মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা

প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১৭ দিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকালে দেশে ফিরেছেন। বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ সর্বস্তরের জনগণ তাকে বিপুল সম্বর্ধনা দিয়েছে। এক বর্ণিল পরিবেশে তাঁকে মানুষ সাদর সম্ভাষণ জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা ত্যাগ করেন। প্রথম পর্যায়ে ১৫ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর কানাডা সফর করেন। সেখানে তিনি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর আমন্ত্রণে গ্লোবাল ফান্ড মিটিংয়ে যোগ দেন। জাস্টিন ট্রুডোর সাথে বৈঠকও করেন। বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আলোচনার মাধ্যমে একটি উপায় বের করতে একমত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ট্রুডোর পিতা পিয়েরে ট্রুডোর অসামান্য অবদান ও সমর্থনের স্বীকৃতিস্বরূপ ট্রুডোর কাছে ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার সম্মাননা প্রধানমন্ত্রী হস্তান্তর করেন। কানাডা সফর শেষে ১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে শরণার্থী ও অভিবাসন সংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে যোগ দেন। পাশাপাশি তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বির্ভিন্ন বিষয় নিয়ে মায়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও সুইডেনের প্রেসিডেন্ট জোহান সেনিডার আম্মান, কমনওয়েলথ মহাসচিব পেট্রিসিয়া জেনেট স্কটল্যান্ড, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়ার, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমসহ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের এক সভায় যোগ দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বানসহ প্রবাসী বাংলাদেশীদের সভায় যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী এ সফরকালে জাতিসংঘ থেকে ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ এবং ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ ও তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা উত্যুঙ্গে নিয়ে যাওয়া এবং নিজের ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এ সফর মাইলফলক হয়ে থাকবে।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু সফরসূচি নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন না। এর মধ্যেই তিনি দেশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন। দেশের প্রতিমুহূর্তের খবর নিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো ফাইলও তিনি অনুমোদন দিয়েছেন। অর্থাৎ একইসঙ্গে তিনি সফরের কর্মসূচি পালন করেছেন এবং দেশ পরিচালনা করেছেন। আমাদের দেশে সরকার প্রধানদের ক্ষেত্রে এ ধরনের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন এবং দৃষ্টান্ত স্থাপনের ঘটনা বিরল। বলা বাহুল্য, প্রধানমন্ত্রী দেশ ও জনগণের সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করার ব্রত নিয়েই রাজনীতিতে এসেছেন। এ কথা তিনি অতীতে বহুবার বলেছেন, এখনও বলছেন এবং এ নীতি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তাঁকে হত্যার বহু চেষ্টা হলেও আল্লাহর অশেষ রহমতে তিনি বেঁচে আছেন এবং তাঁর ব্রত থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি। প্রতিটি আঘাত তাঁকে আরও অবিচল ও দৃঢ় করেছে। যার প্রমাণ পাওয়া যায়, দেশ ও জনগণের উন্নয়নে আরও অধিক মনোনিবেশ এবং দক্ষতা ও একাগ্রতার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন থেকে। এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নিরলস প্রচেষ্টা আজ সারা বিশ্বে প্রশংসিত। শত বাধা-বিঘœ, সমস্যা ও সংকট দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা তুলে ধরে বিশ্ব নেতাদের কাতারে তিনি শামিল হয়েছেন। বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করা, নিম্নমধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার ক্ষেত্রে তাঁর অবিরাম পরিশ্রম বিশ্বদরবারে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পুরো বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দার কবলে, তখন প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্ব বাংলাদেশকে মন্দাবস্থা থেকে দূরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিবেচিত। এ কথা অনস্বীকার্য, যখনই জনগণ তাঁকে দেশ পরিচালনার সুযোগ দিয়েছে, তা কাজে লাগাতে তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের মতো ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশকে পরিচালনার মাধ্যমে সুদৃঢ় অর্থনীতির ভিতের উপর দাঁড় করানো সহজ কোনো কাজ নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত ও যথাযথ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশকে একটি আত্মনির্ভরশীল ও সক্ষম দেশে পরিণত করার পথ দেখিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ এখন অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সারা বিশ্বে উন্নয়নের মডেল হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। বাংলাদেশের এই অসামান্য অর্জনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের মতো উন্নয়নকামী দেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। এসব প্রতিকূলতা দৃঢ়ভাবে কাটিয়ে উঠে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দরকার, তা ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী দেখিয়েছেন। তবে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বহমান রাখতে গিয়ে নীতি ও পরিকল্পনায় কিছু ভুল-ভ্রান্তি থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এসব ভুল-ভ্রান্তি অর্থনীতির গতিকে অনেক সময় স্থবির করে দেয়। দেশের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই এক ধরনের মন্দাভাব বিরাজ করছে। আশানুরূপ বিনিয়োগ হচ্ছে না। সরকারের তরফ থেকে এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা চলছে। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর আপসহীন মনোভাব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দৃঢ়তা এবং কর্মপরিকল্পনা অর্থনীতিকে আরও বেগবান করবে। যেসব অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা রয়েছে, সেগুলোরও অবসান ঘটবে। জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়ন ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিতে তাদের বিভিন্ন সমস্যার দিকে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ দৃষ্টি দেবেন। এতে আগামী পাঁচ-ছয় বছরে দেশকে মধ্যআয়ের দেশে পরিণত করার সরকারের যে লক্ষ্য, তা পূরণ করা অসম্ভব হবে না। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী এদিকে বিশেষ মনোযোগ এবং প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেবেন।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। এদিন তিনি ৭০ বছরে পা দিয়েছেন। এ জন্মবার্ষিকী সামনে রেখে আমরা তাঁকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছি এবং মহান আল্লাহর দরবারে তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের দিকে আলোকপাত করলে দেখা যাবে, তিনি সবসময়ই জনগণের সেবক হয়ে কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন, ‘বাঙালি জাতি জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে যা পেয়েছে, অন্য কেউ তা দিতে পারে নাই। তিনি এ জাতির জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।’ লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী দেশের জন্য যেভাবে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তাঁর সহকর্মীদের অনেকেই তাঁর স্পিরিটের সাথে তাল মেলাতে পারছেন না। যেখানে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে গিয়েও প্রতিনিয়ত দেশের খোঁজ-খবর রাখেন এবং প্রয়োজনীয় কাজ করেন, সেখানে অনেক মন্ত্রী, সচিব তা করছেন না। দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এবং সচিব দেশের বাইরে ছিলেন। এতে মন্ত্রণালয়ের কাজে বিঘœ ঘটার কথা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। যদি এমন পরিস্থিতি হয়, তাহলে সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্ন, তা বাধাগ্রস্ত হওয়া স্বাভাবিক। আমরা মনে করি, মন্ত্রী ও সচিবদের এ ধরনের আচরণ বদলানো জরুরি। তাদের এ আচরণ পরিত্যাগ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং তার কাজের সাথে তাদের তাল মেলাতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে যে স্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যে রয়েছে, তা কাজে লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আদেশ-নির্দেশ যথাযথভাবে প্রতিপালন করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা আশা করি।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন