কয়েক দশক আগেও উত্তরের বিল ও পুকুরে পদ্ম ও শাপলা জাতীয় ফুলের সমারোহ ছিল স্বাভাবিক। গ্রামীণ হাট বাজারে সবজি হিসেবে বিক্রি হতো শাপলা ও পদ্ম ডাটা। কালের বিবর্তনে সেসব আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেসরকারি কলেজের প্রভাষক দেওয়ান পলাশ বলেন, তথাকথিত আধুনিক পদ্ধতির মাছ চাষের বিস্তারেই উত্তরের প্রকৃতির এমন নির্মম বিনাশ। এখন আর গ্রামের পরে গ্রাম ঘুরেও দেখা মেলে না শাপলা ও পদ্ম পুকুরের ।
সম্প্রতি বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার গুনাহার ইউনিয়ন পরিষদের সুর্যতা গ্রামের একটি বিশাল দীঘিতে শ্বেতপদ্ম ফোটার খবর পাওয়া যায়। সেখানে দেখতে গেলে গ্রামবাসিরা জানান, গ্রামটি হিন্দু অধ্যুষিত। পুকুরটি যৌথ মালিকানায়। শরীকদের বনিবনা না হওয়ায় মাছ চাষ বা চাষের জন্য লিজ দেয়া হয়নি। সে কারণেই পদ্মফুলের গাছে ভরে উঠেছে দীঘিটি।
দীঘির মালিক সুকুমার চন্দ্র জানান, তিনি আদমদীঘি উপজেলার আড়াইল গ্রামে বেড়াতে গিয়ে সেখানে দুর্লভ জাতের শ্বেতপদ্ম দেখতে পান। কৌতুহল বশত শ্বেতপদ্মের কয়েকটি শেকড় এনে পুকুরে গেড়ে দেন। অল্পদিনের মধ্যেই পুকুরটি ভরে যায় পদ্ম ফুলের গাছে। আর এ বর্ষায়তো ফুলই ফুটেছে। এ খবর জানাজানির পর প্রতিদিনই দেখতে আসছে মানুষ।
দীঘির অপর অংশীদার শ্রীনন্দন চন্দ্র বলেন, ৪০ বছর আগে এই এলাকায় পুকুর ও বিলে মোটামুটি মিলত শাপলা ও পদ্মফুল। বাজারে মাছ মাংস বিক্রি হতো পদ্ম পাতায় । অভাবের সময় মানুষ শাপলা ও পদ্ম ডাটা রান্না করে খেত সবজি হিসেবে। তার মতে মাছ চাষের জন্য পুকুর আগাছা মুক্ত করার নামে মুলত শাপলা, পদ্মসহ বিভিন্ন জলজ ফুলের নীরবে বিনাশ হয়ে গেছে। কত বুনো ফুল যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে কে জানে।
তিনি জানান, তারা এখ শ্বেতপদ্মকেই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের চিন্তা করছেন। তাদের ধারনা বানিজ্যিকভাবে চাষ করলেও মাছের চেয়ে কম লাভ হবে না। দুপচাঁচিয়া জে কে কলেজের কৃষি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দিনেশ চন্দ্র বসাক বলেন, সাদা পদ্মফুল বর্তমানে অনেকটা বিলুপ্তের পথে। মূলত বর্ষাকালে পদ্মফুল ফোটা শুরু হয়ে শরৎ ও হেমন্তকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। চাহিদার কারণে পদ্মফুল সংগ্রহ ও বিক্রি করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাছাড়া পদ্মফুল গাছ ভেষজগুণ সমৃদ্ধ। এর ডাটা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। পদ্মগাছ মানবদেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ে পদ্মফুল গাছ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন