শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হোটেল-রেস্তোরাঁ খুলতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান মালিকরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০২১, ৭:৫৮ পিএম

আগামী ৫ আগস্টের পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, হোটেল রেস্তোরাঁ স্বাভাবিক নিয়মে খোলা রাখতে চান মালিকরা। সেটা যদি সম্ভব না হলে অর্ধেক আসনে বসিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ আবারো চালুর দাবি জানিয়েছে মালিক সমিতি। তারা বলছেন, চলমান বিধিনিষেধে রেস্তোরাঁগুলো শুধু অনলাইন/টেকওয়ের মাধ্যমে খাবার বিক্রি করতে পারছে। কিন্তু এ সেবার অন্তর্ভুক্ত রেস্তোরাঁর সংখ্যা সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩ শতাংশ। এ কারণে সারাদেশে প্রায় ৮০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে। বন্ধ থাকায় দিশেহারা অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে এ খাতের উদ্যোক্তারা। আর তাই এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

সোমবার (২ আগস্ট) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে করোনা পরিস্থিতিতে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত রেস্তোরাঁ খাতের সমস্যা তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।

সংবাদ সম্মেলনে সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান লিখিত বক্তব্যে বলেন, মহামারি করোনাভাইরাসের আঘাতে রেস্তোরাঁ খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কখনও অর্ধেক আসনে বসিয়ে আবার কখনও শুধু অনলাইন বা টেকওয়ের মাধ্যমে আমাদের ব্যবসা সীমিত রেখেছি। কিন্তু টেকওয়ে দিয়ে ব্যবসা চালানো সম্ভব নয়। টেকওয়ে সেবার আওতায় রেস্তোরাঁর সংখ্যা ২ থেকে ৩ শতাংশ।

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি জানায়, সারাদেশে ৬০ হাজার রেস্তোরাঁয় ৩০ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতের সঙ্গে জড়িত। যারা এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছে। করোনার প্রভাবে সারাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।

সংগঠনের মহাসচিব বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে হাহাকারের টেলিফোন আসছে। সবাই শুধু বলে ‘আমাদেরকে বাঁচান’। ব্যবসায় আর টিকে থাকতে পারলাম না। যা আমাদেরকে কাঁদায়। আমাদের জন্য এটা খুবই কষ্টদায়ক। মালিকের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হৃদয়বিদারক কষ্ট করছে। এটা ভাষায় বুঝানো সম্ভব নয়।

ইমরান হাসান বলেন, আমরা মনে করি, বর্তমানে শুধু অনলাইন ডেলিভারির সুযোগ দিয়ে রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার ঘোষণাটি ‘দূরভীসন্ধিমূলক’। কুচক্রি মহলের দেশীয় ব্যবসায়ীদের কোণঠাসা করার পথ। এখানে বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলের হাত রয়েছে। যারা এখন খাবার টেকওয়ের ব্যবসাতে জড়িত। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আমরা কোনো আর্থিক সহায়তাও পাচ্ছি না। পঁচনশীল (পেরিশেবল) পণ্য বিক্রি করার ক্ষেত্রে ঋণ দেয়া যাবে না, বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নির্দেশনার কারণে আমরা ঋণ পাচ্ছি না। এছাড়া এ খাতকে শিল্প ঘোষণা না করায় ব্যাংকের আগ্রহ নেই। যদিও রাজস্ব খাতে এ খাত অনেক বড় অংশীদার এবং পর্যটন শিল্পের প্রধান নিয়ামক।

রেস্তোরাঁ মালিকরা বলেন, এ পরিস্থিতির পরেও ইএফডি মেশিন স্থাপন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ে হয়রানি চলছে। সরকারি লোক নয়, পাড়া মহল্লার ভাড়া করা লোক দিয়ে এনবিআর আমাদের হয়রানি করছে।

সংবাদ সম্মেলনে সমিতির নেতারা সরকারের কাছে ছয় দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা। তাও যদি সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে ৫০ ভাগ আসনে বসিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ চালু করা। হোটেল রেস্তোরাঁর জন্য রানিং ক্যাপিটাল হিসেবে এসএমই খাত থেকে এ খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা করা। যা সহজশর্তে, স্বল্প সুদে জামানত বিহীন এবং দীর্ঘ-মেয়াদী ঋণ। হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক-শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টিকা প্রদান করা। শ্রমিকদের মোবাইলে অথবা নির্দিষ্ট কার্ড দেয়ার মাধ্যমে নগদ অর্থ অথবা মাসিকভাবে খাদ্য সহায়তা দেয়া। হোটেল-রেস্তোরাঁ খাতকে শিল্পের মর্যাদা প্রদান করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে না রেখে একটি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা। এছাড়া ই-কমার্স টেকওয়ে, পার্সেল ও অনলাইন ডেলিভারির ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমিশন করা ও একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন পূর্বক তাদের নিয়ন্ত্রণ করা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত এ খাতে ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। দেশের প্রচুর রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়েছে এবং বেশিভাগ রেস্তোরাঁর মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। মালিক সমিতির নেতারা বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনয়ের সাঙ্গে এসব প্রস্তাবনা পেশ করছি। প্রধানমন্ত্রী দয়া করে এ সেক্টরের মানবিক দিক বিবেচনা করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন।

সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি গাজী মো. ওসমান গনি, প্রধান উপদেষ্টা খন্দকার রুহুল আমিন, প্রথম যুগ্ম-মহাসচিব ফিরোজ আলম সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ আন্দালিব, কোষাধ্যক্ষ তৌফিকুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব ফয়সাল মাহবুবসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন