শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আরো বাড়াতে হবে

প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির এসটিমেটেড হারে পরিবর্তন এনেছে। ব্যাংকের হিসাবে এটা ৭.১ শতাংশ, যা সরকারের এসটিমেটেড হারের থেকেও বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে তা ৭.০৫ শতাংশ। উল্লেখ্য, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের পূর্ববর্তী পূর্বাভাস ছিল ৬.৭ শতাংশ। চলতি বছরে এডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধারণার চেয়েও ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর পেছনে প্রধান ভূমিকায় থাকতে পারে রফতানি ও রফতানি আয় বৃদ্ধি এবং অভ্যন্তরীণ ভোগ বৃদ্ধি। নানা রকম প্রতিবন্ধকতা ও বাধা সত্তে¡ও রফতানি আয় বাড়ছে। এই সঙ্গে সরকারী কর্মচারীদের নতুন বেতন স্কেল কার্যকর করায় ক্রয়ক্ষমতা ও ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের এসটিমেটেড হারের চেয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পাওয়া নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক দিক। এ ধারা ধরে রাখা শুধু আবশ্যক নয়, জরুরিও বটে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধির ওপর দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির বিষয়টি বিশেষভাবে নির্ভর করে। এটা ঠিক, যদি বিনিয়োগ আকাক্সক্ষা অনুযায়ী বাড়ত, শিল্পায়ন, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়ত তাহলে রফতানি যেমন আরো বাড়ত তেমনি ভোগ ও ক্রয়ক্ষমতাও বাড়ত। এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও বৃদ্ধি পেত। অর্থনীতিবিদদের মতে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দুই সংখ্যায় নিয়ে যাওয়া মোটেই কঠিন বা অসাধ্য নয়। এ জন্য বিনিয়োগ-শিল্পায়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। সরকার অবশ্য দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু এসব চেষ্টা তেমন কোনো কাজে আসছে না। বিনিয়োগে গতি আসছে না। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, ব্যক্তিগত ক্ষুদ্র সঞ্চয়ই হোক আর ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণই হোকÑ কোনোটাই বিনিয়োগে আসছে না। কাগজপত্রের হিসাবে বিপুল বিনিয়োগের চিত্র দেখানো হলেও বাস্তবে নতুন বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। দেশের বর্তমান অবস্থা অনেকটাই স্থিতিশীল। তারপরও বিনিয়োগ না আসাটা দুর্ভাগ্যজনক। এটাও লক্ষণীয়, দেশে বিনিয়োগ না হলেও বিনিয়োগযোগ্য বিশাল অংকের অর্থ প্রতি বছর বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশী বিনিয়োগের যখন এই হাল, তখন বিদেশী বিনিয়োগও আসছে না। সেখানেও অনীহা লক্ষ্যযোগ্য।
বিনিয়োগের পূর্বশর্ত বান্ধব পরিবেশ ও লাভের নিশ্চিত সম্ভাবনা। এ ক্ষেত্রে নানা বাধা ও সমস্যা বিদ্যমান। বিনিয়োগ পরিবেশের একটি দিক হলো, বিনিয়োগের সহজ সুযোগ ও অবকাঠাগত সুবিধা। এই সঙ্গে প্রয়োজনীয় উপকরণপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা। অপর দিকটি হলো, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ সার্বিক স্থিতিশীলতা। স্বীকার করতেই হবে, বিনিয়োগের সুযোগ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে তা সহজসাধ্য নয়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা, জমির অভাব, ঋণের উচ্চ সুদহার, অবকাঠামোগত সুবিধার ঘাটতি ইত্যাদির সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুৎ প্রভৃতির সহজপ্রাপ্যতার অভাবে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে আপাতত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত হলেও যে কোনো সময় উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টিও অত্যন্ত নাজুক। এমতাবস্থায়, বিনিয়োগে গতি বাড়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
বাস্তবতার এই প্রেক্ষাপটেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়া অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। জাতির যে উন্নয়ন আকাক্সক্ষা, সরকারের যে উন্নয়ন পরিকল্পনা, তা বাস্তবায়ন করতে হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দুই সংখ্যায় স্থিতিশীল করার বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, শিল্প-কারখানা স্থাপন করে উৎপাদন, রফতানি ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। উৎপাদন বাড়লে শুধু রফতানিই বাড়বে না, একই সঙ্গে জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে দেশেও পণ্যের ভোক্তাসংখ্যা বাড়বে। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে তেজীভাব আসবে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারও বাড়বে। লক্ষ্য অর্জনে সরকারের প্রধান কাজ হবে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত ও নিশ্চিত করা। এ জন্য বিনিয়োগ সহজ করার পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়নের যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তা দ্রæত বাস্তবায়ন করা, গ্যাস-বিদ্যুতের নিশ্চিত সংস্থান করা। একই সঙ্গে সরকারকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ইতিবাচক উদ্যোগ নিতে হবে, বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কটের আশু সমাধান করতে হবে। নাগরিক নিরাপত্তা, সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলা, আইনের শাসন, সুবিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠায়ও কার্যকর উদ্যোগ-পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার এসব দিকের প্রতি গুরুত্ব সহকারে নজর দেবে। জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থেই জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন