শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি রুখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৮ এএম

দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে। বেশকিছু মেগা প্রকল্পসহ যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। এক দশকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। কিন্তু জনগণের রাজস্বের টাকায় বাস্তবায়িত এসব অববাঠামো খাতের উন্নয়নে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি-অপচয় কখনো বন্ধ হয়নি। এ নিয়ে গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপকমাত্রায় বিরূপ ধারণা সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারের দায়িত্বশীল মহলের মধ্যেও বিভিন্ন সময়ে ক্ষোভ ও উষ্মা প্রকাশ পেলেও এসব অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একেকটি অবকাঠামো বাস্তবায়নের কয়েক বছরের মধ্যেই ভেঙ্গে যাচ্ছে। সরকারি স্থাপনায় রডের বদলে বাঁশ ব্যাবহারের ঘটনাও উদঘাটিত হয়েছে। এমনকি প্রকল্পের কাজ চলমান অবস্থায় এবং আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই বিভিন্ন স্থানে ধসে পড়ার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়াডের্র রামডাকুয়া গ্রামে তিস্তার শাখা নদীর উপর সাড়ে ৫ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত একটি ব্রীজের উদ্বোধনের আগেই এর সংযোগ সড়কে ধস নেমেছে। ২০১৯ সালে সেতুটির নির্মান কাজ শুরু করে চলতি বছরের এপ্রিলে কাজ শেষ হলেও এরই মধ্যে ৯৬ মিটার দীর্ঘ সেতুর দুই পাশে ৫০ মিটার সংযোগ সড়কে ধস দেখা দেয়ায় সেতুর ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে।

গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত আরেকটি রিপোর্টে পাবনার সাথিয়া উপজেলার বনগ্রামে আত্রাই নদীর উপর প্রায় পৌনে তিনকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি ব্রীজের নির্মানকাজ গত জুন মাসে শেষ হওয়ার পর উদ্বোধনের আগেই সেতুর সংযোগ সড়কে ফাঁটল ও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে ও গার্ডারপোল ভেঙ্গে পড়েছে। নিম্নমানের নির্মান সামগ্রী ও শিডিউল বর্হিভ‚ত উপায়ে মানহীন কাজের দরুণ এমন অবস্থা তৈরী হয়েছে বলে স্থানীয় জনসাধারণ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। দু’দিন আগে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্টে বরিশালের উজিরপুরে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি ব্রীজ উদ্বোধনের আগেই ভেঙ্গে নদীতে পড়ে যাওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়। সারাদেশে এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত ও অভিযোগ নিয়ে চলছে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচি। এমনিতেই প্রতিবছর বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের অনেকটাই বাস্তবায়ন করতে পারেনা সংশ্লিষ্ট দফতর ও বিভাগগুলো। আর যে সব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় তার বেশিরভাগই এমন সব অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের শিকার হয়। কাজ বাস্তবায়ন করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো অহেতুক সময় ক্ষেপণ, আর্কিটেকচারাল প্ল্যানিং ও নির্ধারিত মানের নির্মান সামগ্রীর বদলে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে যেনতেন প্রকারে কাজ শেষ করলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার ও প্রকল্প পরিচালকরা যেন এসব অনিয়ম-দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করে চলেছে। নির্মান ও সংস্কারের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাস্তা ভেঙ্গে আবারো খানাখন্দ সৃষ্টির ফলে জনদুর্ভোগ বেড়ে যায়। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কের জরুরি সংস্কারে বার বার বাজেট বরাদ্দের নামে দেশের মানুষের রাজস্বের টাকার অপচয়-লুটপাটের মচ্ছব আর বন্ধ হচ্ছে না।

প্রতি বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বৃহত্তম অংশ ব্যয় করা হচ্ছে সড়ক ও সেতু বিভাগ এবং সড়ক পরিবহন খাতে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ জেলা-উপজেলা, পৌরসভার মত স্থানীয় সরকারের নিজস্ব উদ্যোগে নির্মিত প্রকল্পের সর্বত্রই অনিয়ম-দুর্নীতি, মানহীনতা ও যথেচ্ছাচার দেখা যায়। শুধু রাস্তা, ব্রীজ-কালভার্টই নয়, স্কুল-কলেজের ভবন, হাসপাতাল, ঘুর্নীঝড় আশ্রয় শিবির থেকে শুরু করে সরকারের বিশেষ প্রকল্প হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মত প্রকল্পেও এমন লুটপাট-অনিয়মের চিত্র দেখা গেছে। আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতির পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ইঞ্জিনিয়ার ঠিকাদারদের যোগসাজশে গড়ে ওঠা লুটপাটের সিন্ডিকেট দেশের সম্পদ ব্যবহার করে প্রত্যাশিত উন্নয়নের সুফল থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে সম্পদের পাহাড় গড়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। এই মুহূর্তে দেশের হাজার হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়কের বিশাল অংশই ভেঙ্গে খানাখন্দে পরিনত হয়ে চলাচলের অনুপযোগি হয়ে আছে। নিম্নমানের সিমেন্ট, প্রয়োজনীয় থিকনেস, নিম্নমানের বিটুমিন-ইট-পাথর ও মাটি ভরাটের কাজে অনিয়মের কারণে কাজ শেষ হতে না হতেই ধসে পড়ছে রাস্তা-ব্রীজ, নদীতে বিলীন হচ্ছে স্কুল-কলেজসহ নানা স্থাপনা। নির্মানে অহেতুক সময় ক্ষেপণ থেকে শুরু করে নিম্নমানের কাজে অল্পদিনে ভেঙ্গে পড়ার মাশুল দিতে উপকারভোগীরা দুর্ভোগের শিকার হয়। বছরের পর বছর ধরে চলা এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাস্তব কোনো পদক্ষেপ বা জবাবদিহিতা না থাকায় দুর্নীতি-লুটপাট-অপচয় বেড়ে চলেছে। জনগণের রাজস্বের টাকার এমন অপচয় বিশ্বের আর কোথাও হয়না। সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করে সবচেয়ে খারাপ মানের রাস্তা ও সেতু নির্মান করা হয় বাংলাদেশে। দেশের সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে অবকাঠামো উন্নয়ন খাতের দুর্নীতিবাজ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
jack Ali ১৯ আগস্ট, ২০২১, ১:১৬ পিএম says : 0
যতদিন পর্যন্ত আল্লাহর আইন চলবে না ততদিন মুরতাদ মুনাফিক সরকাররা দেশ ধ্বংস করতেই থাকবে
Total Reply(0)
jack Ali ২০ আগস্ট, ২০২১, ৬:০৫ পিএম says : 0
দুর্নীতি তো হবেই চোর-বাটপার দেশদ্রোহী আল্লাহ দ্রোহী সরকার দেশ চালাচ্ছে সেই জন্য অবশ্যই দুর্নীতি হবে...
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন