আওয়ামী যুবলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে। শনিবার রাতে সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
অব্যাহতির বিষয় ব্যারিস্টার সুমন বলেন, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ আমাকে কমিটিতে নিয়েছিলেন। তিনিই যদি মনে করেন আমাকে বাদ দিলে দলের ভালো হবে, তাহলে সাংগঠনিক এ সিদ্ধান্ত মেনে নেব। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে আজীবন দলের ভালোর জন্য কাজ করে যাব।
জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি দলীয় কর্মসূচিতে সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেনের ‘শুভ শুভ দিন শেখ কামালের জন্মদিন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ব্যারিস্টার সুমন এর সমালোচনা করে এটাকে সরকারি বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ করে একটি ভিডিও বার্তা ফেইসবুকে প্রকাশ করে। এর প্রেক্ষিতে যুবলীগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
ওসির স্লোগান, ব্যারিস্টার সুমনের ভিডিও বার্তা, যুবলীগ থেকে অব্যাহতি ও তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। বিষয়টিকে নানাভাবে দেখছেন নেটিজেনরা। ব্যক্ত করছেন তাদের প্রতিক্রিয়া।
সাংবাদিক আনোয়ার সাদী লিখেন, ‘ব্যারিস্টার সুমন আর যুবক নেই আই মিন যুবলীগে নেই। একটি ভিডিও বার্তা যুবলীগে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ইতি টেনে দিয়েছে বলে জানা গেছে। তাকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শরীয়তপুরে একটি প্রোগ্রামে স্থানীয় ওসি জয় বাংলা শ্লোগান দেন। ব্যারিস্টার সুমন তার সমালোচনা করে ভিডিও বার্তা দেন। যুবলীগ তার কর্মকাণ্ডকে সংগঠনের শৃঙ্খলা বিরোধী বলে মনে করেছে। যুবলীগের সঙ্গে অনেকেই একমত। তারা হাইকোর্টর একটি রায়ের রেফারেন্স দিয়ে বলছেন জয় বাংলা জাতীয় শ্লোগান। কাজেই যেকোনো অনুষ্ঠান শেষে যে কেউ এই শ্লোগান দিতে পারে। তাদের মতে ব্যারিস্টার সুমনের লাইভ গোলমেলে। যারা আওয়ামী লীগ বা যুবলীগ একদমই দেখতে পারেন না , তাদের ব্যাখ্যা ভিন্ন। এসবই রাজনীতির কথা। আমি সেই আলোচনায় গেলাম না। আমি ভিন্ন একটা কথা বলতে চাই। ব্যারিস্টার সুমনের জনপ্রিয়তা এসেছে ফেইসবুকে তার লাইভ থেকে, তার বক্তৃতা থেকে। জনপ্রিয়তা তাকে জননেতা হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। এ জন্য তিনি নিশ্চয়ই তাঁর লাইভ করার সাংবাদিকসুলভ গুনের কাছে ঋণ স্বীকার করেন। যে লাইভ জনাব সুমনকে নেতা বানালো, সেই লাইভ আবার তাকে নেতা থেকে অব্যাহতি দিলো- এমন কথাই অনেকে বলছেন। যাহোক, আমরা সাংবাদিকরা সব সময় বলি, একটা লাইভ তোমার ক্যারিয়ার জ্বল জ্বল করে দিতে পারে। আবার একটা লাইভ তোমার ক্যারিয়ার জ্বালিয়ে দিতে পারে। যাহোক, বন্যরা বনে সুন্দর লাইভ সাংবাদিকদের হাতে।’
মারুফ খান লিখেন, ‘অদ্ভুত সব ব্যাপার শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলো ওসি। যার কিনা শাস্তি হওয়ার কথা! কিন্তু উল্টো যুবলীগ থেকে পদ হারালেন সুমন সাহেব। উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ।’
শাহাদাৎ পাটওয়ারীর প্রশ্ন, ‘কে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে ওসি না ব্যারিস্টার সুমন? কাকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত ছিলো?’
সাজ্জাদ হোসেনের মন্তব্য, ‘যতদিন তেল দিতে পেরেছো ততদিন সম্মান পেয়েছো, তেল মারা থেকে সরে এসে সমালোচনা করেছ সম্মানটাও কেড়ে নিলো। তাই তেল মারার আগে ভেবে চিন্তে তেল মারা উচিৎ।’
যুবলীগের এই সিদ্ধান্তকে অগ্রহণযোগ্য দাবি করে শাফায়েত হোসাইন লিখেন, ‘সত্য কথার ভাত নেই, যুবলীগের এই ধরনের সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য এবং পক্ষপাত দুষ্ট। ওই ওসির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আওয়ামী লীগ অনেক ঐতিহ্যবাহী দল। এই দলের স্লোগান দেওয়ার জন্য সরকারি কর্মকর্তার প্রয়োজন নেই। এই ধরনের স্লোগান জনপ্রশাসনে আইনের অবক্ষয় ঘটাবে।’
অ্যাডভোকেট ফিরোজ আলম লিখেন, ‘সত্য কথা বলার জন্য নৈতিক সাহস থাকতে হয়। ব্যারিস্টার সুমন ভাইয়ের সেই নৈতিক সাহস আছে। এমন সাহসী বীরদের পদচারণায় দূর হয়ে যাক দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের সকল অন্যায়। অপরাধজনক বন্দীদশা থেকে মুক্তিপাক দেশের গনতন্ত্র এবং বাকস্বাধীনতা।’
যুবলীগ থেকে অব্যাহতি দেয়ার পর ব্যারিস্টার সুমনের দেয়া প্রতিক্রিয়া নিয়ে নীরা হক লিখেন, ‘কথা বলার আগে ভাবা উচিত। কারণ আপনার দল কতটুকু সমালোচনা নিতে পারবে, সেটা আপনার বোঝা উচিত।’
সাইফুল ইসলাম লিখেন, ‘তার জন্য রাজনীতি নয়, ফেইসবুক লাইভ আর টকশোই ভালো।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন