বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

কাদের মির্জার নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন জাপা নেতা

নোয়াখালী ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৪ পিএম

কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার নির্মম নির্যাতনের শিকার উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম স্বপন নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে অঝরো কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ।

এমন একটি ভিডিও গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ২ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ভিডিওতে নির্যাতিত জাপা নেতা বলেন, আমাকে কালামিয়া ম্যানশনের সামনে থেকে মির্জা মিয়া আর ছেলে ৩০/৪০জন ছিল। মির্জা মিয়া কয় মাগির হুতরে ধর, পুলিশও ছিল। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে উঠিয়ে নিয়ে যায় পৌরসভার তৃতীয় তলায়। সেখানে ব্যানার ৫টিতে লেখা ছিল বঙ্গবন্ধু শিক্ষাও গবেষণা পরিষদ। পাঁচ ঘন্টারে ভাই ও ভাইরে। মুখ মন্ডল, দুই পা দেখিয়ে বলে আমার এগাইন নাই। এ সব কথা বলে তিনি বিলাপ করে অঝরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ও আল্লাহ ও আল্লাহ। কি জন্য নিয়ে গেছে আমি জানিনা। ওই খানে নিয়ে বিভিন্ন ভিডিও করছে। আমার বাবা রাজনীতি করছে আমিও করিয়ের। কোন দিন কারো সাথে ভেজাল করিনি। আমার থেকে জোর করে কিয়ের কিয়ের লেখা নিয়ে গেছে। ও আল্লাহ আল্লাহরে আমার মাথা নেই।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় কাদের মির্জা ও তার অনুসারীরা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবদুল লতিফ মুন্সীসহ তিন নেতাকে ডেকে নিয়ে বসুরহাট পৌরসভা ভবনে সংবাদ সম্মেল করতে বাধ্য করে। সেখানে দেওয়া একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুল লতিফ মুন্সী। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে নিজ ইচ্ছায় বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার সাথে সাক্ষাৎ করতে যান উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক স্বপন। পরে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়া তিনি সুস্থ শরীরে পৌরসভা থেকে চলে যান। অপরদিকে, তাদের এ ধরনের বক্তব্য নাকচ করে দিয়েছেন ভুক্তভোগী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, তারা চাপে পড়ে ভয়ে এমন বক্তব্য দিয়েছেন। যা পুরোপুরি মিথ্যা এবং আব্দুল কাদের মির্জার সাজানো নাটক। আমি সুস্থ হলে এ ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেব।।

চরফকিরা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী (ইউপি সদস্য) ও স্বপনের স্ত্রী নাজমা ইসলাম জানান, বেধড়ক মারধর করে আমার স্বামীর মাথাসহ পুরো শরীর থেঁতলে দিয়েছে, দুই পা ভেঙ্গে দেয় কাদের মির্জা ও তার অনুসারীরা। এ সময় তারা তাকে ফ্যানের সাথে ফাঁসি দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। আগে থেকেই কাদের মির্জা তাকে মুঠোফোনে গালিগালাজ করত হুমকি দিত। গত ৬ মাসে আমার স্বামী বসুরহাট যায়নি। গতকাল বিকেলে এক কাজে তিনি বসুরহাট বাজারে যান। খবর পেয়ে কাদের মির্জা তাকে আটক করে নির্মম নির্যাতন চালায়। এ ঘটনায় আমি কাদের মির্জার বিচার দাবি করছি।

নির্যাতিত স্বপন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ (কবিরহাট- কোম্পানীগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রদপ্রার্থী ছিল। এ ছাড়াও নোয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক। তিনি উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের মোখলেছের রহমান পন্ডিত বাড়ির জিয়াউল হক জিয়ার ছেলে।

এ বিষয়ে জানতে শনিবার সকাল ৯টা ২৩ মিনিটে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার ফোনে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি কল কেটে দেন। তাই এ বিষয়ে তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মো.সাইফুদ্দিন আনোয়ার জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তবে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বা তার পরিবার কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে জাপা নেতা সাইফুল ইসলাম স্বপনকে বসুরহাট বাজারের কালামিয়া ম্যানশনের সামনে থেকে কাদের মির্জার নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা তুলে নিয়ে যান। এরপর রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পৌরসভা ভবনের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে তাঁকে আটকে রেখে মধ্য যুগীয় কায়দায় নির্মম নির্যাতন চালানোর অভিযোগ করেন তার ছেলে মইনুল ইসলাম শাওন। শাওন আরও অভিযোগ করেন, বাবার সাথে থাকা টাকা, মোটরসাইকেল, মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এমন ভাবে মারধর করা হয়েছে শুধু কোন রকম জানটা রাখছে। কোম্পানীগঞ্জে রাজনীতিতে মির্জার বিরুদ্ধে যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার জন্য বাবাকে চাপ দেয় মির্জা। তার প্রতিপক্ষরা যে সকল অনিয়ম করে নাই,সে গুলো করছে বলে তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলে। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবদুল লতিফ মেম্বারকে ডেকে নিয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় তাঁর কাছে বাবা হস্তান্তর করেন।

এরপর পরিবারের সদস্যরা তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে নিরাপত্তার অভাবে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এখন বাসায় তার চিকিৎসা চলছে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন