রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সৈয়দপুরে লকডাউনে অনলাইন ক্লাশ নিয়ে ব্যাস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা

সৈয়দপুর (নীলফামারী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০২১, ৫:৫৯ পিএম

করোনাভাইরাসের সংক্রমন রোধে দেশব্যাপি চলমান লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাহিরে যাচ্ছেন না মানুষজন। এরই মধ্যে নীলফামারী সৈয়দপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাশ নিয়ে ব্যস্ততায় দিন কাটাচ্ছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
কোভিড-১৯ গত ১৬ মার্চ ২০২০ থেকে আজ অবধি ২০২১ পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছেনা। এমন পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য শিক্ষার্থীদের ওয়ার্কশিট ও অনলাইন ক্লাশ চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
জানা যায়, গত জুন মাসের ২৬ ও ২৭ তারিখ পর্যন্ত ৭ম সপ্তাহের ওয়ার্কসীট বিতরণ করা হয়। ১জুলাই থেকে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন ঘোষণায় ওয়ার্কসিট বিতরণ বন্ধ করে দেয় সংশি¬ষ্ট দপ্তর। কিন্তু চালু রাখা হয় গুগলমিটে অনলাইন ক্লাশ। এরই মধ্যে বেশ সাড়া জেগেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
সৈয়দপুর উপজেলার ৭৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়গুলো তিনটি ক্লাষ্টারে বিভক্ত। প্রতিটি ক্লাষ্টারে একজন করে সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে রামকৃষ্ণ ক্লাষ্টারের দায়িত্বে রুহুল আমিন প্রধান, পূর্ববোতলাগাড়ী ক্লাষ্টারের মুসারাত জাহান ও কামারপুকুর ক্লাষ্টারের আজহারুল ইসলাম এর তত্ত্বাবধানে অনলাইন ভিত্তিক ক্লাশ চলছে বলে জানা যায়।
অপর দিকে অনলাইন ক্লাশ নিয়ে বিড়াম্বনায় পড়েছে অভিভাবকরা। ওই ক্লাশে প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ৩০টাকা খরচ হচ্ছে। লকডাউনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও মানুষ কর্মহীন হওয়ায় এই অর্থ যোগান দিতে হিমসিম খাচ্ছে এক শ্রেণির অভিভাবকরা।
কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের বটতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র শাকিব-বিন-সাহিদ এর কৃষক পিতা- ছামেদুর রহমান বলেন, বহুদিন থেকে স্কুল বন্ধ, তার পরেও বাচ্চাদের লেখাপড়া চালু রাখতে সরকার মোবাইলের মাধ্যমে বই পড়াচ্ছে এতে আমরা অত্যান্ত খুশি। অপরদিকে শহরের বানিয়াপাড়া আজিজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিম এর পিতা আক্কাস আলী ও অন্যান্য অভিভাবকরা একই কথা বলেন।
জানতে চাইলে পল্লী এলাকার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের মধ্য বোতলাগাড়ী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ শহিদুল হক, কামারপুকুর ইউনিয়নের কুজিপুকুর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিজাতুল কোবরা, বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের ডাংগারহাট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিবলী বেগম, কাশিরাম ইউনিয়নের তিন পাই বেলপুকুর-২নং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) উমর ফারুক, ও খাতামধুপুর ইউনিয়নের মধুপুর ইউনাইটেড বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নির্দেশনা মোতাবেক ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণির অনলাইন ক্লাশ নিচ্ছি। তবে শুরুর দিকে খুব একটা সাড়া পাইনি এখন বেশ সাড়া জেগেছে। আমরাও শহরের মত শিক্ষার্থীর হার বৃদ্ধি করতে চেষ্ঠা করে যাচ্ছি।
শহরের বানিয়াপাড়া আজিজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস, নয়াবাজারের প্রধান শিক্ষক মির্জা জহুরা, তুলশীরাম বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমিনুল ইসলাম ও রামকৃষ্ণ মডেলের প্রধান শিক্ষক ওবায়দুল রহমান চৌধুরী জানান, যাদের সামর্থ্য আছে তারাই কেবল মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাশে যুক্ত হচ্ছে কাউকে বাধ্য করা হচ্ছে না। তবে একই মোবাইলে ৩ থেকে ৪ জন শিক্ষার্থীও ক্লাশে অংশগ্রহণ করছেন। প্রতিদিন ১ম থেকে ২য় শ্রেণির একটি ক্লাশ ও ৩য় থেকে ৫ম শ্রেণির দুইটি করে ক্লাশ নেয়া হচ্ছে। স্কুল বন্ধ থাকলেও শিক্ষকরা বাসায় বসে গুগোল মিটে যুক্ত হয়ে নিয়মিত ক্লাশ পরিচালনা করছেন।
সৈয়দপুর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও লক্ষণপুর চড়কপাড়ার বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আমিনুর রহমান বিপু জানান, সমগ্র উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষার মানউন্নয়নে গুগোল মিটে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ক্লাশ করতে বেশ আনন্দ উপভোগ করছে।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা প্রাথমিক সহকারি শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন প্রধান জানান, বর্তমানে এ উপজেলায় ৬৫ টি বিদ্যালয়ে গুগোল মিটে ক্লাশ পরিচালনা হচ্ছে। প্রতিটি ক্লাশে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করছে তবে এর হার আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।
সৈয়দপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাহজাহান আলী মন্ডল জানান, গত ১৩ জুন থেকে অনলাইন ভিত্তিক ক্লাশ শুরু হয় যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। এ বিষয়ে গুগোল মিটে লিংকে সংযুক্ত হয়ে বিভাগীয় উপ-পরিচালক রংপুর, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নীলফামারী পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রেখেছেন। সরকারের নির্দেশ মোতাবেক আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীর ঝড়ে পরা হার কমাতে প্রতিনিয়তই শিক্ষকগণ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন