যশোর-খুলনা দেশের অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়কের একটি। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। যশোর সদর উপজেলার পদ্মবিলা থেকে শুরু করে অভয়নগর উপজেলার শেষ অংশ পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার রাস্তার বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ব্যস্ততম এ মহাসড়কে চলাচল করা আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার যানবাহনসহ পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে খুবই সমস্যা হচ্ছে। প্রায়ই এসব স্থানে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
প্রায় ৩০০ কোটি ব্যয়ে নির্মিত যশোর-খুলনা মহাসড়ক এখন মানুষের জন্য মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সদর উপজেলাধীন পদ্মবিলা থেকে অভয়নগর শেষ অংশ পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ কাজ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন লিঃ। আর পদ্মবিলা থেকে যশোরের নতুন খয়েরতলা মোড় পর্যন্ত আরও ১৯ কিলোমিটার রাস্তার কাজ শেষ করে মাহবুব এন্ড ব্রাদার্স। কিন্তু তমা কনস্ট্রাকশন লিঃ এর অংশের কাজ শেষ হতে না হতেই যানবাহনের চাপে প্রায় স্থানে রাস্তা দেবে গেছে। ফলে বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এ সড়ক দিয়ে সর্বোচ্চ ৩০ টন ধারণ ক্ষমতা বিশিষ্ট প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১২০০ যানবাহন চলাচলের কথা। কিন্তু সড়কটি অত্যন্ত ব্যস্ততম হওয়ার কারণে ১২০০ যানবাহনে অনেক বেশি চলাচল করছে।
আর নওয়াপাড়া থেকে ১০ চাকার ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানগুলো কয়লা হলে ৩৫ থেকে ৩৭ টন এবং সার বা সিমেন্ট হলে ৪০ টন লোড হয়। যা এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে। অর্থাৎ সড়কটি বেহালের জন্য আইনের তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত পণ্য বোঝায় করা ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যানগুলিকেই দায়ী করা হয়েছে। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত দ্রব্যের পাশাপাশি বিটুমিনের গ্রেড নিয়েও সচেতন মহলের প্রশ্ন রয়েছে।
যশোর বসুন্দিয়া ইউনিয়ানে কলেজ মাঠপাড়া এলেকার অসিম নামে এক বাসিন্দা জানান, দীর্ঘদিন ধরে যশোর-খুলনা মহাসড়কের বসুন্দিয়া মোড়ের রেল ক্রসিংয়ের দুই পাশের রাস্তা ভাঙা থাকার করণে প্রায় দিন সকাল ও সন্ধায় ঘণ্টা পর ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হয়। রাস্তা এতটাই বিপজ্জনক যে চার জন নিয়ে ভ্যান পার করা যায় না, ফলে যাত্রী নেমে পায়ে হেটে ভাঙা পার হয় বলে জানান তিনি। অভয়নগরের জামতলা এলেকার ভ্যান চালক কামরুল জানান, রাস্তা ভাঙার করণে চলাচল করা অনেক কষ্টকর। আবার যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে তো ভ্যান চালানো যায় না খানা-খন্দের করণে।
খুলনার বাসিন্দা মেহেদী হাসান, পেশায় ট্রাক চালক। তিনি বলেন, ওভার লোড নিয়ে আমরা সবাই সারা দেশ চলাচল করি। কোন স্থানে সমস্যা নেই, শুধুমাত্র অভয়নগরের রাস্তায় সমস্যা। তিনি আরও জানান পদ্মবিলা থেকে অভয়নগর শেষ অংশ পর্যন্ত পার হতে ৩০ মিনিট সময় লাগার কথা, কিন্তু রাস্তা নষ্ট হওয়ার কারণে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট লাগে। আবার প্রায় সময় ট্রাকের পাতি, রিং ও হ্যাঙ্গার ভেঙে যায়, ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।যশোর বসুন্দিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম খান রাসেল বলেন, যশোর-খুলনা মহাসড়কের বসুন্দিয়া মোড়ের রেল ক্রসিং এখন মরণ ফাঁদ। রাস্তা কাজ শেষ হতে না হতে বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়, যা পরে রিপিয়ার করা হয়েছে। কিন্তু এক মাস পরে আবার গর্ত হয়ে গেছে। এখনও কাজ বাকী রয়েছে। কাজের সময় মূল ঠিকাদার থাকে না, প্রতিষ্ঠানে পক্ষে স্থানীয় ঠিকাদার কাজ করে। তারা কিছু বলতে পারে না বলে জানান তিনি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে কিছু স্থানে বেশ রাস্তা খারাপ হয়েছে। তাছাড়া বৃষ্টির কারণে প্রায় ২ মাস কাজ বন্ধ। যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করা হবে। বিটুমিনের গ্রেড নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সারাদেশে একই বিটুমিনের গ্রেড মেন্টেন করা হচ্ছে। তবে তার মান বেশি ভাল না, তাই আরও উন্নত মানের বিটুমিন আনার জন্য কর্যক্রম চলছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন