শিবচরের পদ্মারচরে হস্তান্তরের দুই বছর পরেও কোটি টাকায় নির্মিত গুচ্ছগ্রামে থাকেন না কেউ। নাগরিক সুবিধা না থাকায় তিনবছর আগে গুচ্ছগ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন হতদরিদ্ররা। অনিয়মের কারণেই সরকারের এই পুরো প্রকল্পটি ভেস্তে গেছে বলে মনে করেন মাদারীপুরের নাগরিক সমাজ। পদ্মার চরে অপরিকল্পিতভাবেই গুচ্ছগ্রামটি গড়ে তোলা হয়েছে বলে মনে করেন জেলা প্রশাসক। গুচ্ছগ্রাম থেকে হতদরিদ্রদের চলে যাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এক কোটি পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা ব্যয়ে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের চরচান্দ্রা মৌজায় নির্মাণ করা হয় হতদরিদ্রদের জন্য একটি গুচ্ছগ্রাম। ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ ৯০টি পরিবারের কাছে ঘরগুলো সরকারের পক্ষ থেকে হস্তান্তরও করা হয়। জেলার মূল ভূখন্ড থেকে দূরে পদ্মার চরে হওয়ায় গুচ্ছগ্রামটিতে যাতায়াত, বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির অভাব রয়েছে। প্রথমে কিছুদিন সেখানে বসবাস করলেও নানা সমস্যার কারণেই ঘরগুলো ছেড়ে চলে গেছে হতদরিদ্র মানুষগুলো। বর্তমানে গুচ্ছগ্রামের চারপাশ ছেঁয়ে গেছে নোংরা আবর্জনা, ঘাস আর লতাপাতায়। অনেক ঘর ভেঙেচুরে গেছে। কিছু ঘর তলিয়ে গেছে পদ্মার ভাঙনে। এখন গুচ্ছগ্রাম হয়েছে গরু ছাগল চড়ানোর স্থান। বর্তমানে এই গুচ্ছগ্রামে নদীভাঙনের শিকার অন্য ৩টি পরিবার এবং বরাদ্দ পাওয়া একটি পরিবার সেখানে মাথা গোঁজার জন্য আশ্রয় নিলেও বাকি ৮৯টি সুবিধাভোগী পরিবারের এখানে থাকেন না কেউ।
গুচ্ছগ্রামে বরাদ্দ পাওয়া পরিবারের একটি মাত্র পরিবার এই গুচ্ছগ্রামে থাকেন। সেই পরিবারের সদস্য জয়তুন বিবি বলেন, ‘এখানে যারা ঘর পাইছে, তাদের অন্য জায়গায় থাকার জমিন আছে বলেই তারা এখানে থাকে না। আমাদের কোন জমিন নাই তাই এখানে থাকি’। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ভিটে মাটি হারানো আরো ৩টি পরিবার এই গুচ্ছগ্রামের ফাঁকা ঘরে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয় নেওয়া পরিবারের সদস্যরা জানালেন একই ধরনের কথা।
রবিউল শেখ নামের এক আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তি বললেন, নদী ভাঙনের কারণে আমাদের এখন থাকার জায়গা নেই। তাই এই ফাঁকা ঘরে এসে থাকতেছি। আমরা কোন ঘর বরাদ্দ পাই নাই। এমনিতেই এই ঘরে আশ্রয় নিছি। ঘরগুলোর বেহাল দশা ও বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বলে জানালেন আরেক আশ্রয় নেওয়া পরিবারের সদস্য শেফালি বেগম। তিনি বলেন, টিন দিয়ে পানি পড়ে। ঘরের নিচে মাটি নেই। বাথরুমও ভেঙে গেছে। কারেন্ট নাই। আমাদের থাকার আপাতত কোন জায়গা নেই বলে এখানে আশ্রয় নিছি। একই ধরনের মন্তব্য করলেন আরেক বাসিন্দা আকলিমা বেগম।
পদ্মায় পানি বৃদ্ধিতে ইতোমধ্যে পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে অন্তত ২০টি ঘর। বাকি ঘরগুলোর অবস্থাও নাজুক। গুচ্ছগ্রাম নির্মাণে পরিকল্পনার অভাবের পাশাপাশি প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে কি না তা উল্লেখ করে তদন্তপূর্বক কর্মকর্তাদের বিচার চান সুধীজনরা।
টিআইবি’র মাদারীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য রাজন মাহমুদ বলেন, এই গুচ্ছগ্রামটি জনবিচ্ছিন্ন দুর্গম এলাকায় করায় মনে হচ্ছে একটি সঠিক পরিকল্পনায় করা হয়নি। তাই পুরো প্রকল্পটি ভেস্তে গেছে। সরকারের এই মহতী উদ্যোগ কেন সঠিক পরিকল্পনা করে করা হয়নি সেটি সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করি।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন পদ্মার চরে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের পরিকল্পনা ত্রুটি থাকতে পারে উল্লেখ করে সরেজমিন পরির্দশন শেষে নেয়া হবে ব্যবস্থা বলে জানান। তিনি বলেন, শিবচরের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি চরে কেন সরকারের এই প্রকল্পটি করা হয়েছে সেটির খোঁজ-খবর নিয়ে এটিকে আবারো বসবাসের উপযোগী করা যায় কি না সেটি দেখতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন