শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য স্বতন্ত্র আইন দরকার

মো. জিল্লুর রহমান | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

ইসলামী ব্যাংকিং বিশ্বব্যাপী দ্রুত সম্প্রসারণের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ ও আস্থা সৃষ্টি করেছে। ইসলামী ব্যাংকিং বাংলাদেশেও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা শক্তিশালী অর্জন অক্ষুণ্ণ রেখেছে এবং এই ব্যবস্থাটি এখন বাংলাদেশের পুরো ব্যাংকিং শিল্পের ২৭ শতাংশেরও বেশি বাজারের অংশীদার। তবে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে প্রসার বাড়লেও দেশে এখনো ইসলামী ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট আইন নেই। ১৯৮৩ সাল থেকে দেশে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম চললেও ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক নামমাত্র একটি গাইডলাইন তৈরি করে দেয়, যার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে।

ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার সঙ্গে প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থার উদ্দেশ্যগত ও পদ্ধতিগত পার্থক্য রয়েছে। ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হচ্ছে সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও কল্যাণ। ফলে সামগ্রিকভাবে বড় শিল্প বা ব্যবসার পাশাপাশি, এসএমই খাত ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সহজে বিনিয়োগ সুবিধা পাচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকে লাভ-লোকসান অংশীদার ভিত্তিতে আমানত হিসাব পরিচালিত হয়। ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ কার্যক্রম শরিয়াহসম্মত নীতি অনুসরণ করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগের ইসলামিক ব্যাংকিং সেলের সাম্প্রতিক এক তথ্য অনুযায়ী, দেশি-বিদেশি মিলে দেশে মোট তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকের সংখ্যা ১০টি, আগে যা ছিল ৮টি। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও এনআরবি গ্লােবাল ব্যাংক নতুন করে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকে রূপান্তরিত হয়েছে। এর বাইরে ৮টি প্রচলিত ব্যাংকের ১৯টি ইসলামী ব্যাংকিং শাখা এবং ১১টি ব্যাংকের ১৭৮টি ব্যাংকিং উইন্ডো রয়েছে। সব মিলে দেশে মোট ব্যাংকের ১০,৭৬৭টি শাখার মধ্যে ইসলামী ব্যাংকিং শাখা রয়েছে ১,৫৫৮টি, যা মোট শাখার ১৪.৪৭ শতাংশ।

২০২১ সালের মার্চ প্রান্তিকে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা এবং এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানতের পরিমাণ ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা, যা মোট ব্যাংকিং খাতের সাড়ে ২৭ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এটি ছিল সাড়ে ২৫ শতাংশ। ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানতের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে পৌনে ১০ শতাংশ। একই সময়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। মোট ১১ লাখ ৬৩ হাজার ২৬ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ছিল ৩ লাখ ২২ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা, যা মোট ব্যাংকিং খাতের ২৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এটি ছিল ২৫.৬৯ শতাংশ।

দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোপূর্বে যে গাইডলাইন প্রণয়ন করে, তা যথেষ্ট নয়। ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থার পূর্ণ বিকাশের জন্য পৃথক আইন প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা ইসলামী ব্যাংকিং আইনের বিকল্প হিসেবে অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর নয়। ইসলামী ব্যাংকিং আইন হলে প্রকৃতপক্ষে শরিয়াহ পরিপালন করে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না। দেশে শরিয়াহ্ বিষয়গুলো দেখার জন্য সব ইসলামী ব্যাংকে আলাদা শরিয়াহ কমিটি আছে। এছাড়া সব ইসলামী ব্যাংকের জন্য সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে পৃথক ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোজ থাকলেও কোনো ইসলামী ব্যাংকিং বিভাগ নেই।

বাংলাদেশে ব্যাংক কোম্পানি পরিচালনার জন্য ১৯৯১ সালে ব্যাংক-কোম্পানি আইন পাশ করা হয়। এই আইনের মধ্যে শরিয়ার রেফারেন্স দেয়া হয়েছে বিভিন্ন ধারায়। কিন্তু দেশে ইসলামী ব্যাংকিং আইন নামে কোন সুনির্দিষ্ট আইন নেই। দেশের পুঁজি বাজারে ইসলামী ব্যাংক কীভাবে অংশে নেবে এবং ইসলামী সুকুক বন্ড সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন সার্কুলারে বলা আছে। এসব বাজার দিনকে দিন প্রসারিত ও বিকশিত হচ্ছে এবং এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন আইনি জটিলতা দূর করার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন থাকা দরকার। ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দেশের বিশাল পরিসরের ইসলামী ব্যাংকিং সুচারুভাবে দেখাশোনা ও পর্যবেক্ষণ করার জন্য ইসলামী ব্যাংকিং আইন থাকা দরকার। ‘অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে’ ব্যাংকগুলোর নীতি নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং রেগুলেশন এন্ড পলিসি ডিপার্টমেন্ট’ রয়েছে। কিন্তু তারা ইসলামী ব্যাংকগুলোর শরীয়াহ সংক্রান্ত বিষয়গুলোর কোন দিক নির্দেশনা দেয় না এবং এর জন্য যে শরীয়াহ বিশেষজ্ঞ দরকার, তাও তাদের নেই। অনেকের অভিমত, ইসলামী ব্যাংকগুলো মূলত কিছুটা শরিয়াভিত্তিক এবং কিছুটা গাইডলাইন থেকে নিয়ম-নীতি নিয়ে মিশ্রভাবে ব্যাংক পরিচালনা করছে। এজন্য ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য একটা কার্যকর ও সুনির্দিষ্ট আইন দরকার, যাতে করে কোন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি তৈরি হলে সেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যায়।

প্রত্যেকটি আইনের একটি নিজস্ব স্বকীয়তা আছে, নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য আছে এবং এটি আইন আদালতসহ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সব জায়গায় গ্রহণযোগ্য। আইন সকল নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক এবং এর বিধানগুলো অমান্য বা মানতে অস্বীকার করলে শাস্তি ভোগ করতে হয়। কিন্তু গাইডলাইনের ক্ষেত্রে তা বাধ্যতামূলক নয়। প্রত্যেকটি ইসলামী ব্যাংকের নিজস্ব শরীয়াহ কাউন্সিল আছে বটে কিন্তু তাদের অভিন্ন কার্যপরিধি নির্ধারণের জন্যও আইনি কাঠামো দরকার। তাছাড়া ইদানিং ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বিভিন্ন সেবার নামে ডিস্টরশন বা বিকৃতি ঘটছে বলে নানা মহলে আলোচিত হচ্ছে। ইচ্ছাকৃতভাবে যদি কোন ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিংয়ের ডিস্টরশন বা বিকৃতি ঘটায় সেটার শাস্তি কী, তা আইনি কাঠামো দ্বারা সংজ্ঞায়িত হওয়া দরকার। তাছাড়া যদি কোন ধরনের সমস্যা হয় কিংবা অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি তৈরি হয় তখন কোন আইনের অধীনে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে তা সুনির্দিষ্ট না থাকলে সমস্যা হতে পারে। যারা গ্রাহক তারা একটা আস্থার ভিত্তিতে শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকে যাচ্ছে, প্রচলিত ব্যাংকের চেয়ে এই ব্যাংকে তারা বেশি আস্থা পাচ্ছে বলেই তারা যাচ্ছে। কিন্তু আসলে সেটার যদি শক্ত আইনগত ভিত্তি না থাকে তাহলে তো কোন সমস্যা হলে গ্রাহকরাই সমস্যায় পড়ে যাবে। তখন বিশাল আস্থার সংকট তৈরি হবে এবং তার প্রভাব পুরো ইসলামী ব্যাংকিংয়ের উপর বর্তাবে।

ইরান ইসলামী আর্থিক ব্যবস্থার অন্যতম পথিকৃৎ। ১৯৭৯ সালে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে শাহ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার মাত্র চার বছর পরে ১৯৮৩ সালে ইসলামী বিপ্লবী সরকার সুদমুক্ত ব্যাংকিং আইনটি পাস করে, যা স্থানীয় ব্যাংকগুলিকে শরিয়াহ ভিত্তিক পণ্যের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা পুনর্নির্মাণ করতে বাধ্য করেছিল। প্রায় ৪০ বছর সময় ধরে ইরানি ব্যাংকিং শিল্প পুরোপুরি শরিয়াহ আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত রয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম ইসলামী ব্যাংকিংয়ের কেন্দ্র এবং এর অভিজ্ঞতা বিশ্ব ইসলামী সম্প্রদায়ের মধ্যে অনন্য উদাহরণ। অন্যদিকে, মালয়েশিয়ায় শরীয়াহভিত্তিক ও কনভেনশনাল দুটি ব্যাংকিং ব্যবস্থাই চালু আছে। শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংকিং আইন এবং ১৯৮৪ সালে ইসলামী ইনসুরেন্স আইন প্রনয়ণ করা হয়। চাহিদা ও সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে ইসলামী ব্যাংকিং আইন পরিমার্জন ও সংশোধন করে ইসলামিক ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস নামে নতুন আইন তৈরি করা হয়।

পাকিস্তানে ১৯৮১ সালের ১ জুলাই এক অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে সকল ব্যাংকে সুদবিহীনভাবে লাভ-ক্ষতির ভিত্তিতে আমানত সংগ্রহের নির্দেশ দেয়া হয়। একই সময় ১৯৬২ সালের ব্যাংকিং কোম্পানিজ অর্ডিন্যান্স সংশোধন করে সুদবিহীন সংগৃহীত আমানতকে বিনিয়োগ করার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া, ইসলামী আর্থিক ব্যবস্থাকে সুসংগঠিত করার জন্য ১৯৮০ সালেই আরও কিছু আইনকে সংশোধন ও পরিমার্জিত করে যুগোপযোগী করা হয়। অন্যদিকে সৌদি আরবে ‘সৌদি আরাবিয়া মনিটারি এজেন্সি’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা পালন করে, যা সে দেশের ১৯৩১ সালের এক রাজকীয় ফরমান বলে গঠিত হয় এবং তা বিভিন্ন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সংশোধন করা হয়। সৌদি আরবে সমস্ত ব্যাংকিং কার্যক্রমে শরীয়াহভিত্তিক পরিচালিত হওয়ার নিয়ম থাকলেও কিছু বিচ্যুতি লক্ষ্য করা যায় এবং সে সমস্ত বিষয় দেখাশোনা ও আদালতে যাওয়ার আগে ‘সৌদি আরাবিয়া মনিটারি এজেন্সি’র অধীন ‘ব্যাংকিং ডিসপিউটস সেটেলমেন্ট কমিটি’ সমাধান করে থাকে। যুক্তরাজ্যে ইসলামিক ফিনান্স পরিচালিত প্রাথমিক আইন ফিনান্স অ্যাক্ট ২০০৫ এ সংশোধিত হিসাবে ফিনান্স অ্যাক্ট ২০০৭ প্রণীত হয়েছে। ফিনান্স অ্যাক্ট ২০০৫ ইসলামিক ফিনান্স লেনদেনকে বিকল্প অর্থ ব্যবস্থারূপে চিহ্নিত করে এবং ইসলামী ফিনান্স ইন্সট্রুমেন্টগুলি কাজ করার ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত সরল পদ্ধতি গ্রহণ করে প্রচলিত আইনী পরিবেশ। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন আইনি কাঠামো নেই। তবে ১৯৯৭ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা ইসলামিক ফিনান্স সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে যখন মুদ্রার নিয়ন্ত্রকের অফিস (ওসিসি) গৃহঋণের জন্য ইজারাহ কাঠামোকে অনুমোদন দিয়েছিল কারণ এটি প্রচলিত সুরক্ষিত রিয়েল এস্টেট ঋণদানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও কার্যকর। ইসলামী ব্যাংক চালু হওয়ার এক বছর আগে ‘ইসলামী ব্যাংকিং আইন’ চালু করেছিল থাইল্যান্ড। অথচ বাংলাদেশে গত প্রায় ৩৮ বছর ধরে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসলেও এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত আইন চালু করা যায়নি। তবে ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য জারিকৃত ২০০৯ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইনটি ২০১১ সালে সংশোধন করা হয়। ২০১১ সালে সংসদের অর্থবিষয়ক স্থায়ী কমিটির কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি খসড়া আইন চূড়ান্ত করে জমা দিয়েছিল। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে এখনও তা আলোর মুখ দেখেনি। তবে ১৬ জুন ২০১৬ হোটেল সোনারগাঁওয়ে ইসলামিক ব্যাংকস কনসালটেটিভ ফোরাম (আইবিসিএফ) আয়োজিত ‘ইসলামিক ব্যাংকিং’ শীর্ষক এক সেমিনারে বর্তমান অর্থমন্ত্রী দেশের ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর বিকাশের জন্য একটি স্বতন্ত্র ইসলামিক ব্যাংকিং আইন তৈরির আশ্বাস দিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, অনেক আগে আইবিসিএফ ইসলামিক ব্যাংকিং আইন করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিল। বিভিন্ন কারণে তা সম্ভব হয়নি। সরকার মালয়েশিয়ার ইসলামিক ব্যাংকিং আইনের আলোকে দেশের ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোর বিকাশের জন্য ইসলামিক ব্যাংকিং আইন করার চিন্তা করছে।

একেক দেশে ইসলামী ব্যাংকিং একেকভাবে বেড়ে উঠেছে। ইরান, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়ায় এটি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিকশিত হয়েছে। তারা শুরুতেই আইন করেছে। অথচ, একই সময়ে বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং শুরু করলেও আজও আইন হয়নি। মালয়েশিয়ার ব্যাংকিং খাতের মোট ৩০ শতাংশ, আর বাংলাদেশে ২৭ শতাংশ ইসলামী ব্যাংকিং। শরিয়াহর কথা হলো, তোমরা ব্যবসা করো, কিন্তু সুদে অর্থ লেনদেন করো না। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে নিজেদের যুক্ত রেখেছে। বহু মানুষ শরিয়াহভিত্তিতে অর্থনৈতিক জীবন চালাতে চায়। সে কারণেই এখানে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রসার ঘটছে। মানুষের বিশ্বাস, এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ গ্রাহকই মুসলিম। মালয়েশিয়ায় উল্টো, ৭৫ শতাংশ গ্রাহকই অমুসলিম। কারণ তাঁরা দেখেছে এখানে স্বচ্ছতা আছে, আস্থা আছে কিন্তু কোনো অনিয়ম নেই।

মুসলিম দেশগুলোতে ইসলামিক ব্যাংকের ব্যাপক চাহিদা আছে। কোরআনের নিয়ম মেনে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেন করতে চায় তারা সাধারণত ইসলামিক ব্যাংকগুলোতে লেনদেন করে। ব্যাংকিং করতে গেলে কিছু সুবিধা অসুবিধা সামনে চলে আসে। আইন থাকলে সেগুলো সহজে সমাধান করা যায়। পৃথক আইনের অনুপস্থিতিতে যে ইসলামী ব্যাংকগুলো সুবিধা পেয়েছে এমন নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রেই তারা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছে। এমতাবস্থায়, ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য আলাদা আইন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
লেখক: ব্যাংকার ও কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack Ali ৭ আগস্ট, ২০২১, ১:৪০ পিএম says : 0
দেশ চলে কাফেরের আইন দিয়ে সেখানে ইসলামিক জীবন যাপন করা সম্ভব নয়........আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ চালালে সুদের কারবার হতো না দেশের কেউ গরীব থাকত না
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন