লোহাগড়া উপজেলায় মধুমতি নদী ভাঙনে নদী তীরবর্তী মাকড়াইল, চরবকজুড়ি, তেতুলিয়া, লঙকারচর ও ঘাঘা গ্রামের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অর্ধশত বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড এসব ভাঙন পয়েন্টে গত বছরে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্প গ্রহণ করলেও চলতি বর্ষা মৌসুমের আগে কাজ শেষ না করায় নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
গত শুক্রবার নদী ভাঙন কবলিত তেতুলিয়া-চরবকজুড়ি এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়-তেঁতুলিয়া গ্রামটি কয়েক বছর আগেই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। গ্রামের সচ্ছল বাসিন্দারা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে গেলেও দরিদ্র জনগোষ্ঠী পাশের কৃষি জমিতে বসত বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করলে সেখানেও ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে ওই গ্রামের হারুন মোল্যা, ইউনুস শেখ, সাহেদ আলী, সুরুজ মোল্যা, জব্বার মোল্যা ও আকিরণ বেওয়ার বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া একইস্থানে আরও কয়েকটি বসতবাড়ির বাসিন্দারা ভাঙন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। যেকোন সময়ে ওইসব বাড়ি নদীতে ভেঙে যেতে পারে। ওই গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ মোল্যা জানান, বসতবাড়ি ছাড়াও অনেক কৃষি জমি নদীতে ভেঙে গেছে। বারবার বসতবাড়ি স্থানান্তর করা দরিদ্র কৃষক পরিবারের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাদের অন্তরের চাপা কষ্ট দেখার কেউ নেই।
এদিকে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে মাকড়াইল, শিয়রবর হাট সংলগ্ন এলাকা ও ঘাঘা গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে মধুমতি নদী ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু ওই স্থানে নদীভাঙন রোধের কাজ সময় অনুযায়ী শেষ না করার ফলে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। মাকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ার পর বালির বস্তা ফেলে কোন রকমে টিকিয়ে রাখা হয়েছে।
শিয়রবর এলাকার মধূমতি নদী ভাঙন প্রতিরক্ষা কমিটির সভাপতি সৈয়দ আশরাফ আলী জানিয়েছেন, শিয়রবরে নদীভাঙন রোধে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। অথচ বর্ষা মৌসুমের আগে ভাঙন রোধে কাজ শেষ পর্যায়ে থাকার কথা থাকলেও ২৫% কাজ হয়েছে কিনা সন্দেহ। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রবল ¯্রােতের কারণে আবারও ভাঙতে শুরু করেছে। ঠিকাদারের গাফিলতি আর নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবহেলার কারণে শেষ সম্বল হারাতে বসেছে এলাকাবাসী। তারা নদী ভাঙন রোধে কাজ দ্রæত শেষ করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেকে অনুরোধ জানালেও তারা আমলে নিচ্ছে না। অপর নদী ভাঙন কবলিত ঘাঘা গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সেক্রেটারী আসলাম হোসেন টুটুল জানান, নব্বই হাজার জিও ব্যাগ ফেলার কথা থাকলেও ফেলা হয়েছে মাত্র ২০ থেকে ২১ হাজার ব্যাগ। কাজের সাইডে জিও ব্যাগ রয়েছে অথচ তা ভাঙন পয়েন্টে বসানো হচ্ছে না। এলাকাবাসী জরুরি ভিত্তিতে নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জল কুমার সেন জানান, কাজের মেয়াদ তিন বছর। তাছাড়া বর্তমানে ফান্ড নেই, তাই কাজ বন্ধ। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে সাধারণত কাজ করা হয় না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন