চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও দর্শনার্থীদের কাছে টর্চার সেল হিসেবে চিহ্নিত বগুড়ার জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ইন্টার্ন ডাক্তাদের বিরুদ্ধে আবারো রোগী ও রোগীর স্বজনদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এবার এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর পেটে লাথি মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে ইন্টার্ন ডাক্তারের বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে ইন্টার্নরা পুলিশের ওপরও হামলা করে ।
গত শনিবার রাতে শজিমেক হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে এই নির্যাতন ও হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানায় ভুক্তভোগি ও পুলিশ। ঘটনা জানিয়ে ভুক্তভোগি মাওলানা আনসার আলী মুজাহিদি জানান, এক সপ্তাহ আগে তিনি তার অসুস্থ স্ত্রী জয়নাবকে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করেন। শনিবার রাতে তার স্ত্রী অসুস্থ বোধ করলে তিনি কর্তব্যরত নার্স ও ডাক্তারদের কাছে সাহায্য চান। কিন্তু তার কথায় ডাক্তার নার্স কেউই সাড়া না দেয়ায় তিনি ফেসবুক লাইভে তার অসহায়তার বর্ণনা দিলে এ খবর চলে যায় কর্তব্যরত ইন্টার্ন ডাক্তারদের কাছে। তারা তাকে ডেকে নিয়ে একটি কক্ষে ঢুকিয়ে মারধর করতে থাকে। খবর পেয়ে তার স্ত্রী ও ভাই ছুটে আসে তাকে রক্ষা করতে। এসময় তাদেরকেও মারধর এমনকি তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পেটেও লাথি মারা হয়। এই নারকীয় ঘটনায় এবং ভুক্তভোগিদের কান্নায় হাসপাতালে এক নিস্তব্ধ পরিবেশ তৈরি হয় ।
গোপনে হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে এই খবর পৌঁছালে এএসআই রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সেখানে পৌঁছে উন্মত্ত ইন্টার্নদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে তাদেরকেও মারধর করা হয়।
ঘটনার কথা স্বীকার করে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, শজিমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রোগীদের চিকিৎসায় অবহেলা করা এবং সঠিক চিকিৎসা না দেয়ার অভিযোগ নতুন নয়। চলতি বছরের মার্চ মাসে ছুরিকাঘাতে আহত বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক তাকবির ইসলাম খান চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে মারা গেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে নিহতের স্বজনদের। এর আগে গাবতলীর রূপম নামে এক চেয়ারম্যানকে চিকিৎসকরা মারধর করেছেন মর্মে খবর পেয়ে তাকে রক্ষা করতে গিয়েও পুলিশ লাঞ্ছিত হয়। এছাড়াও হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের মারপিটের অনেক রেকর্ড আছে। ইন্টার্নদের আন্দোলন ও রোগী দেখা বন্ধ থাকায় একাধিক রোগীর মৃত্যুরও অভিযোগ আছে।
তবে এসব অভিযোগের সঠিক তদন্ত ও বিচার না হওয়ায় সমস্যা যে কাউকে মারপিট করা এমনকি পুলিশকে নাজেহাল করার মত ঘটনার জন্ম দিতেও দুঃসাহসী হয়ে উঠছে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বলে জানান তিনি। এছাড়া শনিবার রাতে পুলিশ লাঞ্ছিতের ঘটনাটি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলেও সাংবাদিকদের জানান এএসআই রাকিবুল।
তবে এমন অমানবিক ঘটনাকে নিছক হট্টগোল বলে অবহিত করেছেন শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আবদুল ওয়াদুদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের কিছুটা হট্টগোল হয়েছিল। পুলিশ এলে তারাও এরসঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তবে মারধরের কোনও ঘটনা ঘটেনি; শুধুই ধস্তাধস্তি হয়েছে। ভুক্তভোগী মাওলানা আসলাম আলী মুজাহিদি বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাদলা ইউনিয়নের নন্দগ্রামের বাসিন্দা ও ডোমনপুকুর কামিল মাদরাসা মসজিদের খতিব। তিনি জানান, অনেক কষ্টে পুলিশের সহায়তায় শজিমেক হাসপাতাল থেকে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে শনিবার রাতেই বেরিয়ে আসতে পেরেছেন এবং শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার স্ত্রীকে ভর্তি করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন