শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সড়ক নয় যেন মরণফাঁদ

জিরাবো থেকে বাইপাইল দীর্ঘ যানজট খানাখন্দের কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা

সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে | প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের নাম আশুলিয়ার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও বিশমাইল-জিরাবো সড়ক। পুরো সড়কজুড়েই বড় বড় খানা খন্দের সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে রয়েছে সড়ক। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে উল্টে যাচ্ছে রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা। গর্তে আটকে পড়ছে প্রাইভেটকার ও মালবাহী কাভার্ডভ্যান। শিল্প এলাকা হওয়ায় কয়েক লাখ লোক প্রতিদিন দুর্ভোগকে সঙ্গী করে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করলেও মেরামতের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একেবারেই উদাসীন।

দেশের সবচেয়ে জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল। এখানে অনেক শিল্প কারখানা গড়ে ওঠার কারণে অসংখ্য মানুষের বসবাস। কিন্তু এই শিল্পাঞ্চল এলাকার রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে শিল্পকারখানার শ্রমিক থেকে শুরু করে এলাকার বাসিন্দাদের। সড়কের বেহাল দশার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে কারখানা কর্তৃপক্ষকে।

সড়ক সংস্কার না করায় আশুলিয়ার জামগড়া, ইউনিক, শিমুলতলা, জিরাবো, কাঠগড়াসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আবার খানাখন্দে ভরা এসব সড়কগুলোর কারণে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের।

গতকাল সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু এ সড়কের শিমুলতলা, ইউনিক ও জামগড়া চৌরাস্তা মোড় পর্যন্ত বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিনের। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, দীর্ঘদিনেও ড্রেনেজের কাজ সম্পন্ন না হওয়া এবং বিভিন্ন কল-কারখানার পানি সরাসরি সড়কে পড়ার কারণেই পানি জমে সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এই খানাখন্দের কারণে সড়কটিতে কোথাও হাঁটু পানি জমে রয়েছে। যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটায় জিরাবো থেকে বাইপাইল পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে দীর্ঘ যানজট। আবার সড়কের কোথাও ভাঙা অংশ জোড়াতালি অর্থাৎ ইট বিছিয়ে সংস্কার করতে দেখা গেছে। সেখানেও ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের ইট।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের এসব ইটের উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করলে ইট গুড়ো হয়ে যাবে। গুড়ো ইট পানির সাথে মিশে আরও ভোগান্তি বাড়বে পথচারীদের। জামগড়া এলাকায় নিম্নমানের ইট বিছিয়ে সড়ক সংস্কারের কাজে নিয়েজিত শ্রমিকদের সাথে এই প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে কেউ কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের শিমুলতলা এলাকায় যানজটে আটকে থাকা অটোরিকা চালক মো. আলমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এ যানজট নিত্যদিনের। সড়ক ভাঙাচোড়া ও পানি জমে থাকায় গাড়ি চলাচল করতে পারে না তাই এই যানজট। এই যানজট কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টাও পার হয়ে যায়।
মহাসড়কের পাশে চা দোকানি মো. মঞ্জু বলেন, প্রায় মাসখানের ধরে বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর এই সড়কটির বেহাল অবস্থা। শিমুলতলা ও ইউনিক এলাকায় সড়কে বড় বড় গর্ত হয়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় যানজট লেগেই রয়েছে।
ঢাকা জেলা ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. আব্দুস সালাম জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জামগড়া, শিমুলতলা, ইউনিক এলাকায় সড়কে ভয়াবহ ভাঙনের কারণে এই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া যানজটের আর কোন কারণ নেই। তিনি বলেন, ভাঙা সড়কের বিষয়টি একাধিকবার সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। তারা শুধু বলছে- এই রোডটি হাইওয়ে রোড, সড়ক প্রসস্থকরণের জন্য টেন্ডার হয়েছে তবে বর্ষার মৌসুমে কাজ শুরু হবে না। কিন্তু ছোট-বড় গর্ত অস্থায়ীভাবে ইট ফেলে মেরামত করা হবে। এখন সওজ কর্তৃপক্ষ ইট ফেলে রাস্তা সংস্কারের কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, যে নিম্ন মানের ইট দিয়ে সড়ক সংস্কার করছে সেই ইটের উপর দিয়ে ভারী কোন যানবাহন চলাচল করলেই ইট ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে নয়তো সরে যাচ্ছে।
সামান্য বৃষ্টিতে বাইপাইল-আব্দুল্লাপুর সড়কটিতে পানি জমে থাকার কারণে টিআই মো. আব্দুস সালাম বলেন, সড়কের পানি নামার একটি মাত্র খাল ছিল ‘নয়নজুড়ি’ খাল। খালটি ৩০ ফুট প্রসস্থ ছিল। কিন্তু দখলের কারণে খালটি এখন ৩ ফুটের মতো রয়েছে। এই কারণে পানি বের হতে না পারায় সড়কে জমে থাকছে এমনটাই তাকে জানিয়েছে সওজ কর্মকর্তারা।

সরেজমিনে জিরাবো-বিশমাইল আঞ্চলিক সড়কসহ বিভিন্ন শাখা সড়কেরও বেহাল অবস্থা দেখা গেছে। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে শ্রমিক, শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার লাখ লাখ মানুষ। দীর্ঘদিন সড়কগুলো সংস্কার না করায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে অবস্থা এতটাই নাজুক হয়েছে হেঁটে চলাচলও দায় হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও হাঁটু পানি পার হয়ে চলাচল করতে হয়।

বিশমাইল-জিরাবো আঞ্চলিক সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন রিকশা-ভ্যান, অটোরিকশা, বাস-ট্রাক ও বিভিন্ন শিল্পকারখানার যানবাহনসহ হাজারো পরিবহন চলাচল করে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পুরো রাস্তায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে সেখানে পানি জমে কাদার সৃষ্টি হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জিরাব থেকে কাঠগড়া, আমতলা পর্যন্ত এ সড়কের অবস্থা এতটাই নাজুক যে রিকশা-ভ্যানতো দূরের কথা, খালি পায়ে হেঁটে চলাচলও দুরহ ব্যাপার। প্রতিদিনই এ সড়কে চলাচলরত যানবাহন ছোট-বড় দুুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। উল্টে যাচ্ছে রিকশা, অটোরিকশা এবং রাস্তার মাঝখানে আটকে যাচ্ছে ভারী যানবাহন। ফলে প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ সড়ক দিয়ে চলাচলরত লাখো মানুষের।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, বিশমাইল-জিরাবো আঞ্চলিক সড়কটি পাঁচ বছর আগে সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর আর কোনো সংস্কার করা হয়নি। সড়ক সংস্কারের সময় পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা এবং তিতাসের গ্যাসলাইনের পাইপ বসাতে গিয়ে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাস্তায় পানি জমে কাদায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

কুটুরিয়া গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা অ্যাডভোকেট শফিক দেওয়ান বলেন, বিশমাইল-জিরাবো সড়কটির দুই পাশে বড় বড় কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় সড়কটি নিচু হয়ে গেছে। ফলে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় তা দ্রুত নষ্ট হয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হচ্ছে। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চরম ভোগান্তি নিয়ে জনগণ চলাচল করলেও জনপ্রতিনিধি কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে দুর্ভোগ লাঘবে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

পোশাক শ্রমিক নুর আলম বলেন, কাঠগড়া বাজারের সামনে সড়কে গর্তের কারণে প্রায়ই অটোরিকশা উল্টে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত হচ্ছে অহরহ। এভাবে প্রতিদিনই সড়কটির বিভিন্ন স্থানে অটোরিকশা উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছেন যাত্রীরা। এছাড়া আমতলা এলাকার বড় গর্তে মধ্যে মাঝে মধ্যেই ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ মালবাহী গাড়িগুলো আটকে যাচ্ছে। যে কারণে এই সড়কটিতে সবসময় যানজট লেগেই থাকে। আমরাও অনেক কষ্ট করে কর্মস্থলে যাতায়াত করি। ভাঙা সড়কের কারণে অনেক সময় অটো না পাওয়ায় কাঁদা পানিতে হেঁটে আসতে গিয়ে কর্মস্থলে পৌছাতে দেরি হয়ে যায়।

আমতলা এলাকার মুদি দোকানী লাল চাঁন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি খারাপ থাকায় দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই চলাচল করছে মানুষ। গাড়িগুলো সড়কে আটকে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সড়কের বেহাল দশার কারণে লোকজনও দোকানে আসতে না পারায় ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। সরকার যদি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে রাস্তাটি ঠিক করে দেয় তাহলে আমাদের অনেক উপকার হবে বলেন তিনি।

পোশাক শ্রমিক জিয়াউর রহমান বলেন, আগে ১০ মিনিট সময় নিয়ে বাসা থেকে অফিসে আসতে পারতাম। এখন রাস্তার কারণে বেশি সময় নিয়েও অফিসে সময়মতো আসতে পারি না। আবার দুপুরে খাবার জন্য যে সময় দেয়া হয় তখন অটো না পাওয়ার কারনে কারখানায় পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। এছাড়া অফিস ছুটি হলে পুরুষ-মহিলা সবাই একযোগে বের হয়, তখন হুড়োহুড়ি করে চলতে গিয়ে রাস্তায় থাকা গর্তে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার।

জিরাবো এলাকার সিলভার এ্যাপারেলস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক নুরুর রহমান জানান, ভাঙা সড়কের কারণে আমাদেরও কম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে না। রাস্তার কারণে শ্রমিক কর্মচারীরা সময়মতো কর্মস্থলে উপস্থিত হতে না পারায় কর্তৃপক্ষের কথা শুনতে হচ্ছে। সড়কের এই ভয়াবহতার কারণে শিপমেন্টের মালও সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছতে না পারায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রায়ই সড়কের গর্তে ট্রান্সপোর্টের গাড়ি বিকল হয়ে পড়ার কারণে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে সড়ক ও জনপদের ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামীম আল মামুন ও সহকারী প্রকৌশলী মো. আলমগীর রেজাউল করিমের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আরিফ হোসেন ৩১ আগস্ট, ২০২১, ১২:৫০ এএম says : 0
বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর মহাসড়ক???? দেশের একমাত্র সড়ক যাহার নাম শুনিলে ঘুম ঘুম পায়???????????? ৩/৪ ঘন্টা ঘুমানোর পরও গন্তব্যে যেতে পারি না???? উন্নয়নের মাইল ফলক???? সড়ক ও জনপদ স্যার দের ঘুম ভাংছে???????????? তাহারা লকডাউনের সময় রাস্তা ফাকা থাকার সময় রাস্তা সংস্কারের কাজ দরতে পারে নাই???? দুঃখীত তাহারা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলো ???? তাই হুস ছিলো না.. তাহারা ৩/৪ মাস হয়ে যাওয়ার পরও রাস্তার পানি টাই সরাতে পারলো না???? আর আইছে এখন ইটা দিয়ে ভেন্ডিজ করে সংস্কার করতে???????????? বিঃদ্রঃ গল্পটা ভিষণ মনে পরছে সারারাইত একটা বালিস টপকাইত????????????????????????
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন