শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, শ্রবরদী ও নালিতাবাড়ি গারো পাহাড়ি এলাকায় মাল্টা ও লেবু চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারত সীমান্তঘেঁষা শেরপুরের ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ি উপজেলার গারো পাহাড়ি অঞ্চলের মাটি সুনিষ্কাশিত, উবর্র, মধ্যম থেকে দো-আঁশ। এখানকার আবহাওয়া শুষ্ক ও উষ্ণ হওয়ায় এখানে সাইট্রাস (লেবু) জাতীয় ফল চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের কমর্কতার্রা।
এ জাতীয় ফল বিশেষ করে লেবু ও মাল্টা চাষ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় ও একইসঙ্গে কমর্সংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। গত তিন বছর আগে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় লেবু ও মাল্টা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন উদ্যোক্তা আব্দুল বাতেন। বাতেন হলদীয়া গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় সরকারি গাড়িচালক। আরও নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হলে এবং সেইসাথে পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে এ অঞ্চলে লেবু ও মাল্টা চাষে বিপ্লব ঘটবে। একই সঙ্গে এ অঞ্চল অথৈর্নতিকভাবে সমৃদ্ধ হওয়ার নতুন দ্বার উন্মোচন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উদ্যোক্তা আব্দুল বাতেনসহ অন্যরা জানান, সীমান্তে হাতির উপদ্রব থাকায় তার সাড়ে ৭ একর জমি পতিত পড়ে থাকত। গত চার বছর আগে কৃষি বিভাগের লোকজনের পরামশে দুই একর জমিতে সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ব্লক প্রদশর্নীর মাধ্যমে ও তার নিজ উদ্যোগে আরও আড়াই একর জমিতে লেবুজাতীয় ফলের চাষ শুরু করে। বতর্মানে তার বাগানে ১৩০০ সিডলেস ও ৫০০ কাগজি লেবু, ১৬০ মাল্টা, ২০ কমলা, ২০ জাম্বুরা ও ৬০টি আম গাছ রয়েছে। বাগান দেখাশোনা করার জন্য দু’জন শ্রমিক রয়েছে বছর চুক্তিতে। এ ছাড়া দৈনিক মজুরিভিত্তিতে ৫ জন শ্রমিক কাজ করে। এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে প্রায় ৯ লাখ টাকা। শুধু লেবু বিক্রি করেছেন সাড়ে ১৮ লাখ টাকা। এ বছরই প্রথম প্রায় ৭০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রির আশা ব্যক্ত করেছেন এ উদ্যোক্তা। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি গাছে থরে থরে সাজানো সবুজ রঙের প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি মাল্টা। লেবু গাছগুলোয় পযার্প্ত লেবু ধরে আছে। বাগানে ৫ জন শ্রমিক নিড়ানি, পানি দেয়াসহ অন্যান্য পরিচর্যা করছেন। তেমন কোনো রোগবালাই নেই। বাগানের সঙ্গেই রয়েছে মুরগির খামার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির জানান, উপজেলায় ১৮ হেক্টর জমিতে সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ১৫০টি ব্লক প্রদশর্নীর মাধ্যমে ২৫ হেক্টর জমিতে ৬০ হেক্টর লেবুজাতীয় ফলের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৯ হেক্টর জমিতে মাল্টা, ৪ হেক্টর জমিতে বাতাবি ও সিডলেস লেবু এবং বাকি অন্য জমিতে জাম্বুরা, কমলা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ গাছে ফলন এসেছে। এ বছর প্রায় ৫০ মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এ কমর্কর্তা। এ এলাকার আবহাওয়া ও জলবায়ু সাইট্রাস লেবুজাতীয় চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ বিনামূল্যে বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। এজাতীয় ফল বিশেষ করে লেবু ও মাল্টা চাষ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় ও একই সঙ্গে কমর্সংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন এলাকার প্রবীণ ব্যাক্তিত্ব, শতবর্ষী ডা. আব্দুল বারী, আলহাজ, রেজাউর রহমান মাষ্টার, আলজাজ, শরিফ উদ্দিন সরকার ও সরোয়ার্দী দুদু মন্ডল প্রমূখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন