মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে দেশের চারটি জাতীয় মহাসড়কের পাশে পণ্যবাহী গাড়িচালকদের জন্য আধুনিক পার্কিং সুবিধা সম্বলিত বিশ্রামাগার তৈরি করছে সরকার। দুর্ঘটনা রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় মহাসড়কের পাশে এইসব বিশ্রামাগারগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে পণ্যবাহী গাড়ি চালকদের জন্য। নির্দেশনা অনুযায়ী ট্রাক চালকদের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-রংপুর এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে পর্যায়ক্রমে বিশ্রামাগারগুলো নির্মাণ করা হবে।
বিশ্রামাগারগুলোতে সার্ভিস সেন্টার তৈরি করা হবে। উন্নত দেশের মতো এসব বিশ্রামাগারে খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানো, ফুয়েলিং এবং শপিংয়ের ব্যবস্থাসহ আধুনিকসহ সুযোগ-সুবিধা থাকবে। একই সময়ে কমপক্ষে ৫০টির বেশি ট্রাক দাঁড়াতে পারবে। এ প্রকল্পের প্রথম কাজটি শুরু হয়েছে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাশের্^ মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের পাঁচলিয়ায়। সড়ক ও জনপথের ১৩ একর নিজস্ব জায়গায় নির্মিত এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের প্রথম কাজে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে স্থাপনাগুলো নির্মাণ করায় প্রকল্পের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অন্যদিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের অর্ধেক কাজও শেষ করতে পারেনি। তাই চার মাস সময় বাড়ানো হলেও বর্ধিত সময়েও প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে খোদ সওজ এর কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে প্রকল্পটি ঘুরে দেখা যায়, বিশ্রামাগার ভবন ও পার্কিংয়ের রাস্তা নির্মাণকাজ ব্যবহার করা হচ্ছে মরিচা ধরা নন-গ্রেড রড, পোড়া মাটি সাদৃশ্য ইটের খোয়া, কাদামাটি ও ময়লা আর্বজনা মিশ্রিত সাদা পাথর, নন ব্যান্ডের স্যানেটারি পাইপ ও নিম্নমানের টাইলস। চিকন বালির পরীবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে ধুলা মিশ্রিত নিম্নমানের বালি। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত সামগ্রীর গুণগতমান কিছুটা খারাপ স্বীকার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাগর বিল্ডাসের সাইড ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বলেন, বাছাই করে খারাপ সামগ্রীগুলো বাদ দেওয়া হবে।
প্রকল্প এলাকায় সওজ অফিসের পদস্থ কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকার নিয়ম থাকলেও সরেজমিনে সওজ অফিসের দুজন কার্য সহকারী ছাড়া প্রকল্প এলাকায় অন্য কাউকে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অফিসের কার্য সহকারী আলমগীর হোসেন বলেন, আমরাই নিয়মিত এখানে থাকি। স্যারেরা মাঝে মধ্যে আসে। তাছাড়া তাদের তো আরও কাজ থাকে, সেগুলোও দেখতে হয়। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে আলমগীর বলেন, এগুলো ব্যবহার করলে তেমন ক্ষতি হবে না। কাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সাগর বিল্ডাসের সাইড ইঞ্জিনিয়ার জয় রায় বলেন, করোনার কারণে দু-দফায় সাড়ে ৪ মাস প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। তাই ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। কয়েকবার ডিজাইন পরিবর্তন হওয়ায় সাবস্টেশন ভবন (দ্বিতল) নির্মাণ কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ইতোমধ্যে এটির ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। পার্কিং রাস্তার কাজ হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ। ওয়ার্কসপ ভবন নির্মাণের নকশা এখনো হাতে আসেনি। তিনি আরও বলেন, শুনেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ অক্টোবর নিরাপদ সড়ক দিবসে এ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। যে কারণে অন্যসব কাজ বাদ রেখে রাত-দিন কাজ করে আমরা শুধু সাবস্টেশন ভবন ও পার্কিং রাস্তা প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ ট্রাক ও কার্ভাডভ্যান পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আকমল হোসেন বলেন, মহাসড়কে চলাচল করা পণ্যবাহী যানবাহনের চালকদের সুবিধার্থে পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের দাবির প্রেক্ষিতেই সরকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত ১৪ মাসে প্রকল্পের অর্ধেক কাজও শেষ করতে পারেনি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাড়তি চার মাসেও তারা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হবে। এছাড়া সওজ অফিসের সুষ্ঠু নজরধারির অভাব এবং নিম্নমানের পণ্যসামগ্রী ব্যবহার করে স্থাপনাসমূহ নির্মাণের অভিযোগ করে প্রকল্পের স্থায়ীত্ব নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদপত্র দেওয়া হয়েছে। তারপরও নির্ধারিত সময়ে তারা কাজ শেষ করতে পারেনি।
এদিকে, প্রকল্পের ৫৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে দাবি করে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সওজ প্রধান অফিস ইতোমধ্যে ৪২ ভাগ বিল পরিশোধ করেছে। তারা আরও কিছু টাকার জন্য আবেদন করলে সেটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২২ অক্টোবর প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা প্রসঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, আমরা দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। সম্ভব না হলে উদ্বোধনের তারিখ পরিবর্তন হতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন