শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সিরাজগঞ্জে দুই বছরে ২৮ জেএমবি সদস্য আটক

প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা  : গত দুই বছরে সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ জেএমবির ২৮ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে নারী ও একই পরিবারের সদস্যও রয়েছেন। আটক হওয়া এসব জঙ্গীর মধ্যে ৪জন সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য।
জঙ্গীবিরোধী এসব অভিযান চলাকালীন আটককৃতদের কাছ থেকে তাজা ককটেল, জিহাদি বই, বোমা তৈরির স্পিন্টার, প্রাইমারী ডেটোনেটর, বোতাম টাইম সার্কিট, পাওয়ার জেল, প্যাকেট গান পাউডার, ভাঙা কাচ, কম্পিউটার ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। এছাড়া সিরাজগঞ্জে জেএমবির ২ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে এবং কাজিপুর উপজেলার বড়ইতলা গ্রামে জেএমবির আত্মঘাতি দলের পাঁচ সদস্য নিখোঁজ রয়েছে।
এদিকে একের পর এক জেএমবির সদস্যদের আটকের কারনে সিরাজগঞ্জে পুলিশ ও র‌্যাবের ভাবমূর্তি অনেক বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। এতে করে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থাও বেড়েছে বলে জানান অনেকে। জেএমবির সদস্যদের আটকের বিষয়টি সফলতার ফসল হিসেবে দেখছেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সফলতা ধরে রাখতে সবসময় প্রস্তুত সিরাজগঞ্জ র‌্যাব-১২ ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কর্মকর্তারা।
সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটক ২৩ জেএমবির মধ্যে ৮ জন নারী সদস্য রয়েছে। এদের ৪জন সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য। জিহাদের উদ্দেশ্যে হিযরতে যাওয়ার জন্য তারা মানষিকভাবে প্রস্তুত ছিলো বলে গোয়েন্দা পুলিশ ডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র‌্যাব-১২ সুত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর রাতে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম. মুনসুর আলী ষ্টেশন এলাকা থেকে জেএমবির প্রধান সমন্বয়ক আব্দুর নুর, এহসার সদস্য নুরুজ্জামান আরিফ, নুর ইসলাম সাগর, গায়েবে এহসার সদস্য আবুল কালাম আজাদ ও ফারুক আহমেদকে আটক করে র‌্যাব-১২। এসময় তাদের নিকট থেকে ৪৯টি প্রাইমারী ডেটোনেটর, ৪৫টি বোতাম টাইম সার্কিট, ১০ কেজি পাওয়ার জেল, বিভিন্ন প্রকার ১৫৫টি সার্কিটসহ বিপুল পরিমান জিহাদী বই ও বোমা তৈরীর সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পঞ্চক্রোশি ইউনিয়নের রাঘববাড়িয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের দুই পুত্র জেএমবির সদস্য ওমর ফারুক ও ইদ্রিস আলীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে আরো অনেকের নাম। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে একে একে আটক করা হয় সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ভেওমাড়া গ্রামের সুলতান মাহমুদ, সাহানগাছা গ্রামের সোয়াইন হোসেন ওরফে বাবু, চর সোনগাছা গ্রামের মারুফ ফয়সাল ও মোতালেব হোসেন, কাজীপুর উপজেলার বড়ইতলা পশ্চিমপাড়া গ্রামের হযরত আলী, উল্লাপাড়া উপজেলার পঞ্চক্রোশি ইউনিয়নের রাঘববাড়িয়া গ্রামের আমজাদ হোসেন।
২০১৬ সালের ২৩ জুলাই রাতে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার মাছুমপুর মহল্লা থেকে আটক করা হয় ৪ নারী জেএমবি সদস্যকে। এরা হলেন, সলঙ্গা থানার বাদুল্লাপুর গ্রামের নাদিরা তাবাসসুম রানী (৩০), বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার ক্ষুদ্র ফুলকোটের হাবিবা আক্তার মিশু (১৮), গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার বোচাগঞ্জ গ্রামের রুমানা বেগম (১৯) ও বগুড়ার শাহজানপুর উপজেলার পরানবাড়ীয়া গ্রামের রুমানা আক্তার রুমা (২১)।
গত ১ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে উ্ল্লাপাড়া উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় উল্লাপাড়া উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর ইউনিয়নের চাকশা দক্ষিণপাড়া এলাকার ইসরাফিল (২৪), চরমোহনপুর পশ্চিম পাড়ার রুহুল আমীন (৩২) ও চর মোহনপুর উত্তরপাড়ার আলমাসকে (৩০)। গত ৫ সেপ্টেম্বর কাজিপুর উপজেলার বড়ইতলা গ্রাম থেকে আটক করা হয় জেএমবির আত্মঘাতি দলের ৪ নারী সদস্য। এরা হলেন উপজেলার পশ্চিম বড়ইতলা গ্রামের আবু সাঈদের স্ত্রী ফুলেরা বেগম (৪৫), তার দুই মেয়ে শাকিলা খাতুন (১৮) ও সালমা খাতুন (১৬), একই গ্রামের রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রাজিয়া বেগম (৩৫)। তাদের আটকের পর থেকে এই গ্রামের আরো পাঁচ নারী জেএমবির সদস্য নিখোঁজ রয়েছে। এরা হলেন: বড়ইতলা গ্রামের আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী জরিনা খাতুন, মেয়ে আসিয়া খাতুন, মরিয়ম খাতুন এবং আব্দুল মালেকের স্ত্রী সাজেদা খাতুন ও মেয়ে রাবেয়া খাতুন। ডিবি পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, আটক এড়াতে জেএমবির এই আত্মঘাতী নারী সদস্যরা আত্মগোপনে রয়েছে। আত্মগোপনকারী জেএমবির সক্রিয় সদস্য। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধর্মীয় তালিমের নামে জঙ্গি মদদ জোগাত এবং জেএমবি সদস্য সংগ্রহ করত। ডিবি পুলিশের হাতে আটক রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রাজিয়া খাতুনের বাসায় প্রতি সপ্তাহে ও মাসে বৃহস্পতি ও শুক্রবার কথিত তালিম হতো। এ তালিমে দূর-দূরান্তের বেশ কিছু নারী ও এলাকার কয়েকজন ছাড়া বাকি গ্রামবাসীদের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। এই জঙ্গিরা পর্দার অজুহাতে প্রতিবেশীদের এড়িয়ে চলত। তালিম শেষে তারা খিঁচুড়ি রান্না করে খেত। বহিরাগত নারীরা আসত এ তালিমে। সঙ্গে এলাকার অল্প কয়েকজন নারীকে দেখা যেত। তবে এলাকার বাকি নারী ও পুরুষদের সেখানে যাওয়া ছিল নিষেধ। গত ১২ জুন আদালতে আত্মসমর্পন করেন উল্লাপাড়া উপজেলার জেএমবির সদস্য মারুফ ফয়সাল ওরফে মারুফ আব্দুল্লাহ। বর্তমানে সে সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারে আটক রয়েছেন। এছাড়া সিরাজগঞ্জে দুই জেএমবি সদস্য পলাতক রয়েছে। আদালত থেকে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এরা হলেন: সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার বড়ইতলার গ্রামের আবু সাঈদের ছেলে ফরিদুল ইসলাম (২৭) ও একই উপজেলার গান্ধাইল গ্রামের সোলেমান তুফানির ছেলে গোলাম মোস্তফা (৪৫)।  সর্বশেষ গত ২০ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সলঙ্গা থানার এরান্দহ গ্রামে জেলা জেএমবির শায়েখ জয়নাল আবেদীনের বাড়ীতে সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও সলঙ্গা থানা পুলিশের যৌথ অভিযান চালিয়ে পিতা ও দুইপুত্রসহ জেএমবির ৪ সদস্যকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫০টি জিহাদি বই, ১০টি ককটেল, ৫ শতাধিক বোমা তৈরীর স্পিন্টার, এক প্যাকেট গান পাউডার, চার কেজি ভাঙা কাচ উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হলেন, সলঙ্গা এরান্দহ বাজার এলাকার মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে সিরাজগঞ্জ জেলা জেএমবির শায়েখ জয়নাল আবেদীন (৫৫), তার দুই ছেলে বোরহান উদ্দিন (২৮), ইমরান আলী (২৬) ও কাজিপুর থানার গান্ধাইল দক্ষিণপাড়ার মৃত ইছাহাক উদ্দিনের ছেলে জেএমবির জেলার শাখার কোষাধ্যক্ষ আবু বকর সিদ্দিক (৪৯)।
সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: ওহেদুজ্জামান জানান, গোয়েন্দা পুলিশের সার্বক্ষনিক নজরদারি এবং অভিযানের কারনে তাদের আটক করা সম্ভব হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এজন্য পুলিশের একাধিক ইউনিট কাজ করছে। সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে কেউ পার পাবে না।
সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, আশেপাশের জেলাগুলোতে এরই মধ্যে নাশকতার বেশ কিছু ঘটনা ঘটলেও সিরাজগঞ্জে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। পুলিশের অভিযান ও গোয়েন্দা নজরদারি কঠোরভাবে বজায় রাখায় সিরাজগঞ্জের মানুষেরা অনেকটা নির্বিঘেœ রয়েছেন। আত্মগোপনে থাকা নারীদের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন