শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

ডেঙ্গু ভয়াবহতায় জরুরি উদ্যোগ নিন

ডা: মাও: লোকমান হেকিম | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

রাজধানীতে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এখন শুধু রাজধানী নয়, গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বড় শহরগুলিতেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর খবর পাওয়া গেছে। বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীর বেশির ভাগই করোনা ভাইরাস ও ডেঙ্গু আক্রান্ত। প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। বেডে জায়গা না পেয়ে ফ্লোরে শুয়েও চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। ফলে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেই এখন উপচেপড়া ভিড়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি বেশ কয়েকজন মারা যাওয়ায় রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাবে দেশের মানুষ এমনিতেই দিশেহারা। উদ্বেগ- উৎকন্ঠা নিয়ে ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে তাদের। এমন পরিস্থিতিতে নতুন বিপদ ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দেখা দিয়েছে। এডিসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মশার উৎপাতে বাসাবাড়িতে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে।

করোনা ও ডেঙ্গু- এই দুইয়ে সাধারণ মানুষ মহাবিপদে পড়ে উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকার বাসিন্দাদের বিপদ যেন পিছু ছাড়ছে না। এবার অন্তত ১০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশী মূলত রাজধানীতেই। পরিসংখ্যান বলছে, ডেঙ্গু রোগীর ৯৯ শতাংশ ঢাকায়। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, দেশে করোনার ভারতীয় ধরন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছেই। প্রতিদিনই আড়াই শ’র কাছাকাছি মানুষ মারা যাচ্ছে। মাত্র চার দিনেই করোনা আক্রান্ত হয়ে এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দিকে চলতি আগস্টের প্রথম ছয় দিনেই এক হাজার ৪৫৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশের হাসপাতালগুলোতে এক হাজার ১০ রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে ৯৭২ আর ঢাকার বাইরে ৩৮ জন অন্য বিভাগে। ১ জানুয়ারী থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত চার হাজার ১১৫ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। গত জুলাইয়ে বছরের সর্বোচ্চসংখ্যক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।

ডেঙ্গু মশাবাহিত একটি রোগ। এডিস প্রজাতির মশার কামড়ে মানবদেহে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হয়। অথচ মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ ঢাকাবাসী। নগরীর চার পাশের ময়লা-আবর্জনা স্তুপ থাকা, নোংরা ড্রেন পরিস্কার না থাকায় চলতি বর্ষা মৌসুমে মশার প্রজনন বেড়ে গেছে। করোনার মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। অথচ নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে এবং মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করলেই মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কিন্তু নগরী পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন রাখা যাদের দায়িত্ব তারা কি তাদের সেই কর্তব্যকাজ সঠিক ভাবে করতে পারছেন? করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে নানা অব্যবস্থাপনা থাকলেও সরকার অন্তত গণটিকার ব্যবস্থা করছে। জনসাধারণকে গণটিকা দেয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু খোদ রাজধানীতে প্রতি বছর এডিসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মশার উৎপাতে মানুষ অতিষ্ঠ হলেও সমাধানে সংশ্লিষ্টদের শুধু আশ্বাস ছাড়া কোনো কার্যকর উদ্যোগ কারো নজরে আসে না। সিটি কর্পোরেশন মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে ভবন মালিকদের জরিমানা করে। কিন্তু রাজধানীতে অসংখ্য ড্রেন, নর্দমা, খানাখন্দ আছে, বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে এডিসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মশার জন্ম এবং বিস্তার হচ্ছে। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের যেন মাথাব্যথা নেই। সিঠি কর্পোরেশনের অধীনে শত শত ড্রেন- নর্দমা আছে। যেগুলো মশার বিস্তার ঘটাচ্ছে। এজন্য কাউকে জবাবদিহির আওতায় আনতে দেখা যায় না। করোনা সংক্রমণে উচ্চহার এবং ডেঙ্গুর ভয়াবহতা মিলে সৃষ্ট সঙ্কটের পেছনে সরকারের উচ্চপর্যায়ের অসমন্বয় ও সিদ্ধান্তহীনতা এবং অপরিকল্পিত উন্নয়নই মূলত দায়ী।

রাজধানীতে অনেক নর্দমা, খাল, খানাখন্দ, ড্রেন পড়ে থাকলে সিটি কর্পোরেশন সঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করে যখন-তখন বাসাবাড়িতে হানা দিয়ে জরিমানা করছে। এটিই কি সমাধান? সময় ক্ষেপণ করলে করোনার মতো ডেঙ্গুও মহামারিতে রূপ নেয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। তাই ডেঙ্গু যেন মহামারিতে রূপ না নেয়, সেজন্য সিটি কর্পোরেশনের এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া অতীব জরুরি। আল্লাহ না করুন, যদি ডেঙ্গুও মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের তা সামাল দেয়ার সামর্থ্য কতটুকু রয়েছে করোনাকালে তা প্রকাশ হয়ে পড়েছে। তাই এখনো যতটুকু সময় রয়েছে তার সদ্ব্যবহার করতে হবে। তাই আমরা আশা করব, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রোধে মশা নিধনের বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মশা নিধনের কার্যকর ও উন্নত ওষুধ ব্যবহার করা হবে। প্রতিবছরই যেহেতু ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়, ফলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আগাম প্রস্তুতির বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় নিতে হবে।

চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবাইল- ০১৭১৬২৭০১২০

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন