সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজার সড়কে ১শ’১১ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত হচ্ছে ৯টি পিসি গার্ডার সেতু। দোয়ারাবাজার উপজেলা সীমান্তে একটি ছাড়া অন্য ৮টি সেতু ছাতক উপজেলা অভ্যন্তরে নির্মিত হচ্ছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের গোবিন্দগঞ্জ থেকে শুরু করে দোয়ারাবাজারের নৈনগাঁও গ্রাম পর্যন্ত ৯টি সেতুর মধ্যে দেড় বছরে কাজ শেষ হয়েছে ৬টির। চার লেন বিশিষ্ট দুইটি ও দুই লেনের একটি সেতুর কাজ চলমান রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেতুগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হলে ছাতক ও দোয়ারাবাজার দুই উপজেলার মানুষের যোগাযোগের দিক দিয়ে অনেকটা ভোগান্তি দূর হবে। চরম দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে এ অঞ্চলের মানুষ। সড়কে নির্বিঘ্নে চলতে পারবে যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন।
জানা যায়, সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের গোবিন্দগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্ট থেকে ১৩ কিলোমিটার উত্তরে ছাতক পৌরশহর। ছাতক উপজেলাটি শিল্পনগরী হিসেবে খ্যাত। সুরমা নদীর দু’তীরের বসবাসকারীদের নিয়ে ছাতক পৌরসভা গঠিত হয়েছিল। পৌরসভা ও সুরমা নদীর দু’তীরে রয়েছে একাধিক শিল্পকারখানা। সুরমা নদীর অপর পাড়ে লাফার্জ হোলসিম এলাকা থেকে দোয়ারাবাজার উপজেলা সদরের সাথে সংযুক্ত একটি সড়ক। গোবিন্দগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত সরু ব্রিজ ও দোয়ারাবাজার সড়কে একাধিক বেইলী ব্রিজ ছিল। চলাচল অনুপযোগী ব্রিজগুলো দিয়ে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে যানবাহনে চলাচল করতেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে জামিল ইকবাল লিমিটেড, রানা বিল্ডার্স লিমিটেড ও জনজেবী প্রাইম লিমিটেড নামে তিন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পৃথক তিনটি প্যাকেজে শুরু হয় সেতু নির্মাণের কাজ। তৈরি করা হয় যানবাহন চলাচলের জন্য বিকল্প বেইলী ব্রিজ ও এ্যাপ্রোচ সড়ক। দীর্ঘ ভোগান্তির পরে হলেও সড়কে সেতু নির্মিত হওয়ায় খুশি এ অঞ্চলের মানুষ।
সুনামগঞ্জ জেলা রড-সিমেন্ট মার্চেন্ট গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কয়েছ আহমদ বলেন, গোবিন্দগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত ব্রিজগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এ সড়কে মালামাল পরিবহনে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হতো। তিনি বলেন, সড়কে নির্মাণাধীন সেতুগুলোর কাজ শেষ হলে সড়ক পথে পরিবহনে ঝুঁকি থাকবে না। উন্নত হবে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
ছাতক প্রেসক্লাব সভাপতি ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন তালুকদার বলেন, দুই আড়াইশ বছরের ঐতিহ্য এখানের বালু ও পাথর ব্যবসা। এ ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর ভর করে এখানের অর্থনীতির চাকা ঘুরে। এছাড়া বিভিন্ন কল-কারখানা গড়ে উঠায় এক সময় ছাতক শহরটি সারা দেশে বেশ পরিচিতি লাভ করে। সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যে এ উপজেলা থেকে সরকার অধিক রাজস্ব পায়। তিনি বলেন, ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত সড়কটি দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল। সড়কের ব্রিজগুলো ছিল নড়েবড়ে অবস্থায়। বর্তমানে এ সড়কে এক সাথে ৬টি ও দোয়ারাবাজার সড়কে আরও ৩টি সেতু নির্মাণসহ সুরমা নদীর উপর নির্মানাধিন সেতুটি উদ্বোধন হলে ছাতক-দোয়ারাবাজারবাসী যোগাযোগ ক্ষেত্রে উন্নতি হবে।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ছাতকের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী নজরুল ইসলাম জানান, জামিল ইকবাল লিমিটেডের প্যাকেট -১ এর আওতায় তকিপুর থেকে সড়কের মাধবপুর পর্যন্ত দুই লেনের চারটি সেতু, রানা বিল্ডার্স লিমিটেডের প্যাকেজ-২ এ পেপারমিল ও রহমত ভাগ এলাকায় চার লেনের দুইটি সেতু, প্যাকেজ-৩ এ জনসেবী প্রাইম লিমিটেডের সুরমা নদীর অপারে টেঙ্গারগাঁও, নৈনগাঁও ও লক্ষিভাউর নামক স্থানে দুই লেনের তিনটি সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে তকিপুর, হাসনাবাদ, মাধবপুর, টেঙ্গারগাঁও, লক্ষিভাউর ও নৈনগাঁও ৬টি সেতুর মূল কাজসহ এ্যাপ্রোচের কাজও প্রায় শেষ হয়েছে। শুধু রঙের কাজ বাকী আছে। এসব সেতু দিয়ে প্রতিদিন চলছে যানবাহন। এছাড়া গড়গাঁও, পেপারমিল ও রহমতভাগের তিনটি সেতুর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আগামী ২০২২ সালের জুনের মেয়াদের মধ্যে তিনটিসহ মোট ৯টি পিসি গার্ডার সেতুর যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন