শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে প্রাধান্য থাকুক সাধারণ জনগণ

এন আই আহমেদ সৈকত | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০২১, ১২:০২ এএম

সংকটকাল অতিক্রম করছে বিশ্ববাসী। করোনা পরিস্থিতি আমাদের জীবনযাত্রার গতি মন্থর করে দিয়েছে। মৃত্যুর মিছিলের সাথে অর্থনৈতিক ক্ষতি, সবমিলিয়ে শাঁখের করাত। শব্দের গাঁথুনিতে এ পরিস্থিতি তুলে ধরা কঠিন। তবুও বাস্তবতা মেনে আমাদের পাড়ি দিতে হচ্ছে দুর্যোগকালীন এ সময়।

বিশ্বের অনেক দেশে শুরু হয়েছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। মৃত্যুর হারের সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে সংক্রমণের হার। সরকার সর্বাত্মক লকডাউনের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এ প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই। একই সাথে আমাদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রশাসনের সচেতনামূলক কার্যক্রম এবং সরকারের অসহায় পরিবারের জন্য ত্রাণ তৎপরতা প্রশংসার দাবি রাখে।
বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নকামী দেশের অর্থনীতির গতিশীলতা ধরে রাখতে সরকারের প্রচেষ্টা প্রশংসা কুড়িয়েছে। চলমান সংকটে বিশ্ব অর্থনীতি যেখানে আত্মসমর্পণ করেছে ঠিক তার বিপরীত চিত্র বাংলাদেশে। রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় আমাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হয়েছে। এ কৃতিত্বের দাবিদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বের দৃঢ়তা, দূরদর্শিতা এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের ফলে সংকটকালীন সময়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।

করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় লকডাউন চলছে। এটি নিশ্চয় উদ্বেগের, যদিও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এর চেয়ে ভালো বিকল্পও আপাতত নেই। তবে তার চেয়ে বেশি উদ্বেগের জনসাধারণের অসচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীনতা। সংকটকালীন সময়ে নাগরিক সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা। জনগণের উদাসীনতা আমাদের সংকটকালীন সময়কে দীর্ঘায়িত করবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছি।
এরই মধ্যে আসছে পবিত্র ঈদুল আযহা। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সরকারকে রাজধানী থেকে নাড়ীর টানে নীড়ে ফেরার জনস্রোত মোকাবেলা করতে হবে। একইসাথে জনসমাগম রুখতে নজরদারি প্রয়োজন রয়েছে। তবে গত ঈদে ঘরমুখী জনস্রোত ঠেকাতে সরকারের সিদ্ধান্তে হিতে বিপরীত হয়েছে। মানুষ তার ধর্মীয় অনুভূতি এবং শেকড়ের টানে যে কোন উপায় অবলম্বন করে ঘরে ফিরেছে। সরকারের লকডাউনের সিদ্ধান্ত সে সকল সাধারণ মানুষের বরং বাড়ি ফেরার ভোগান্তি বাড়িয়েছে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করেছে। একইসাথে মাইক্রোবাস বা জিপে গাদাগাদি করে চড়তে হয়েছে। গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লঞ্চ বা ফেরি পারাপারের যে দৃশ্য চোখে পড়েছে তাতে ঘরমুখী জনস্রোত আমাদের শঙ্কিত করেছে।

পূর্বঅভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই, ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে সাধারণ জনতার নাড়ির টানে ঘরে ফেরার প্রত্যয় রুখে দেওয়া কঠিন হবে। এক্ষেত্রে মনে করি, এটি কোন বিধি নিষেধের বেড়াজালে আটকে না দিয়ে বরং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে ফেরার বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করা যেতে পারে। গণপরিবহন বন্ধ রেখে ব্যক্তিগত গাড়ি ও বিমান চলাচল চালু রাখলে করোনা প্রতিহত করার বিষয়টি যদি সরকারের নীতি নির্ধারকদের ভাবনায় থাকে তাহলে এটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দ্বিমুখী আচরণ। বরং আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে হবে দেশের সাধারণ জনতাকে। তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

শুধু মাত্র খেঁটে খাওয়া মানুষগুলো সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানা সত্তে¡ও রাস্তায় বের হলে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাবে এমন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এছাড়া আমাদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা থাকে কোরবানির ঈদে গোশত প্রাপ্তি। ঈদে লকডাউনের কঠোরতা থাকলে কোরবানির হার যেমন কমবে, তেমনি দরিদ্র জনগোষ্ঠী কোরবানির গোশত পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। ফলে সরকারের এ সকল বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। সাধারণ জনগণের প্রত্যাশাকে আমলে নিয়ে পরিস্থিতির আলোকে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

পরিশেষে বলতে চাই, সামাজে শ্রেণিবৈষম্য সৃষ্টি নয়, বরং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত হোক সকল মানুষের জন্য। সাধারণ জনগণের কল্যাণে বাস্তবায়ন হোক সে সিদ্ধান্ত। আসন্ন ঈদে মানুষের বাড়িফেরা নিশ্চিতে ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে সরকার ভাববে বলে বিশ্বাস করি। গণপরিবহন চালু করে সরকার স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কঠোর ভূমিকা পালন করলে সাধারণ জনগণ স্বাভাবিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে ঘরে ফিরে তাদের ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করতে সক্ষম হবে বলে বিশ্বাস করি।

মুসলিম প্রধান দেশে সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে সংক্রমণ ঠেকাতে ভিন্ন করে ভাবতে হবে নীতিনির্ধারকদের। আমি বিশ্বাস করি,প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি পদক্ষেপ জনগণের জীবনমানকে সামনে এগিয়ে নিতে সক্ষম। ফলে জনগণের প্রাণের দাবিগুলো তার দৃষ্টিগোচর হলে তিনি নিশ্চয় এ বিষয়ে নতুন করে ভাববেন।
লেখক: উপ তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, সাধারণ সম্পাদক, একাউন্টিং এলামনাই এসোসিয়েশন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন