শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

নকল ওষুধ উৎপাদন মানুষ হত্যার শামিল

| প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

দেশে নকল ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করা নতুন কোনো ঘটনা নয়। বছরের পর বছর ধরে নকল ওষুধের বিস্তার ঘটছে। মাঝে মাঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে নকল ওষুধ জব্দ ও এর সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করলেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। ওষুধের উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে দেখভালের দায়িত্ব ওষুধ প্রশাসনের হলেও সংস্থাটি চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। উল্টো সংস্থাটির একশ্রেণীর কর্মকর্তা নকল ওষুধ উৎপাদনকারি চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। গতকাল বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, বিভিন্ন নামি-দামি দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের ওষুধ নকল করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়া চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। যেসব ওষুধ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় সেসব ওষুধ নকল করে বাজারজাত করে চক্রটি। শুধু এই চক্র নয়, আরও অনেক চক্র নকল ওষুধ উৎপাদনের সাথে জড়িয়ে আছে। ভয়ংকর ব্যাপার হলো, নকলকারীরা ক্যানসার, লিভার, হৃদরোগ, কিডনি ও করোনাসহ প্রায় সব রোগের ওষুধ নকল করছে। এর মধ্যে আইসিইউ এবং সিসিইউ’র ওষুধ ও সরঞ্জাম রয়েছে। নকল ওষুধের ভয়াবহ বিস্তারে চিকিৎসাবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, নকল ও ভেজাল ওষুধ সেবন করে মানুষ সুস্থ না হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে এবং মারা যাচ্ছে। মহামারিতে যত মানুষ মারা যাচ্ছে তার চেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে নকল ও ভেজাল ওষুধ খেয়ে। এই মৃত্যু গণহত্যার শামিল।

করোনা মহামারিতে এমনিতেই মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। তার উপর নকল ও ভেজাল ওষুধ মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠেছে। মহামারির কারণে ওষুধ প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা না থাকার সুযোগে নকলকারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নকল ওষুধে সয়লাব হয়ে গেছে গোটা দেশ। পাড়া-মহল্লার ফার্মেসি থেকে শুরু করে বড় বড় নামকরা ফার্মেসিতেও নকল ও ভেজাল ওষুধের রমরমা ব্যবসা চলছে। শুধু নকল ওষুধই নয়, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধও হরহামেশা বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের পক্ষে নকল ওষুধ শনাক্ত করা সম্ভব নয়। প্রেসক্রিপশন নিয়ে ফার্মেসিতে গেলে যে ওষুধ দেয়া হয়, তাই তারা নিয়ে আসে। এসব নকল ওষুধ সেবনে সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে মানুষ আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে, এমনকি মৃত্যুমুখে পতিত হয়। সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি হচ্ছে, আইসিইউ এবং সিসিইউতে সংকটাপন্ন রোগীদের নকল ও ভেজাল ওষুধ প্রয়োগের কারণে প্রায়শই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে। তবে নকল ও ভেজাল ওষুধের কারণে অসুস্থ হওয়া কিংবা মৃত্যুর ঘটনার বিষয়গুলো অজানা থেকে যায়। যখন নকলকারি ধরা পড়ে তখন ধারণা করা হয়, নকল ও ভেজাল ওষুধের কারণে মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। বেশ কয়েক বছর আগে নকল প্যারাসিটামল সেবন করে পাঁচ শতাধিক শিশুর মৃত্যু হয়। এ ঘটনা সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ওষুধ শিল্পে আমাদের দেশ বিশ্বে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উন্নত বিশ্বের দেশসহ ১২০টিরও বেশি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রফতানি হয়। দেখা যাচ্ছে, নকল ও ভেজাল ওষুধের উৎপাদন ও বিপনন বেড়ে যাওয়ায় এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া বির্হিবিশ্বে পড়ছে। জীবন রক্ষাকারী এই ওষুধের নকল ও ভেজাল কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে, আইনের দুর্বলতাসহ ওষুধের বাজার তদারকি না থাকায় নকল ও ভাজালকারিরা নির্বিঘ্নে উৎপাদন ও বাজারজাত করে যাচ্ছে। তারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছে। ওষুধের নকল ও ভেজাল নির্মূলে যে আইন রয়েছে তা দিয়ে প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যমান ড্রাগস আইনে নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদনকারির সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান হচ্ছে ১০ বছরের জেল। বিশেষ ক্ষমতা আইনে মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে। মাঝে মাঝে নকলকারিরা ধরা পড়লেও আইনের দুর্বল প্রয়োগের কারণে ছাড়া পেয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, নকলকারিরা তদন্ত কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ফেলে। এছাড়া কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির একশ্রেণীর কর্মকর্তা নকল ও ভেজালকারিদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা পায়। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের একশ্রেণীর কর্মকর্তার সাথেও তাদের যোগসাজস রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সর্ষের মধ্যেই ভূত বসবাস করছে। এ অবস্থা হলে, ওষুধের নকল ও ভেজাল কোনোদিনই বন্ধ করা যাবে না।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদনকারিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে এর কোনো প্রতিকার পাওয়া যাবে না। তাদের মতে, একজন খুনী একজনকে হত্যা করে। অন্যদিকে, নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদনকারিরা নীরবে অসংখ্য মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এই অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। তাদের রুখতে হবে। এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্সের বিকল্প নেই। একইসঙ্গে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে ঢেলে সাজাতে হবে। তাকে নিয়মিত বাজার তদারকি করতে হবে। ওষুধের পাইকারি বাজারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযান চালাতে হবে। যেসব কারখানায় নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদিত হয় সেসব কারখানার মালিককে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। তাদের কারখানা চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে। জনসাধারণকেও ওষুধ কেনার সময় সচেতন হতে হবে। ওষুধ প্রতিষ্ঠিত কোনো কোম্পানির কিনা এবং তার মেয়াদ রয়েছে কিনা, তা দেখে কিনতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
অলি উল্লা শেখ ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১১:৩১ পিএম says : 0
ঔষধ প্রশাসনে জনবল বাড়ানো উচিত। ঔষধ দেশের মানুষের জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার তবে এইজন্য দেশের মানুষকে সচেতন হতে হবে।
Total Reply(0)
Dadhack ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:২১ পিএম says : 0
When government is criminal then people of the country become criminal.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন