শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

চোরাচালানীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক ও আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : গেল মাসেই উদযাপিত হয়েছে মুসলমানদের ঈদ; আর এখন চলছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজার আয়োজন। এ সময়ে মানুষের বাড়তি চাহিদার যোগান দিতে অসাধু ব্যবসায়ী, চোরাকারবারী ও পাচারকারীরা খুলনাঞ্চলে প্রতিদিনই অবৈধ পথে আনছে ভারতীয় কাপড় ও পণ্যদ্রব্য সামগ্রী। মাঝে মধ্যে কোস্টগার্ড অভিযান চালিয়ে দু’একটি চালানের মালামাল জব্দ করলেও চোরাচালানীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে একের পর এক চোরাচালান কার্যক্রম চালিয়েই যাচ্ছে তারা। স¤প্রতি ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোস্টগার্ড মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে মালামাল জব্দ করলেও নীরব ভূমিকায় রয়েছে পুলিশ। সর্বশেষ, গত শনিবার সকালে খুলনার খানজাহান আলী সেতু (রূপসা ব্রীজ) টোলপ্লাজা এলাকায় ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা মূল্যের অবৈধ ভারতীয় শাড়ী-কাপড়ের চোরাচালান জব্দ করে কোস্টগার্ড। তবে চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি বলে জানিয়েছিলেন কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা এম ফরিদুজ্জামান খান। প্রতি মাসে গড়ে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় পণ্যদ্রব্য ও শাড়ী-কাপড় জব্দ করা হচ্ছে। তবে চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করতে পারছে না কেউ। এর আগে, গত ২১ এপ্রিল রাতে এক কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় বিভিন্ন ধরনের কাপড় ও ২০০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছিল। এ সময় পাচারকারীরা পালিয়ে যায়। তবে ট্রাকসহ চালক শহীদুল ইসলাম নামে একজনকে আটক করা হয়। এটা সর্বশেষ চোরাই পণ্যদ্রব্য বহনকারী গ্রেফতারের ঘটনা।
সূত্রে জানা গেছে, চোরাচালানীদের দৌরাত্ম্যে খুলনাঞ্চলে ভারতীয় অবৈধ পণ্যদ্রব্যে সয়লাব। গত ঈদের রেশ না কাটতেই আসন্ন দুর্গা পূজার মার্কেট ধরতে চোরাচালানীরা এখন বেপরোয়া। সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্ত এলাকা থেকে অবৈধ পথে আসা শাড়ি, থ্রী-পিচসহ বিভিন্ন মালামাল খুলনার রূপসা সেতুতে এসে জব্দ হচ্ছে কোস্টগার্ডের অভিযানে। তাও গ্রেফতার হচ্ছে না অবৈধ পণ্যদ্রব্য বহনকারীরা; মুখোশ উন্মুক্ত হচ্ছে না চোরাকারবারীদের। গোয়েন্দা সূত্রমতে, এই সেতুর উপর দিয়েই ভারতীয় অবৈধ চোরাচালানের মালামাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হয়। সাতক্ষীরা থেকে এসব মালামাল পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে খুলনার রূপসা সেতু পর্যন্ত নির্বিঘেœই চলে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা হয়ে খুলনা থেকে ভারতীয় অবৈধ পণ্যদ্রব্য পৌঁছানোর গন্তব্য পর্যন্ত এলাকার পুলিশের সাথে চোরাকারবারীদের সাথে সখ্যতা রয়েছে। সে কারণেই ভারতীয় অবৈধ পণ্যদ্রব্য জব্দ ও চোরাকারবারীদের আটকে অনীহা রয়েছে তাদের। যদিও অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি পুলিশের। খুলনা জেলা পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্যা বললেন, ডুমুরিয়া থানা পুলিশ চোরাচালানীদের গ্রেফতারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে জেনেছি। পুলিশের সাথে চোরাচালানীদের কোন সখ্যতা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই অভিযান চালানো হবে।
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন মংলার জোনাল কমান্ডার মোঃ মেহেদী মাসুদ বলেন, অভিযানের পূর্বেই চোরাকারবারীরা পণ্যদ্রব্য সামগ্রী ফেলে পালিয়ে যায়। আবার অবৈধভাবে আনা ভারতীয় শাড়ী, থ্রী-পিচ, থানকাপড়, স্যুটিং-শার্টিংসহ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী বাসের ভেতর বা ছাদে করে নিয়ে যায়। অভিযানে অবৈধভাবে আনা ভারতীয় মালামাল জব্দ করার পর মালিক খুঁজে পাওয়া যায় না। গ্রেফতারের ভয়ে মালামালের দাবিও কেউ করে না। এ অবস্থায় মালামালগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় জব্দ দেখানো হয়। চোরাকারবারীদের গ্রেফতারে কোস্টগার্ড আন্তরিক। চোরাকারবারীরা দেশ ও জনগণের শত্রæ; তাদের সাথে কোস্টগার্ডের কোন সখ্যতা নেই। কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট এম ফরিদুজ্জামান খান বলেন, স¤প্রতি খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট এলাকায় অবৈধ ভারতীয় পণ্যের চোরাচালানী বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থার কারণে টহল জোরদার করা হয়েছে। এরফলে কয়েকটি সফল অভিযান পরিচালিত হয়েছে। কয়েকটি চক্র অবৈধভাবে ভারতীয় কাপড়ের চোরাচালানী শুরু করেছে। তাদের প্রতিরোধে কোস্টগার্ড নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
সূত্র মতে, চোরাকারবারীদের কারণে দেশীয় পণ্যদ্রব্য ও বস্ত্রের বাজার হারাচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় দেশীয় কাপড় বিক্রির পরিবর্তে চোরাইপথে আসা ভারতীয় জামা কাপড় বিক্রি করছেন। ফলে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে, দেশীয় বস্ত্রের বাজার হারাচ্ছে শিল্প মালিকরা। আবার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য ও স্থল বন্দর এলাকার বিভিন্ন সেক্টরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিশাল চালান পাচার করার সুযোগ করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (ডিবি) মোঃ কামরুল ইসলাম জানান, কেএমপি চোরাচালানীদের গ্রেফতারে সার্বক্ষণিক সতর্ক রয়েছে। চোরাকারবারী, মাদক ও অস্ত্র বিক্রেতাদের কোন অবস্থাতেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। এদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। অন্য সূত্র জানিয়েছেন, গোয়েন্দা পুলিশের তালিকা উল্লেখ রয়েছে খুলনার ২০/২২জন চোরাচালানী পুরো সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন