চলমান কঠোর বিধিনিষেধের ১২তম দিনে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর অবস্থা ছিল অনকেটাই স্বাভাবিক। মহাসড়কে ছিল যানবাহনের ভিড়। ঢাকার সড়কে ছিল যানজট। ফেরিঘাটে অব্যাহত ছিল ঢাকামুখি মানুষের ঢল। দোকানপাট ছিল খোলা। সড়কে দাপিয়ে চলেছে সিএনজি অটোরিকশা, টেম্পু, হিউম্যান হলারসহ শত শত প্রাইভেট কার। পুলিশের চেকপোস্ট ছিল অনেকটাই অকেজো। গাবতলী ও উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে মাইক্রো ও মিনিবাস। অথচ গতকালই বিধিনিষেধ আরও ৬ দিন বাড়ানো হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় ছিল গাড়ির ভিড়। বিমানবন্দর সড়কে সকাল থেকে ছিল যানজট। যা দেখে বোঝার উপায় ছিল না দেশে কোনো কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। পাড়া মহল্লায় দোকানপাট ছিল খোলা। সকালে বাজারগুলোতে ছিল ক্রেতাদের ভিড়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে শত শত সিএনজি অটোরিকশা বিনা বাধায় যাত্রী পরিবহন করে চলেছে। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে স্বাভাবিক সময়ের মতো টেম্পুও চলাচল করেছে। এর আগে গত সোমবার রাতেও যাত্রাবাড়ী থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত টেম্পু চলতে দেখা গেছে। রাজধানীর কমলাপুর, মালিবাগ, মৌচাক, রামপুরা, খিলগাঁও এলাকার অলি-গলিতে সব ধরনের দোকান খোলা দেখা গেছে। শুধু তাই নয় পাড়া মহল্লার ফাস্টফুডের দোকানও রাত পর্যন্ত খোলা থাকছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর পাইকারী বাজারে সকাল থেকে ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। সেখানে স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না। ধোলাইপাড় মোড়ে সকাল থেকেই তরুণ-তরুণীদের আড্ডা দিতে দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানান, ধোলাইপাড় মোড়ে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজার সামনে প্রতিদিন রাতে শত শত তরুণ-তরুণী আড্ডা দেয় পুলিশের চোখের সামনেই।
অন্যদিকে রাজধানীর গাবতলী ও উত্তরার আব্দুল্লাহপুর মোড় থেকে গতকাল দিনেও মাইক্রো ও মিনিবাসে করে ঢাকার বাইরে যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আব্দুল্লাহপুর মোড়ের পাশেই তেলের পাম্প। পাম্পের সামনেই কয়েকটি মিনিবাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাস গতকাল যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে। এসব পরিবহন যান মূলত উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাত্রী নিয়ে যেতে অপেক্ষা করে। যাত্রী পেলেই এসব পরিবহন আব্দুল্লাহপুর ছেড়ে যায়। পাম্পের বিপরীত পাশ থেকে টিকিট সংগ্রহ করে এসব পরিবহনে যাত্রীরা গন্তব্যে যান। যাত্রী পরিবহনে মিনিবাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাসের চালকরা ব্যতিক্রম এ কৌশল অবলম্বন করেন। কৌশলে যাত্রী পরিবহনে তাদের সহযোগিতা করেন আব্দুল্লাহপুর লোকাল বাস টার্মিনালের কয়েকজন।
সকালে একটি মিনিবাসে রংপুরে যেতে টিকিট কেটে মো. বিপুল বলেন, ৮০০ টাকায় টিকিট কেটে এ মিনিবাসে রংপুর যাচ্ছি। পারিবারিক কারণে জরুরিভাবে যেতে হচ্ছে। ভাড়া একটু বেশি নিলেও যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এটাই অনেক বড় ব্যাপার। বাড়িতে না যেতে পারলে খুব সমস্যা হতো। তিনি বলেন, অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি। এখন মিনিবাসটি ছাড়বে। তার মতো অনেকেই যাচ্ছেন এ পরিবহনে। এলেঙ্গা, টাঙ্গাইল কিংবা সিরাজগঞ্জ যেখানেই যান না কেন ভাড়া কাছাকাছিই।
এদিকে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন পরিবহনে অনেককে ঢাকায় ফিরতে দেখা গেছে। তবে তুলনামূলকভাবে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যাই বেশি। যারা ঢাকায় ফিরছেন, তারা বাসা-কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য গণপরিবহন পাচ্ছেন না। ফলে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। বাধ্য হয়ে চড়া দামে রিকশা বা ভ্যানে উঠতে হচ্ছে। রংপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন মো. সেলিম। তবে গুনতে হয়েছে দেড় হাজার টাকা। তিনি বলেন, এখন ফেনীতে যাব। কিন্তু কোনো গণপরিবহন পাচ্ছি না। এদিকে আবার অফিস খোলা। যেতে হবে দ্রæত। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি, কিন্তু পরিবহন সমস্যা মেটাতে পারছি না। কী যে করি কিছুই বুঝতে পারছি না। কর্মস্থলে যেতে না পারলে চাকরি থেকে বিদায় করে দিতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন