‘স্যার আমি এতিম, আমার মা বাবা নেই, আমাকে মাইরেন না। স্যারের হাতে পায়ে ধরেও ক্ষমা পাইনি। স্যার আমাকে বেদম মারধর করেছেন। আমি এখন চলা ফেরা করতে পারিনা’- এভাবেই কান্না জড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিল গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার সিতাইকুন্ড নেছারউদ্দিন তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র তৌফিক জামান মৃদুল।
আজ মঙ্গলবার তৌফিক জামান মৃদুলের বাড়িতে গেলে অসুস্থ মৃদুল এভাবেই তাকে মারধরের কথা উল্লেখ করেন।
মৃদুল উপজেলার রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের সিতাইকুন্ড গ্রামের মৃত মনিরুজ্জামানের ছেলে।
জানাগেছে, গত বুধবার (১১ আগস্ট) সিতাইকুন্ড নেছারউদ্দিন তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম ও নবম শ্রেণির ছাত্রদের মাঝে প্রীতি ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলার প্রথমার্ধে নবম শেণ্রির দল অষ্টম শ্রেণির দলকে ৩টি গোল দেয়। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হলে অষ্টম শ্রেনির ছাত্র তামিম হোসেন হাওলাদারের সাথে তৌফিক জামান মৃদুলের কথাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তামিম মৃদুলকে লাথি মারে। এ সময় মৃদুলও তামিমকে লাথি মারে। খেলার মাঠে এ দৃশ্য দেখে তামিমের পিতা স্কুল শিক্ষক শাহাদাৎ হোসেন দৌড়ে মাঠে গিয়ে মৃদুলকে বেধরক মারধর করে। মারধরে গুরুত্বর আহত মৃদুলকে প্রথমে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। এখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসকদের পরামর্শে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। এ হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর কিছুটা সুস্থ হলে অর্থের অভাবে পূর্ণ চিকিৎসা না করিয়ে মৃদুলকে বাড়ি নিয়ে আসে তার পরিবার। মৃদুল বর্তমানে শয্যাশায়ী অবস্থায় তার বাড়িতে রয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ৫২ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহাদাৎ হোসেন হাওলাদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি মৃদুলকে মারধরের কথা স্বীকার করে বলেন, মৃদুল আমার ছেলে তামিমকে মারধর করায় আমি তাকে মারধর করেছি। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় শালিস বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
মৃদুলের চাচা হাফিজুর রহমান বলেন, একটি এতিম ছেলেকে এভাবে মারধর করা একজন শিক্ষকের পক্ষে কোন ভাবেই ঠিক হয়নি। মৃদুল এখনো অসুস্থ। হাঁটতে চলতে পারেনা। মাথায় প্রচন্ত ব্যথা। এ ঘটনায় আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি।
সিতাইকুন্ড নেছারউদ্দিন তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক তছির আহম্মেদ বলেন, মৃদুল একটি ভালো ছেলে। ভালো খেলোয়াড়। তাকে যে ভাবে মারধর করেছে এটা কোন ভাবেই ঠিক হয়নি। এটা আমরা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমরা তাকে মারধরের সুষ্ঠ বিচার চাই।
মৃদুলকে মারধরের ঘটনার অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাঙ্গারহাট নৌ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মুরাদ হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন