দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলা করোনা ভাইরাস অতিমারীর কারণে বিশ্ব অর্থনীতির প্রভ‚ত ক্ষতি হলেও ইতিমধ্যে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। বিশ্বের কোথাও করোনাভাইরাস পুরোপুরি উধাও হয়ে যায়নি।এখনো নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান মিলছে। এরপরও সবকিছু সামলে নিয়ে ভিসা সার্ভিস, বাণিজ্য ও পর্যটনের মত খাতগুলো নতুনভাবে চালু হয়েছে। শর্তসাপেক্ষে চালু হওয়া জীবন-যাপনের নতুন বাস্তবতাকে বলা হচ্ছে নিও-নর্মাল। তবে করোনার বাস্তবতায় আরোপিত কোনো কোনো দেশের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও কোয়ারেন্টাইনের শর্তাবলীর কারণে আমাদের জন্য সামাজিক-অর্থনৈতিক সংকটের কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। বিশেষত গ্রেট বৃটেনের মত দেশের সাথে বাংলাদেশের যে ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী সম্পর্কের লেনদেন রয়েছে, সাম্প্রতিক করোনা নিষেধাজ্ঞায় তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণের কারণে প্রায় ৬২টি দেশের নাগরিকদের বৃটেনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। পরিবর্তিত বাস্তবতায় ভারতসহ অনেক দেশের নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলেও বাংলাদেশকে এখনো রেডলিস্টে রাখা হয়েছে, যা বৃটেনের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও আন্ত:যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। গতকাল একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞা ও কোয়ারেন্টাইনের কড়াকড়ির কারণে বৃটেন থেকে আসা ৬ হাজারের বেশি সিলেটি প্রবাসি নানা আশঙ্কায় প্রহর গুণছেন।
সংকট নিরসন তথা রেডলিস্ট থেকে বাংলাদেশের নাম প্রত্যাহারের জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাবের সাথে একটি ভার্চুয়াল মিটিংয়ে মিলিত হয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালেও অপরপক্ষ থেকে বিষয়টি কার্যত এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। করোনার জিনোম সিকোয়েন্সিংসহ সংক্রমণ গ্রহণযোগ্যমাত্রা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য সম্পর্কে তারা সায়েন্টিফিক ডেটা দাবি করেছে। বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত ডেটা নিজস্ব ব্যবস্থাপণায় পর্যালোচনা করে তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, উপমহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে ভারতে করোনা সংক্রমণ সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সারাবিশ্বকেই আতঙ্কিত করেছিল। লাখ লাখ মানুষের সংক্রমণ ও হাজার হাজার মৃত্যুর পর ভারতে যেমন করোনা সংক্রমণ অনেকটা কমে এসেছে , একইভাবে বাংলাদেশেও তা কমে ৭-৮ ভাগে নেমে এসেছে। বৃটেন তার রেডলিস্ট থেকে ভারতের নাম বাদ দিলেও বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাম এখনো বহাল থাকায় বিষয়টি এখন ভিন্নভাবে আলোচিত হতে শুরু করেছে। ভারতকে বাইরে রেখে বাংলাদেশকে রেডলিস্টে বহাল রাখার বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়া যায়না। কেউ কেউ ভ‚-রাজনৈতিক বিষয়কেও টেনে আনতে চাইছেন। করোনা সংক্রমণ কমে আসায় দেশে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্বাভাবিক গতি ফিরে এসেছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এহেন বাস্তবতায় বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয় ও স্বাস্থ্য বিভাগ সামগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করে শীঘ্রই বাংলাদেশিদের জন্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেবে, এমনটাই প্রত্যাশা করা যায়।
করোনাভাইরাস বৈশ্বিক অতিমারীর শুরুতেই বলা হয়েছে, এই ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় যে সব দেশ যত তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিনসহ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারবে, তারাই তত তাড়াতাড়ি বাণিজ্য, উৎপাদনশীলতা ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ফিরে যেতে পারবে। করোনাভাইরাস পরীক্ষা, শনাক্তকরণ এবং ভ্যাক্সিনেশনে বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে ব্যর্থ হওয়ার খেসারত এখন দেশে দেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের দিতে হচ্ছে। বৃটেন ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়ার মত দেশও ইতিমধ্যে একাধিকবার বাংলাদেশিদের জন্য সে সব দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়েছে। গত এপ্রিলে বাংলাদেশের তরফ থেকে ভারতসহ বেশকিছু দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। সে সব এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল পুনরায় পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত নেবেন। একইভাবে বৃটিশ কর্তৃপক্ষও বাংলাদেশকে তাদের লালতালিকা থেকে বাদ দিয়ে এখানে এসে আটকে পড়া হাজার হাজার বৃটিশ-বাংলাদেশি নাগরিকের বিড়ম্বনা ও আশঙ্কা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে আমরা আশাবাদী। এ ক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিনেশনসহ সামগ্রীক কর্মকান্ডের সাফল্য সম্পর্কে অথেনটিক পরিসংখ্যান তুলে ধরার পাশাপাশি ক‚টনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। করোনাকালীন বাস্তবতাকে পুঁজি করে ভ‚-রাজনৈতিক নীতিগত ব্যবস্থায় বাংলাদেশ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, বিষয়টিকে সমুচিত গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে জোরালো কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন