শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

দুদকের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হলেও প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরেই ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগেরও সত্যতা মিলছে। এ সংক্রান্ত প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন তার অফিসের অন্তত পাঁচজন কর্মকর্তা এবং আটজন কর্মচারী দুর্নীতি ও নানা ধরনের অনিয়মের সাথে জড়িত রয়েছে বলে শনাক্ত করেছে। কমিশনের এই উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, দুর্নীতি দমন কমিশন তার দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের কারণে জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে এই সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান একটি ইংরেজি দৈনিককে বলেছেন, শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া সংস্থার কর্মকা-কে এগিয়ে নেবে। তিনি মনে করেন, ভাল কাজ পেতে হলে পুরস্কৃত করা এবং মন্দ কাজের জন্য সাজার ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। তার মতে, এধরনের দুর্নীতিবাজ থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। প্রকাশিত অন্য খবরে বলা হয়েছে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তুলনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আর্থিক সচ্ছলতা বেশি। তাদের এত টাকা কোথা থেকে আসে, বেতনের বাইরে বাড়তি আয়ের পথ কী থাকতে পারেÑ এ প্রশ্ন তুলে ধরেছেন খোদ দুদকের এক কর্মকর্তা। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ঐ খবরে বলা হয়েছে, দুদকের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সেক্রেটারী আবু এম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, সংস্থার তদন্তে কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সন্দেহভাজনদের মধ্যে তিনজন উপ-পরিচালক, দুইজন সহকারী পরিচালক, দুইজন সহকারী পরিদর্শক একজন ডাটা অন্তর্ভুক্তি অপারেটর, একজন পিয়ন এবং একজন নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছে। এরা ঘুষ গ্রহণ, দুর্নীতিবাজদের নাম মুছে দেয়া, বদলি ঠেকাতে টাকা ও প্রভাবশালীদের কাজে লাগানোসহ অন্যান্য বেআইনী কাজ করেছেন। প্রকাশিত অন্য খবরে বলা হয়েছে, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে একটি অভিযোগ অনুসন্ধানে গিয়ে অভিযুক্তের কাছ থেকে লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম অফিসের উপ-পরিচালক রইস উদ্দীনের বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টে এখনো চাকরিতে রয়েছে এবং চাকরি থেকে অবসরে গিয়েছে এমন অনেক কর্মকর্তার নামই দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না, যাদের নাম প্রকাশিত হয়েছে কেবলমাত্র তারাই এধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত নাকি আরো কেউ রয়েছে সেটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয়। একথাও বলা দরকার, কেবলমাত্র দুর্নীতি দমন কমিশনেই নয়, সরকারী দায়িত্ব পালন করেন এমন অনেকেরই বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। একটি দুর্নীতিমুক্ত সমাজগঠনের বিবেচনায় এ বাস্তবতা খুবই উদ্বেগজনক। যাদের দিয়ে সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করার কাজ করানো হবে তারাই যদি আকণ্ঠ দুর্নীতিগ্রস্ত থাকে তাহলে সমাজ দুর্নীতিমুক্ত হবে কী ভাবে? দুর্নীতি দমন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন নয়। সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যান এটিকে অভিহিত করেছিলেন নখদত্তহীন বাঘের সাথে। সেই সাথে এ অভিযোগ রয়েছে, সংস্থাটি অনেক প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের সার্টিফিকেট দিয়েছে। অন্য দিকে রাজনৈতিক হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে এটিকে ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যান সংস্থাটিকে গতিশীল করার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা অবশ্যই সাধুবাদযোগ্য। তবে তাকে সংস্থাটির নিরপেক্ষতাকে সমুন্নত রাখতে হবে। কোন বিবেচনাতেই যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হন, সেটি তাকে নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ ও মনিটরিং করতে হবে। দুর্নীতিবাজ এবং সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকার পরেও যারা উৎকোচ দিয়ে এবং প্রভাব খাটিয়ে দায়মুক্ত হয়েছেন বা হবার পথে রয়েছেন তাদের ব্যাপারে যথাবিহিত ব্যবস্থা নিতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে দুর্নীতিবাজরা প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উদাহরণযোগ্য সাজার ব্যবস্থা করতে হবে। সংস্থাটিকে প্রভাব মুক্ত রাখার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ উদ্যোগ কার্যকর করা গেলে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দুর্নীতির সাথে যুক্তদের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে যাবেÑ যা একটি সুস্থ সমাজ গঠনের অনুবর্তী হতে পারে।
দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের ব্রত নিয়ে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিশনকে দুর্নীতিমুক্ত করতে কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তিনি প্রমাণ করেছেন, সদিচ্ছা এবং সাহস থাকলে দুর্নীতিবাজ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া যায়। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন বলে আমরা আশাবাদী। সংস্থাটি যাদের ইতোমধ্যেই দুর্নীতিবাজ হিসেবে শনাক্ত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। বর্তমান চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন সম্পর্কে মানুষের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। সে আশা জাগিয়ে রাখাই সংশ্লিষ্টদের প্রধান দায়িত্ব। সেজন্যই সংস্থাটির ভূমিকা হতে হবে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হতে হবে সৎ ও দায়িত্বশীল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন