বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সুস্বাদু একটি ফল কলা। অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং স্বাদে অতুলনীয়, পুষ্টিকর ও সহজ পাচ্য, সবার প্রিয় ফল কলা। সারা বছরই কলা পাওয়া যায় এবং অন্যান্য ফলের তুলনায় সহজলভ্য দামে ও সস্তা। গ্রাম বাংলার প্রতি বাড়িতেই কলা গাছ আছে। বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত ফলের মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগই কলা। বাংলাদেশে প্রায় ১৯ জাতের কলা চাষ হয়। এর মধ্যে বীজহীন কলাই উৎকৃষ্ট। কলার আদি নিবাস দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ছোট দেশ পাপুয়া নিউগিনি। এখান থেকে কলা চাষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কলার বৈজ্ঞানিক নাম গঁংধ চধৎধফরংরধবধ প্রচলিত নাম কলা। ইংরেজি নাম ইধহধহধ যা উদ্ভিদজগতের গঁংধপবধব গোত্রের উদ্ভিদ। এ উদ্ভিদটির পাতা, ফুল, ফল, মূল ভিতরের অংশ মোচা অর্থাৎ সমগ্র উদ্ভিদটিই মানুষের উপকারী কাজে ব্যবহৃত হয়।
পুষ্টি উপাদান : ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী পাকা কলায় পুষ্টি উপাদান হলো : খাদ্য শক্তি ১৫৩ ক্যালরি, জলীয় অংশ ৭০.১ মিলিগ্রাম, শর্করা ৩৫ গ্রাম, আমিষ ০.৭ গ্রাম, চর্বি ০.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৮৫ গ্রাম, ফসফরাস ৫০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন) ১০ মিলিগ্রাম, বি-২ (রাইবোফ্ল্যাভিন) ০.০৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ২৪ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৫০০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৬ মিলিগ্রাম, খনিজ লবণ ০.৮ মিলিগ্রাম, আঁশ ০.৪ মিলিগ্রাম তাছাড়া আরো দেহের প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান পাওয়া যায়। কলার আকার আকৃতির ওপর পুষ্টি উপাদন কম বেশি হতে পারে। বড় কলায় খাদ্য উপাদান বেশি থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঃ কলা একটি প্রাকৃতিক ওষুধ। কলা অত্যন্ত উপকারী যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলে। আমাদের শরীরের শক্তিবর্ধনকারী সুকরোজ ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ এবং ফাইবার আছে। মাত্র দুইটি কলা খেলে প্রায় ৯০ মিনিট পুরোদ্যমে কাজ করার মতো দেহে শক্তি তৈরি করে। সম্প্রতি মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিন বিভাগ কলা থেকে একটি প্রোটিন বের করেছেন। যার নাম ব্যানলেক। যা থেকে এইডস রোগের ওষুধ আবিষ্কার করেছেন। তাছাড়া কলার এই ব্যানলেক প্রোটিনটি ইবোলা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করবে। কলা এমন একটি ফল যা খাওয়ার অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দেহে শক্তি উৎপন্ন হয়। কলাতে আছে পটাশিয়াম যা শরীরের এনজাইমকে সক্রিয় রাখে। রক্তচাপ বাড়তে দেয় না। তাই উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের জন্য কলা প্রয়োজনীয় খাবার। ফলে স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। কলা দেহের স্নায়ু কোষগুলোকে সতেজ ও শক্তিশালী করে। তাই যারা লেখাপড়া করেন তাদের জন্য কলা একটি উপকারী ফল। কলাতে আছে আয়রণ যা দেহে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে। ফলে দেহে রক্তশূণ্যতা দূর হয়। কলায় ট্রিপ্টফ্যান নামক রাসায়নিক উপাদান থাকে যা সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়ে মানুষের মন মেজাজ ভালো রাখে ও হতাশা কমে আসে। যারা নিয়মিত বুক জ্বালা পোড়ায় ভোগেন তারা নিয়মিত খাওয়ার পর ২/১টি কলা খান সমস্যা কমে আসবে। মেয়েদের দেহে পরিমাণমত আয়রণ না থাকলে প্রতিমাসে মাসিকে সমস্যা দেখা দেয় বা নিয়মিত হয় না। এমন সমস্যা যাদের দেখা দেয় তারা নিয়মিত কলা খান আয়রণের অভাব পূরণ হবে এবং মাসিক নিয়মিত হবে। মানসিক দিকও ভালো থাকবে। কলাতে ভিটামিন বি১, বি২, বি৬ উপাদান থাকে যা নানা রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। খাওয়ার অরুচি, স্নায়ুবিক দুর্বলতা মুখের যা, চামড়া, চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। দাঁত এবং মাড়ি শক্ত থাকে। ঘনঘন সর্দি প্রতিরোধ করে। কলা ক্যান্সার ও ডায়বেটিস রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
উপকারীতা ও ভেষজ গুনাগুণ : যারা ঘনঘন মাথা ব্যথায় বা মাইগ্রেনের ব্যথায় ভোগেন তারা পাকা কলা খান উপকার পাবেন। *যাদের পায়খানা শক্ত হয় তারা নিয়মিত কলা খাওয়ার সাথে প্রচুর পানি পান করুন সমস্যা কমে আসবে। *পিত্ত রোগে ভোগলে কলা গাছের শিকড় গুঁড়ো করে অল্প অল্প করে কয়েকদিন খান উপকার পাবেন। *মেয়েদের শ্বেতপ্রদর বা প্রস্রাবের রাস্তায় যাদের ঘনঘন সাদা স্রাব বের হয় তারা কঁচি কলা পাতা বেটে মিহি করে সাথে দুধ মিশিয়ে ঘনক্ষীরের মতো করে খেলে উপকার পাওয়া যায়। *যাদের অতিরিক্ত ওজন বা শরীর মোটা তারা নিয়মিত কলা খান ওজন কমে আসবে। *যারা দাঁত এবং হাড়ের সমস্যায় ভোগছেন তারা নিয়মিত কলা খান উপকার পাবেন। *কলা গাছের শিকড়ের রসের সাথে ঘি, চিনি মিশিয়ে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা বা প্রস্রাব বন্ধ হলে নিয়মিত প্রস্রাব হবে। *শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে বা চর্মরোগ হলে কঁচি কলা পাতা বেটে তার রস লাগালে উপকার পাবেন। * যারা ধূমপান করে তারা নিয়মিত কলা খান ধূমপানের আসক্তি কমে আসবে এবং নিকোটিনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীরকে মুক্ত রাখবে। *সকালে খালি পেটে কলা গাছের শিকড়ের রস এক চামচ করে কয়েকদিন খেলে পেঠের কেঁচো কৃমি বেরিয়ে যায়। *যারা অতিরিক্ত মানসিক চাপ সহ্য করতে হয় তারা নিয়মিত কলা খান চাপ হালকা হবে। *গর্ভবতী মায়েরা যারা গ্যাস্ট্রিকে বা বুক জ্বালায় ভোগেন তারা নিয়মিত কলা খান সমস্যা কমে আসবে। কারণ কলা প্রাকৃতিক এন্টাসিড হিসেবে কাজ করে। দেহের আয়রণ পূরণ হবে বাচ্চার স্বাস্থ্যও ভালো হবে। যারা গেঁটে বাত ও হৃদরোগে ভোগছেন তারা নিয়মিত কলা খান উপকার পাবেন। *কলাতে আছে জিঙ্ক যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। *কলাতে প্রচুর পরিমাণে লুটিন, জিয়াজ্যাথিন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহের ক্ষতিকর উপাদান ধ্বংস করে এবং দেহের তারুণ্য ধরে রাখে। এ উপকারী গাছটি বাড়ির আশেপাশে লাগান এবং যতœ করুন।
সতর্কতা : কলা খাওয়ার পর কারও সমস্যা দেখা দিলে তা বন্ধ রাখুন বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাবেন না। বাজারের ফলে নানা প্রকার রাসায়নিক ক্যামিকেল মিশ্রিত থাকে সতর্ক হয়ে কলা কিনুন এবং খান।
ষ মো. জহিরুল আলম শাহীন
শিক্ষক, কলাম ও পুষ্টি বিষয়ক লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ।
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন