পার্বত্য বান্দরবানে পাহাড়ের কোল ঘেষে বয়ে চলা নদী সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী। পাহাড়ে সবুজের মেলা ও বয়ে চলা পাহাড়ি ঝর্না। নৃতাত্তিক ১১টি জাতিগোষ্ঠীর পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট মাচাং ঘরে বসবাস। জুম চাষ, দিন শেষে ঘরে ফেরা, সন্ধ্যায় পাখির কলকাকলি, বৈশাখের উৎসব মিলিয়ে রূপকথার কোনো কল্পকাহিনী মনে হলেও এর সবই রয়েছে বান্দরবানে।
নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশী পর্যকটদের কাছে বান্দরবান একটি প্রিয় গন্তব্য হতে শুরু করেছে। সবুজের সমারোহে, পাহাড়ে নিস্তব্ধতায়, প্রিয়জনদের নিয়ে একান্ত সান্নিধ্যে কয়েকটা দিন স্মরণীয় করতে অনেকেই অতিথি হন বান্দরবানে। অনেকের মতে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার নান্দনিক পর্যটন স্পটের নাম পার্বত্য বান্দরবান জেলা। করোনাভাইরাসে পর্যটন ব্যবসায় ব্যাপক ধস নেমেছে। পাহাড়ে ছিলনা কোন কোলাহল। থেমে ছিল হৈ হুল্লা আর আনন্দ উল্লাস। প্রতি বছর ঈদ, সরকারি ছুটিসহ প্রতিনিয়ত পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড় থাকলেও গত দুই বছর পাহাড়ে ভিন্ন চিত্র, নেই কোন পর্যটকের আনাগোনা, এতে করে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়া, সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তাই সাধারণ জনগণকে মহামারি থেকে রক্ষা করে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বান্দরবানের পর্যটন কেন্দ্রগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়া হচ্ছে ১৯ আগস্ট থেকে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ১ এপ্রিল থেকে বান্দরবানের সব পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, দিন দিন লোকসানের পাল্লা ভারী হলেও আয়ের খাত শুন্য ছিল। পাশাপাশি বেকার হয়েছে হাজার হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী। এত হতাশার পরেও পর্যটন স্পট খুলে দেয়ায় প্রকৃতির নির্মল স্বাদ পেতে বান্দরবানে পর্যটকদেরর ঢল নামবে বলে আশা করছেন বান্দরবানবাসী। পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত শ্রমিকরা জানান, ৫ মাসের উপর হয়ে গেল, শ্রমিকদের গাড়ির চাকা বন্ধ রয়েছে। গাড়িগুলোর মালিক ও শ্রমিকরা পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল এবং তাদের মাধ্যমে আয় রোজগার। গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কষ্টে জীবন-যাপন করতে হয়েছে অনেক কে।
আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, জেলায় কর্মসংস্থান ও আয়ের বড় খাত হচ্ছে পর্যটন। পর্যটনের আর্থিক শৃঙ্খলায় একজন পর্যটকের পেছনে সরাসরি ১২ শ্রেণির পেশাজীবী মানুষ লাভবান হয়। সে হিসাবে বান্দরবানে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার পর্যটকের সঙ্গে ৬০ হাজার মানুষের আয় রোজগারের বিষয় রয়েছে। করোনাকালিন সময়ে প্রথম থেকে এ পর্যন্ত হোটেল-মোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিক-কর্মচারিরা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করেছে। ভবিষ্যতে শ্রমিকদের ভাগ্য কি হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা কেটে যাবে পর্যটন কেন্দ্র খোলার কারণে। হোটেল কর্মচারী জসিম উদ্দিন জানান, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করব। কোন অজুহাতে পরবর্তীতে পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ রাখলে আমাদেরকে পথে বসতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন