সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী : সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপের্ট অফিসের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও উপ-পরিচালকের অদক্ষতা এবং গোয়ার্তুমির কারণে থাইল্যান্ড থেকে নিঃস্ব হয়ে ফিরলেন একজন দরিদ্র প্রবাসী চাকরিজীবী। তিনি জরুরি পাসপোর্টের ফি জমা দিলেও অফিসের কিছু অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর দুর্নীতির টোপ না গেলায় তার এমন দৈন্যদশা হয়েছে। এ দরিদ্র চাকরিজীবী খোয়া যাওয়া টাকা পাওয়া ও চাকরি না পাবার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে দু’চোখে সরিষার ফুল দেখছে। তার অর্থের অপচয় ও চাকরি হারাবার দায়িত্ব নেবে কে?
মোঃ মাসুদ রানা, পিতা নওসের আলী, গ্রাম সয়াগোন্দি (ভাসানী রোড) সিরাজগঞ্জ নিবাসী লিখিত অভিযোগে জানায়, প্রায় ১৫ মাস থাইল্যান্ডে শ্রমিকের চাকরি করে তার পাসপোর্টের মেয়াদ কমে যাওয়ায় তা রিন্যু করার জন্য বাংলাদেশে আসে। গত ৭ সেপ্টেম্বর সে ব্যাংক এশিয়ায় ৬৯০০ (ছয় হাজার নয়শ’ টাকা) ব্যাংক ড্রাফট করে জরুরি পাসপোর্টের জন্য সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করেন। এ সময় ওই দিন অফিসের গেটে কর্তব্যরত জনৈক পুলিশ তার কাছে ঘুষসহ সর্বসাকুল্য নয় হাজার টাকা দাবি করে। মাসুদ তাকে না দিয়ে অপর ব্যক্তি সেলিমকে ৮ হাজার টাকা মিটিয়ে পাসপোর্ট করতে বাধ্য হয়। পূর্বের অফিসের গেটে পাহারারত জনৈক পুলিশকে টাকা না দেয়ায় সে অফিসের কতিপয় দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাজশে তার জরুরি ফি জমা দেয় ছয় হাজার নয়শ’ টাকা। পাসপোর্টটি নরমাল অর্থ্যাৎ ৩,৪৫০ টাকা ফি জমা দেখিয়ে পাসপোর্ট দিতে তালবাহানা করে। জরুরি পাসপোর্ট ১০ দিনের মধ্যে দেবার কথা থাকলেও (গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) প্রায় ২২ দিন অপেক্ষা করে পাসপোর্ট না পেয়ে উপ-পরিচালক ফাতেমা বেগমের শরণাপন্ন হন। তিনি ‘উদুরপিন্ডি বুদোর ঘারে চাপিয়ে দেন’।
অফিস কর্মকর্তা এ অনিয়মের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং পাসপোর্ট মালিক মাসুদকে পুরানো পাসপোর্ট নিয়েই বিদেশে যেতে পরামর্শ দেন। সেই সাথে নিজ হাতে তার টেলিফোন নম্বর (০৭৫১-৬২৯০৩) লিখে দিয়ে জরুরি পাসপোর্টের জমাকৃত নয় হাজার ছয়শত টাকার রিসিফে নরমাল লিখে তার হাতে দেন এবং বলেন, কোন সমস্যা হলে আমাকে টেলিফোনে জানাবে, আমি সবসমস্যার সমাধান করে দেবো। অবশেষে মাসুদ পুরাতন পাসপোর্ট যার নম্বর (এসি-৫০৯৯৯২২/১৫ ফেব্রুয়ারি-২০১২/১৪ফেব্রুয়ারি-২০১৭) ছয় মাসের কম মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট নিয়ে তাকে থাইল্যান্ড্ রওনা হন গত ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার। অবশেষে উপ-পরিচালক ফাতেমা বেগমের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক মাসুদ রানা গত ২ অক্টোবর থাইল্যান্ডে পৌঁছালে থাইল্যান্ড বিমানবন্দরে তাকে আটক করে বাংলাদেশে ফিরে যেতে বলেন। এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক ফাতেমা বেগমের সঙ্গে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করলে সে ফোন রিসিভ করেননি।
এদিকে দরিদ্র শ্রমিক মাসুদ থাইল্যান্ড বিমানবন্দর থেকে ফিরে আসতে পড়েন মহাবিপাকে। ওই বিদেশে ফিরতি টিকিট পাওয়া মুশকিল।
তারপর সে জানে না ইংরেজি ভাষা। সে যে কি বিপদ তার কোন শেষ নেই। অবশেষে আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে টিকিট কাউন্টার থেকে ফিরতি টিকিট নিয়ে ৩ অক্টোবর দেশে ফেরেন এবং ৪ অক্টোবর পাসপোর্ট অফিসে গেলে তাকে এসি-৫০৯৯৯২২ পাসপোর্টটি দেয়া হয়। এ পাসপোর্ট হাতে পেয়ে সে স্থানীয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের কাছে তার অভিযোগ তুলে ধরেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন