শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

মরণ ঘাতক ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার

| প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৬ এএম

ডেঙ্গুজ্বর ডেঙ্গু ভাইরাস দিয়ে হয়। বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর এই সময়টাতে বাংলাদেশে এই জ্বরটা অনেক বেশী হয়। গত বছর প্রকোপ একটু কম ছিল। এবছর করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রকোপও আমরা দেখতে পাচ্ছি। সরকারী হিসাবে এই বছর এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশী ডেঙ্গু রুগী সনাক্ত হয়েছে। এই রুগীদের বেশীর ভাগই সনাক্ত হয়েছে জুলাই মাসে এবং আক্রান্তদের প্রায় সবারই বসবাস রাজধানী ঢাকায়। ঢাকার বাহিরের রুগী মাত্র অর্ধশতের মত। এডিস ইজিপ্টি মশা এই ভাইরাস বহন করে। তাই ধরেই নেয়া যায় ঢাকা এবং এর আসেপাশে এই মশার বংশ বিস্তার হচ্ছে খুব দ্রুত গতিতে। এডিস মশা দিনের বেলা কামড়ায় এবং এর ফলেই ডেঙ্গুজ্বর হয়। অনেক সময় শুরুতে ডেঙ্গুজ্বর এবং সাধারণ ভাইরাস জ্বরের মধ্যে পার্থক্যই করা যায় না। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গুজ্বর মারাত্মক অবস্থা ধারণ করছে। ঠিকমত চিকিৎসা না করলে এ থেকে মৃত্যুও ঘটতে পরে। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে রক্তনালীর পানীয় অংশ টিসুতে চলে যায়। আবার কারও কারও রক্তক্ষরণও হয় এবং দ্রুত চিকিৎসা না করলে রোগী শকে চলে যায় এবং মৃত্যুবরণ করে।

ডেঙ্গু হতে পারে চার বার: আমরা জানি চার ধরনের ভাইরাস স্ট্রেইন দিয়ে ডেঙ্গুজ্বর হয়। এর যে কোন একটি দিয়ে সাধারন ডেঙ্গু জ্বরই বেশীর ভাগ মানুষের হয়। ডেঙ্গু হিমোরেজিক ফিভার খুব বেশি মানুষের হয় না। তবে পূর্বে যদি একধরনের ভাইরাস স্ট্রেইন দিয়ে ইনফেকশন হয় এবং পরবর্তীতে আবার ডেঙ্গুজ্বরের ভাইরাসের অন্য একটি স্ট্রেইন শরীরে ঢোকে তবে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার হতে পারে। ককেশিয়াস অঞ্চলে, মেয়েদের এবং যাদের বয়স ১২ এর নীচে তাদের ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বেশি হয়।

ফিভার ও হেমোরেজিক ফিভার: ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের প্রাথমিক শুরু এবং লক্ষণ সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের মতই। পাঁচ থেকে সাতদিন পর যখন জ্বর চলে যায় তখনই শুরু হয় ক্রিটিক্যাল সময়। এসময় রক্ত ঘন হয়ে হেমাটোক্রিট বাড়তে থাকে, রক্তচাপ কমতে থাকে। কারণ হেমোরেজিক ফিভারে রক্তনালীর পারমিএবিলিটি বেড়ে গিয়ে শরীরের টিসুকলায় রক্তের পানীয় অংশ চলে যায়। পেটে পানি-এসাইটিস, বুকে পানি-প্লুরাল ইফিউশন, চামড়ার নীচে পানি-ইডিমা, আবার কারও কারও রক্তপাতও হয়। দাঁতের মাড়িতে, অন্ত্রে, জননাঙ্গে রক্তপাত হতে পারে। পানি সরে যাওয়ার ফলে বা রক্তক্ষরণের ফলে রোগী অত্যন্ত দূর্বল হয়ে পরে, ঘামতে থাকে এবং একসময় শকে চলে যায়। এ সময়ে যদি ভালমত চিকিৎসা না করা হয় তবে মৃত্যুও হতে পারে। এই রুগীগুলিকে ভালমত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। ঘনঘন রুগীর রক্তচাপ, পালস্ প্রেসার, হার্ট রেট, ক্যাপিলারি রিফিল টাইম, প্রস্রাবের পরিমান, চামড়ার রং ইত্যাদি খেয়াল করতে হবে।

কিভাবে রোগ নির্ণয়: ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ডায়াগনসিসের জন্য রোগীর ইতিহাস, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ল্যাব টেস্ট করা হয়। হেমাটোক্রিট ও প্লাটিলেট কাউন্ট করলে কম পাওয়া যায়। প্লাটিলেট অনেক সময় ১০০০০ এর নিচে চলে আসে। রক্তে লিভার এনজাইম বেড়ে যায়। এক্স-রে, সিরাম ইলেকট্রোলাইট, হেমাটোক্রিট, সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা এবং প্রথম দিকে এন্টিজেন ও পরে এন্টিবডি পরীক্ষা করে সহজেই ডায়াগনসিসে পৌঁছানো যায়।

জটিলতা কি কি হতে পারে: ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের বেশ কিছু জটিলতা আছে। যেমনঃ (১) লিভার ফেইলিউর, (২) এনকেফালোপ্যাথি, (৩) খিঁচুনি, (৪) মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, (৫) মেটাবোলিক এসিডোসিস, (৬) ব্রেন ড্যামেজ, (৭) কমা এবং (৮) মৃত্যু।

চিকিৎসা করলে এই রোগ ভাল হয়: ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের চিকিৎসা সুনির্দিষ্ট নয়। রোগের লক্ষণ ও জটিলতার উপর চিকিৎসার ধরন ঠিক করা হয়। প্রথমে মুখে পর্যাপ্ত ইলে্েট্রালাইট সমৃদ্ধ পানি ও তরল খাবার- যেমন খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, স্যুপ, ফলের রস ইত্যাদি দিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয়। সাথে শিরায় ক্রিস্টালয়েড স্যালাইন যেমন-নরমাল স্যালাইন, রিংগারস ল্যাকটেট স্যালাইন, হার্টমেন স্যালাইন দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। এতে রক্তচাপ ঠিক হয়ে আসে ও হেমাটোক্রিট কমে স্বাভাবিকের কাছে থাকে। তবে যাদের এত কিছু করার পরও হেমাটোক্রিট বাড়ার বদলে কমতে থাকে তাদের পরে কলোয়েড বা রক্ত দিয়েও চিকিৎসা করতে হয়। শিরায় ফ্লুয়িড দিলে রক্তে পানি ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা হয়। মনে রাখতে হবে এই সময়ে ডেঙ্গু রুগীদের এসপিরিন জাতীয় ওষুধ কোন ভাবেই দেয়া যাবে না। তাতে রক্তক্ষরণ আরো বেড়ে যাবে। তবে জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যাবে। ল্যাব প্যারামিটার ও লক্ষণ অনুযায়ী অন্যান্য চিকিৎসা ঠিক করতে হবে।
ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের চিকিৎসা বাড়িতে রেখে করা সম্ভব নয়। অবশ্যই রুগীকে নিকটস্থ কোন হাসপাতলে নিয়ে যেতে হবে। সঠিক চিকিৎসা হলে বেশির ভাগ রোগীই সুস্থ হয় যায়।

ডা. মো. ফজলুল কবির পাভেল
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন