সবার চোখেই পানি, মোনাজাতে জান্নাত কামনা : মহাখালির গাউসুল আজম মসজিদে শেষ জানাযা : বাবার কবরের পাশে দাফন করা হবে আজ
স্টাফ রিপোর্টার : অগণিত মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সদ্য মরহুম সাবেক সেনাকর্মকর্তা আসম হান্নান শাহ। গতকাল বৃহস্পতিবার চার দফায় অনুষ্ঠিত মরহুমের জানাযায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। সর্বশেষ জানাযা হয় মহাখালীর গাউসুল আজম জামে মসজিদে। জানাযায় অংশগ্রহণকারীতে কানায় কানায় ভরে যায় মসজিদ।
দল, মতাদর্শের ঊর্ধ্বে রেখে শেষ বিদায় জানালেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অগণিত নেতাকর্মী। আর প্রিয় নেতার লাশ দেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন জানাযা নামাজস্থলে। জানাযা নামাজের পর মোনাজাতের সময় অনেক নেতাকর্মীকে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে দেখা গেছে। চোখে পানি নিয়ে মহান আল্লাহর কাছে মরহুমের জন্য জান্নাত কামনা করেছেন জানাযায় অংশগ্রহণকারীরা।
দুপুর সোয়া ১২টায় মরহুমের কফিন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে পৌঁছায়। কার্যালয়ের সামনের সড়কে অস্থায়ীভাবে কালো কাপড় দিয়ে তৈরি মঞ্চে তার লাশ রাখা হয়। এরপর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা মরহুমের কফিনে দলীয় পতাকায় ঢেকে দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে নেতা-কর্মী সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
সকাল থেকে নয়া পল্টনের কার্যালয়ে হান্নান শাহের রুহের মাগফেরাত কামনা করে পবিত্র কোরআন খানি অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে সিনিয়র নেতারা প্রথম পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। আজ শুক্রবার গাজীপুরে তিনদফা জানাযা শেষে কাপাসিয়ার ঘাগটিয়া গ্রামে বাবার কবরের পাশে দাফন করা হবে।
বাদ জোহর অনুষ্ঠিত জানাযায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, এমকে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আবদুল মঈন খান, আব্দুল্লাহ আল নোমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, গিয়াস কাদের চৌধুরী, আহমেদ আজম খান, শওকত মাহমুদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আব্দুস সালাম, গোলাম আকবর খন্দকার, হাবিবুর রহমান হাবিব, এএসএম আব্দুুল হালিম, কবির মুরাদ, ফজলুর রহমান, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আমিনুল ইসলাম, শরিফুল আলম, আব্দুস সালাম আজাদ, ডা. শাহাদাৎ হোসেন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আব্দুুল আউয়াল খান, কাদের গনি চৌধুরী, কাজী আবুল বাশার, আব্দুল মোমেন তালুকদার খোকা, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, সাইফুল আলম নীরব, মাহবুবুল হাসান পিংকু, আশরাফ উদ্দিন নিজাম, হাসান মামুন, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান প্রমুখ।
২০ দলীয় জোটের মধ্যে কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় পার্টি (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, আহসান হাবিব লিংকন, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, খোন্দকার লুৎফর রহমান, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান এডভোকেট আব্দুর রকিব, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়েরসহ বিভিন্ন স্তরের অগণিত নেতা-কর্মী সমর্থক ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
এছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীও এই সময়ে দাঁড়িয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকার বাইরে থেকেও শত শত নেতাকর্মীরা জানাযায় অংশ নেন।
জানাযার আগে মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তিনি (আসম হান্নান শাহ) শুধু একজন সৈনিক নন, সত্যিকারের একজন গণতন্ত্রের সৈনিকও ছিলেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার ভূমিকা চিরকাল স্মরণীয় থাকবে।
আগামীকাল শনিবার বাদ আসর নয়া পল্টনের কার্যালয়ে হান্নান শাহের স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে বলে জানান তিনি। আসম হান্নান শাহের ইন্তেকালে গত মঙ্গলবার থেকে চারদিনের শোক পালন করছে বিএনপি। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অধনমিত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তোলন করা হয়েছে কালো পতাকা।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ডিওএইচএস’র জামে মসজিদ, সাড়ে ১১টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় হান্নান শাহ’র নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার সর্বশেষ জানাযা হয় মহাখালীর গাউসুল আজম জামে মসজিদে। এরপর মরহুম হান্নান শাহের লাশ সিএমএইচএর হিমঘরে রাখা হয়।
ডিওএইচএস’র জানাযায় বিকল্পধারা প্রেসিডেন্ট সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান নেতা এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ড. ওসমান ফারুক, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, বিএনপির সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য তানভীর আহমেদ সিদ্দিকীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গ ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা অংশ নেন।
এরপর মরহুমের কফিন নেয়া হয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়। সেখানে জাতীয় সংসদের পক্ষে চীফ হুইপ আসম ফিরোজ, জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদের পক্ষে নুরুল ইসলাম এবং খালেদা জিয়ার পক্ষে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আব্দুুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, এলডিপির পক্ষে আব্দুুল করীম আব্বাসী ও শাহাদাত হোসেন সেলিম আলাদাভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মরহুমের নামাজে জানাযায় সাবেক সেনাপ্রধান বিএনপির লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, বিরোধী দলের সাবেক চীফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, এনডিপির খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সভাপতি এএইচএম কামারুজ্জামান, সাবেক হুইপ শহীদুল হক জামাল, সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম আশরাফউদ্দিন নিজান, জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল), নাজিম উদ্দিন আলম, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা, সেলিম রেজা হাবিবসহ বিভিন্ন দলের বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য এবং সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
আজ দাফন কাল কুলখানি
শুক্রবার বাদ জুম্মা গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়াতে তাকে দাফন করা হবে, যে মাটিতে ৭৪ বছর আগে জন্ম হয়েছিলো তার। দাফনের আগে শুক্রবার আরো তিনটি জানাযা হবে গাজীপুরে। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচের হিমঘর থেকে শুক্রবার সকালে সড়ক পথে তার লাশ নিজ জেলায় নিয়ে যাওয়া হবে। সকাল ৯টায় জয়দেবপুর রাজবাড়ী মাঠে, সাড়ে ১০টায় কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এবং জুমার পর বিকেল তিনটায় মরহুমের নিজ এলাকা চালা বাজার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাযা হবে। এরপর ঘাগুটিয়া গ্রামে বাবার কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হবে। আসম হান্নান শাহ’র ছোট ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান জানান, আগামী শনিবার বাদ মাগরিব মহাখালী ডিওএইচএসএর জামে মসজিদে মরহুমের দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন