধানীর অলিগলির বেশিরভাগ দোকান খোলা, ক্রেতা-বিক্রেতার জটলা ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

‘নিজে নিরাপদ থাকুন, পরিবার ও প্রতিবেশীকে নিরাপদে থাকার সুযোগ দিন’ বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে এটাই হওয়া উচিত প্রত্যেক সুনাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে, লকডাউনের বিধিনিষেধ ভেঙে মানুষের বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা যেন ততই বাড়ছে। রাজধানীর অলিগলিতে দোকান খুলে ‘কৌশলে’ বেচাকেনা চালাচ্ছেন দোকানিরা। রাস্তায় প্রচুর মানুষ। গ্রামগঞ্জের অবস্থা আরো ভয়াবহ। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সতর্ক থাকুন, নয়তো নির্ঘাত মৃত্যু।

গতকাল অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না এলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি করুণ হয়ে যাবে। যেভাবে সংক্রমিত হচ্ছে হাসপাতালে রোগীর চাপ যদি বাড়তেই থাকে, আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে হাসপাতালের শয্যা আর খালি থাকবে না। সারা দেশে গত মাসেও অসংখ্য বেড খালি ছিল, আইসিইউ বেড খালি ছিল। সেই খালি বেডের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। বর্তমানে সারা দেশে মাত্র ৩০০ এর মতো কোভিড-১৯ আইসিইউ বেড খালি আছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যদি আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ হয়ে যাবে। সংক্রমণের হার এভাবে চলতে থাকলে একদিনে ১৫ হাজার শনাক্ত হতে বেশি সময় লাগবে না। আর তাতে করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে সবাইকে বিপদে পড়তে হবে।

দৈনিক ইনকিলাবে গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে চিত্র তুলে ধরে ঘরে ঘরে সর্দিজ্বর নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই সব প্রতিবেদনে গ্রাম, ইউনিয়ন, পৌরসভায় স্থানীয় গণ্যমান্যব্যক্তি, ছাত্র-শিক্ষক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে করোনাভাইরাস মোকাবিলার পরামর্শ দেয়া হয়। গবেষণাধর্মী এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা প্রতিরোধ ও মোকারিলায় মাঠ পর্যায়ে জনসচেতনা সৃষ্টিসহ প্রয়োজনয়ী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্ব কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ কমিটির জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনা সৃষ্টি, চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান, টিকা প্রদানে উদ্বুদ্ধকরণ ও সহায়তা প্রদানের জন্য কাজ করবে। তথ্য অধিদফতরের এক তথ্য বিবরণী জানা যায়, প্রস্তাবিত কমিটিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্থাস্থ্য, যুব, কৃষি, আনসার ভিডিপি’র মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, মসজিদের ইমাম, এনজিও প্রতিনিধি, হাটবাজার সমিতির নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্টরা অন্তর্ভুক্ত হবেন বলা হয়েছে।

গতকালও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শহরের তুলনায় সংক্রমণ এখন গ্রামাঞ্চলেই বেশি ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামের মানুষ করোনাভাইরাসকে স্বাভাবিক ভাবছে জ্বর-সর্দি। রোগীর পরিস্থিতি জটিল হলেই হাসপাতালে আসছেন। কিন্তু ততক্ষণে আর চিকিৎসকদের কিছুই করার থাকছে না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশা ঈদুল আজহার আগেই এসব কমিটি গঠণের মাধ্যমে করোনা মোকাবিলা করা হবে। না হলে কোরবানির পশুর হাট বাজারে যেভাবে মানুষের আনাগোনা হবে তাতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ দিতে পারে।

লকডাউনের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির পশুর হাট বসেছে। সে সব হাটে উঠেছে প্রচুর গুরু-ছাগাল। ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে নেই কোনো সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার তাগিদ। শুধু তাই নয় ঈদ উপলক্ষ্যে ঢাকা থেকে মানুষের গ্রামে যাওয়া শুরু হয়ে গেছে। গণপরিবহণ বন্ধ খাতায় ছোট ছোট যানবাহনে ভেঙে ভেঙে মানুষ গ্রামে যাচ্ছেন। বিভিন্ন নদী বন্দরের ফেরিঘাটগুলোতে দেখা যাচ্ছে প্রচুর মানুষের ভিড়।

এদিকে করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে জারি করা কঠোর বিধিনিষেধের ১১তম দিনে গতকাল রোববার রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, জুরাইন, সদরঘাট, ওয়ারী, হাটখোলা, সায়েদাবাদ, মতিঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর, সবুজবাগ, বাড্ডা, আজিমপুর, লালবাগ, কেল্লারমোড়, বকশিবাজার ও পলাশীর অলিগলিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রচুর মানুষ রাস্তায় বের হয়েছেন। অলিগলির দোকানগুলো খোলা। মানুষ জটলা করছেন, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে কেনাকাটা করছে।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীর ছোট-বড় শপিংমল, মার্কেট, সিনেমা হল বন্ধই রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সড়কে যানবাহন বাড়ার পাশাপাশি ঘরের বাইরে কর্মব্যস্ত মানুষদের আনাগোনা বেড়েই চলছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়কের দুইপাশে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর খুলতে শুরু করেছে। গত কয়েক দিন ওইসব দোকানপাট বন্ধই ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে সেসব দোকান খোলা হচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেল, রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর তল্লাশি ছিল; তবে সেটা ছিল অন্যদিনের তুলনায় কিছুটা শিথিল। পুরান ঢাকার আজিমপুর, লালবাগ, কেল্লারমোড়, বকশিবাজার, পলাশীর অলিগলি ও প্রধান সড়কে মানুষের চলাচল ও যানবাহন আগের দিনগুলো থেকে বেশি ছিল।

অলিগলিতে ভ্যানগাড়িতে ফল আর সবজির পসরা আছে আগের মতোই। সবজির দোকান, মুদি দোকানগুলোতে ক্রেতাও অনেক, স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউ। যাত্রাবাড়ির কাঁচা বাজারের আড়ৎ ও মাছের আড়তে কেনাবেচা হচ্ছে। যাত্রাবাড়ি ও সায়েদাবাদ এলাকার রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতির মধ্যেই অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলতে দেখা গেছে। মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, কাকরাইল, নয়াপল্টন, ফকিরেরপুল, বিজয়নগর এলাকার রাস্তাঘাটে প্রাইভেটকার, পন্যবাহী যান, রিকশার চলাচল আগের দিনগুলোর তুলনায় বেড়েছে। যাত্রাবাড়ি মোড়ে মাঝে মাঝে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১ জুলাই থেকে সারা দেশে ৭ দিনের কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। পরে জাতীয় কমিটির সুপারিশে এই লকডাউনের মেয়াদ আরো ৭ দিন বাড়ানো হয়। গত কয়েক দিন থেকে সারা দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডেলটার ছোঁবল বেড়ে গেছে। প্রতিদিন আক্রান্ত, মৃত্যের সংখ্যা বাড়ছে। তারপরও মানুষের মধ্যে সচেতনতা আসছে না।

হাটখোলা রোডে কথা হয় রিকশাচালক মোহসিনের সঙ্গে। সে বললেন, ‘স্যার, সকাল থেইকা ক্ষ্যাপ মারতাছি। রাস্তায় মানুষজন দেইখা মনে হয় না কড়াকড়ি আছে। আগে যেমুন কড়াকড়ি ছিল, হেইডা এখন ওইভাবে নাই। মানুষ রাস্তায় নামছে। বাজারে কেনাকাটা চলছে’। কমলাপুরে টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্য কেনার জন্য ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। টিসিবি’র বিক্রয় লাইনে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে ক্রেতারা পণ্য কিনছেন। লাইনে দাড়াঁনো গোলাপবাগের বাসিন্দা মোহাম্মদ হারুন বললেন, ‘তেল, চিনি, ডাল কিনতে এসেছি। মাস্ক তো পরেছি, লাইনে মানুষ যেভাবে দাঁড়িয়েছে, তাতে করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কী করবেন? কেউ কথা শুনছে না। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে আমরা মধ্যবিত্তরা বেঁচে থাকার যুদ্ধ করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
ম নাছিরউদ্দীন শাহ ১২ জুলাই, ২০২১, ১১:১২ এএম says : 0
অদৃশ্য ভাইরাসে আস্তে আস্তে মৃত্যুপুরীতে পরিণতহচ্ছে দেশের জেলা শহর গ্রামগঞ্জে অসহায়ত্ত্বের মতো ভাইরাস প্রতিরোধের সুযোগ থাকা সত্বেও কঠোর প্রতিরোধের ব‍্যবস্থা নিতে ব‍্যর্থ। আইন শৃংখলা বাহিনী ট্রাফিক সিগন্যালের মত রাস্তায় দাঁড়িয়ে অর্থনীতি বাচাতে হবে পোশাক শিল্প কে বাচাতে হবে ইন্ডাস্ট্রি উৎপাদনশীলতা ধরে রাখতে হবে। সরকারের কৌশলে সিদ্ধান্ত করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চরমভাবে ব‍্যর্থ। শিরোনাম হচ্ছে সতর্কতা নয়তো মৃত্যু। এই সতর্কতার জন্যে প্রযোজন আইনের কঠোর শাসন। শৃংখলা জন্যে শাসন জরুরী ছিল। এখন অদৃশ্য শক্তির ভাইরাস বাংলাদেশের ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে মৃত্যু আক্রান্ত প্রতিদিন বাড়ছে। সামন পবিত্র ঈদ পশু কোরবানী মানুষের সমাগম নিযন্ত্রন করা সম্ভব হবেনা। সরকার এখনকি সিদ্ধান্ত নেন দেখার বিষয়।দেশের আইজিপি মহোদয় গুরুত্বপূর্ণ উক্তি দিয়ে ছিলেন আপনি কি বাসায় থাক বেন। নাকি কবরে থাকবেন আপনাকে ঠিক করতে হবে। মানুষ বুঝেনা। মানুষ কে আর্মি ষ্টাইলে বুঝালে বুঝবেন।
Total Reply(0)
এম এ জিন্নাহ ১২ জুলাই, ২০২১, ৩:৩১ পিএম says : 0
এখন পর্যন্ত সতর্ক ব্যক্তিরাই কেবল করোনায় মারা গিয়েছেন। অসতর্ক (৯০%) গ্রামবাসী, রিকশাচালক, মুদি দোকানদার, মাদ্রাসার হুজুর ইত্যাদি কেউ মরেন নাই…. মূল বিষয় ভয়। যে পেয়েছে ভয়, করোনা তার সঙ্গী হয়!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন