যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও ত্যাগের মহিমায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে বুধবার সারা দেশে ১৪৪২ হিজরি সনের পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হয়েছে। করোনা মহামারিতে হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর স্মৃতি বিজড়িত কোরবানির ঈদে গত বছরের মতো এবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদ জামাত শেষে মোনাজাতে আল্লাহুম্মা আমীন আল্লাহুম্মা আমীনে প্রকম্পিত হয়ে উঠে মসজিদগুলো।
বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবারও রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ, ঐতিহাসিক শোলাকিয়াসহ অধিকাংশ ঈদগাহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি অনুরসণ করে রাজধানীসহ বিভিন্ন মসজিদে ঈদের জামাতে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। অনেক মসজিদে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় রাস্তার ওপর ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনেক মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে একাধিক ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদের খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম ও খতিবরা কোরবানির গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা করেন। পেশ ইমামরা বলেন, কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই কবুল হয়ে যায়।
মসজিদে মসজিদে করোনা মহামারি থেকে মুক্তি, দেশ-জাতির সুখ-শান্তি উন্নতি এবং মুসলিম উম্মার সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোনাজাতে মুসল্লিদের মাঝে কান্নার রোল পড়ে যায়। ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলি না করেই মুসল্লিরা নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যান।
মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের উদ্দেশ্যে ঈদ জামাত শেষে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অন্যতম বৃহৎ এই ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করেছেন। প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখ এ ঈদ পালিত হয়। করোনা সংক্রমণ দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় ধর্ম মন্ত্রণালয় এবার স্থানীয় প্রশাসনকে আলোচনা করে ঈদ জামাতের স্থান নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছিল। সারা দেশে এবার হাতে গোনা কিছু ঈদগাহে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদগাহে ব্যাপক জনসমাগম করে ঈদের নামাজ না পড়ার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। ঈদুল আজহায় ঈদের নামাজের পরই আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে পশু কোরবানি করা হয়েছে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সকাল ৭টা থেকে পর পর পাঁচটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান। এছাড়া দেশের বিভিন্ন মসজিদ ও খোলা জায়গায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। নগরীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চারটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ঈদুল আজহার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম বলেন, কোরবানির দিন আদম সন্তানের কোনো আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট রক্ত প্রবাহিত করা অপেক্ষা পছন্দনীয় নয়। কেয়ামতের দিন কোরবানির পশু তার শিং পশম খুরসহ (হাশরের ময়দানে) হাজির হবে। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে যায়। অতএব সন্তুষ্ট চিত্তে কোরবানি করতে হবে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকালে ঈদুল আজহার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান বলেন, কোরবানি হযরত ইবরাহিম আ. এর আদর্শ বা সুন্নাত। কোরবানি একমাত্র মহান আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই করতে হবে। প্রতি বছর ত্যাগের শিক্ষা নিয়েই আমাদের মাঝে কোরবানি আসে।
পেশ ইমাম বলেন, মহান আল্লাহপাক কেয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মার জন্য কোরবানিকে ওয়াজিব বিধান হিসেবে মনোনীত করেছেন। ইসলামের রীতিনীতি অনুসরণ করেই কোরবানির ওয়াজিব বিধান পালন করতে হবে। আমাদের অর্জিত সম্পদকে মানুষের কল্যাণে দেশ-জাতির কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। পেশ ইমাম বলেন, কোরবানির পশু জবাইয়ের কোনো গোশত, রক্ত হাড় কিছুই আল্লাহর নিকট পৌছে না। একমাত্র তাকওয়াই আল্লাহর নিকট পৌছে। তিনি গরিব মিসকিনদের হক যথাযথভাবে আদায়ে গুরুত্বারোপ করেন। ঈদ জামাত শেষে করোনা মহামারি থেকে মুক্তি, দেশ-জাতির সুখ-শান্তি এবং মুসলিম উম্মার সমৃদ্ধি কল্যাণ কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। এসময়ে মুসল্লিরা কান্নাকাটি করে মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
আমাদেরকে ঈদুল আজহার শিক্ষা ও প্রকৃত তাৎপর্য অনুধাবন করতে হবে। ঈদুল আজহা হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম, বিবি হাজেরা ও ইসমাঈল আ. এর পরম ত্যাগের স্মৃতি বিজড়িত উৎসব। কোরবানির মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর জন্য তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস ত্যাগ করতে রাজি আছে কি-না সেটিই পরীক্ষা করা হয়। ঈমানের এসব পরীক্ষায় যার যত বেশি ইখলাস ও তাকওয়া থাকবে সে তত বেশি সফলতা লাভ করতে পারবে। কোরবানি শুধু পশু কোরবানির নাম নয়। বরং নিজের পশুত্ব, স্বার্থপরতা, হীনতা, দীনতা, আমিত্ব ও অহঙ্কার ত্যাগের নাম। নিজের নামাজ, কোরবানি, জীবন-মরণ ও যাবতীয় বিষয় কেবল আল্লাহর নামে, শুধু তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য করাই হচ্ছে প্রকৃত কোরবানি।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ধর্মীয় ভাবগম্ভীর এবং উৎসবমুখর পরিবেশে চট্টগ্রামে পবিত্র ঈদ উল আজহা উদযাপিত হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে মসজিদে ঈদের নামাজে অংশ নিয়েছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। নামাজ শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে পশু কোরবানি দেন নগরবাসী। করোনায়ও ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত এই ঈদ মুসলমানদের ঘরে ঘরে আনন্দ বয়ে আনে। সিটি করপোরেশনের আয়োজনে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে পবিত্র ঈদুল আজহার প্রথম এবং প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে সকাল ৭টায়। একই স্থানে দ্বিতীয় জামাত হয় সকাল আট টায়। নামাজ শেষে মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা এবং করোনাভাইরাস থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে আল্লাহর রহমত কামনা করা হয়। নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, লালদীঘি জামে মসজিদসহ প্রতিটি জামাতে ছিলো মুসল্লির ভিড়। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মসজিদ এবং খোলা জায়গায় ঈদের জামাত হয়।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, করোনা মহামারী থেকে পরিত্রানসহ সব ধরনের বালা মুছিবত থেকে মহান আল্লরাহ রাব্বুল আল অমীনের কাছে পানাহ চেয়ে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে বুধবার ঈদ উল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বছরের মত এবারো দক্ষিণাঞ্চলে কোন ঈদগাহে জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। এছাড়া বরিশালের চরমোনাই দরবার শরিফ, পিরোজপুরের ছারছিনা দরবার শরিফ, ঝালকাঠীর নেসারাবাদে হজরত কায়েদ ছাহেব হুজুরের এনএস কামিল মাদরাসা, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের হজরত ইয়ার উদ্দিন খলিফা (র.) দরবার শরিফ, বরগুনার বেতাগীর মেকামিয়া দরবার শরিফসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন দরবার শরিফে বিশাল ঈদ জামাতে বিপুল সংখ্যক মুসুল্লী ঈদের নামাজ আদায় করেন।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, বগুড়ায় বুধবার শান্তি ও যথাযথ ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য পূর্ণ পরিবেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। করোনার কারনে বগুড়া ও বগুড়া শহরতলীর অধিকাংশ স্থানে মহল্লার মসজিদ সমুহে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে বিভিন্ন স্থানে ঈদগাহেও ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বগুড়ার মহাস্থান মাজার মসজিদ, বগুড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, বগুড়া সেন্ট্রাল জামে মসজিদে বৃহত্তম ঈদের জামাত সমুহ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে এবার সারা দেশের মতো খুলনায় যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উদযাপন করা হয়। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সকাল আটটায় খুলনা টাউন জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাতে ইমামতি করেন টাউন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ সালেহ। এছাড়া কালেক্টরেট জামে মসজিদে সকাল সাড়ে আটটায় একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি, দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করা হয়েছে। গত বুধবার বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে একাধিক জামাতের মাধ্যমে ধর্মপ্রান মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন। জেলা জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৭ টা ও সাড়ে ৮ টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন হযরত মাওলানা সিবগাতুল্লাহ নূর।
বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, বাগেরহাটে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঈদুল আজহা পালিত হচ্ছে। গত বুধবার সকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাগেরহাটের ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। সকাল সাতটায় বাগেরহাটের বিশ^ ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গফরগাঁও উপজেলায় বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল আজহা পালিত হয়েছে। উপজেলার প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈমামবাড়ি মসজিদে সকাল ৯টা। গফরগাঁও রেলষ্টেশন মসজিদে, পাঁচবাগ ইউনিয়নের দিঘীরপাড় দারুছ-ছুন্নাৎ নেছারিয়া আলিম মাদরাসাসহ বিভিন্ন মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন