শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

ফরিদপুরের মহাসড়কে রেলওয়ে ওভারপাস

নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি

কামাল আতাতুর্ক মিসেল : | প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

ফরিদপুরের মহাসড়কে রেলওয়ে ওভারপাসের নির্মাণকাজের অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছে। ৪ বছর আগে রেলওয়ে ওভারপাসের নির্মাণকাজে শুরু হয়। এখনো ওভারপাসের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় ফরিদপুরের বোয়ালমারীর মাঝকান্দী ও গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া রেলগেট এলাকায় চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছে লাখ লাখ মানুষের। রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণকাজ শুরু হয়েও দৃশ্যমান অগ্রগতির আগেই হঠাৎ স্থগিত হয়ে গেছে ওভারপাস নির্মাণকাজ।

অন্যদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের স্বার্থে অস্থায়ীভাবে তৈরি করা বাইপাস সড়কটি এখন যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গ্রীষ্মকালে ধূলিদূষণ আর বর্ষায় জল-কাদার ভয়ানক পরিস্থিতিতে দিশেহারা পথচারী-জনসাধারণ। মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা এ প্রকল্প নিয়ে ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, কবে হবে রেলওয়ে ওভারপাস? কবে মানুষ মুক্তি পাবে এ যন্ত্রণা থেকে ?

সরেজমিনে দেখা যায়, চার বছর আগে শুরু হওয়া ওভারপাস নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। নির্মাণকাজের সুবিধার্থে পাশ ঘেঁষে তৈরি করা বাইপাস সড়কটিরও বেহাল দশা। এই বাইপাস সড়ক দিয়েই প্রতিনিয়ত হাজার হাজার ছোট-বড় গাড়ি চলাচল করে। বর্ষা মৌসুমে এই বাইপাসের প্রায় আধা কিলোমিটার সড়কে বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। আর এসব খানাখন্দে প্রায়শই ভারী যানবাহন আটকে যায়। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি ভারী যানবাহন উল্টে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে।

রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণকল্পে বিকল্প হিসেবে অস্থায়ীভাবে তৈরি করা সড়কটি দ্রæত সংস্কার না করলে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। সেজন্য তারা অস্থায়ী বাইপাস সড়কটি সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার জোর দাবি জানিয়েছেন। এলাকাবাসী আক্ষেপ করে বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমানের চেষ্টায় বর্তমান সরকারের অবদানে এই মহাসড়ক। তবে এখন সংশ্লিষ্ট কারও মহাসড়কটি নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর জেলার সহস্রাইল-আলফাডাঙ্গা সংযোগ সড়কের উন্নয়নসহ মাঝকান্দী-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ ২০১৬ সালে একনেকে অনুমোদন পায়। এতে বরাদ্দ ছিল ২৩৯.৬৪ কোটি টাকা। প্রকল্প শুরুর তারিখ ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল। প্রকল্পের কাজ শেষ করার মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। তবে আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ সমাপ্ত হয় ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বরের আগে। মহাসড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ৪৪ কিলোমিটার। তার মধ্যে ফরিদপুর অংশ হচ্ছে ৩৫.৫৯ কিলোমিটার। আর সাতৈর রেলওয়ে ওভারপাসের (উড়াল সেতু) স্থানটি ১৫ কিলোমিটারের স্থানে। এই প্রকল্পেই ওভারপাসটি নির্মাণ হওয়ার কথা। কিন্তু এক তৃতীয়াংশের কাজেই থমকে আছে ওভারপাসটি নির্মাণের কাজ। স্থানীয় বাসিন্দা মো. গোলাম কিবরিয়া দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, দীর্ঘদিন কাজ না করে এভাবে ফেলে রেখে মানুষ ও যানবাহনের ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত এর সমাধান চাই।

এ বিষয়ে সাতৈর এলাকার বাসিন্দা জহির হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এত সুন্দর সড়ক। এলাকার মানুষ যা স্বপ্নেও ভাবেনি। সামান্য এইটুকুর জন্য মানুষের দুর্ভোগের যেনো শেষ নেই। মানুষের কষ্ট কাকে বলে যে এইবটুকু সড়ক দিয়ে চলাচল করেছেন তিনি ভালো বলতে পারবেন। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার মতো নয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা এ ভোগান্তি থেকে মানুষ মুক্তি চায়।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথের উপসহকারী প্রকৌশলী সুমন কর্মকার বলেন, সাতৈর রেলওয়ে ওভারপাসের (উড়াল সেতু) দৈর্ঘ্য ৪.৩৪.৫ মিটার। যার ব্যয় ধরা হয় ৩৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। কাজটির মূল ঠিকাদার হচ্ছে এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজটি জয়েন্ট ভেঞ্জার (জেবি) করে নেয় মেসার্স এমএস প্রকৌশলী নির্মাণ বিশারদ নাম প্রতিষ্ঠান। যার স্বত্বাধিকারী ছিলেন সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী, মরহুম শেখ মো. আব্দুল্লাহ। তিনি আরও জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি গত ২০১৭ সালের ৭ আগষ্ট কাজ শুরু করে। এখন পর্যন্ত ৩৫ ভাগ কাজ হয়েছে। তবে বারবার তাদের কাজ করার কথা বললেও নানা অজুহাতে ফেলে রেখেছে। তবে এখন পর্যন্ত যে কাজ বাকি আছে তা করতেও কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে। আমরা আগের ঠিকাদারকে বারবার তাগিদ দিয়েও কোনো কাজ করাতে পারিনি।

তবে এ ব্যাপারে ফরিদপুর সওজে এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ও মেসার্স এমএস প্রকৌশলী নির্মাণ বিশারদের সঙ্গে যোগাযোগের ফোন নম্বর চাইলেও পাওয়া যায়নি। নির্মাণ এলাকায়ও খোঁজ মেলেনি তাদের কোনো কর্মী বা প্রতিনিধির।

এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইমরান ফারহান সুমেল বলেন, আগের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। একাধিকবার লিখিতভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তারা কাজ করবে, করছি বলে দীর্ঘদিন কালক্ষেপণ করছে। কাজ না করে ফেলে রেখেছে। তারা সময় বৃদ্ধির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমরা আর তাদের সময় দেবো না। আমরা সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তিনি আরও বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত আমরা জানতে পেরেছি। সে অনুযায়ী আগের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হচ্ছে। তাদের বাদ দিয়ে খুব শিগগিরই আবার নতুন করে টেন্ডারের মাধ্যমে নতুন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বাকি কাজ করা হবে। সকল প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন। দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু করা হবে বলেও তিনি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন