শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

সউদী আরবের বিনিয়োগ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে

প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সউদী আরবের বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সউদী উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশকে আকর্ষণীয় বিনিয়োগের স্থান হিসেবে বিবেচনা করছেন। তারা মনে করছেন, বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগের সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী জানুয়ারীতে সউদী উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে। সউদী তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রীও বাংলাদেশ সফরে আসবেন। উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা করবেন। আশা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে ব্যাপক হারে বিনিয়োগের উদ্যোগ নেবেন। গত জুনে সউদী বাদশাহ সালমানের আমন্ত্রণে সউদী আরব সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সউদী বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে যে বিশেষ অনুরোধ করেছিলেন, তার ফলে তাদের আগ্রহ বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের ব্যাপারে উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উদার বিনিয়োগের নীতির দেশ উল্লেখ করে বস্ত্র শিল্প, পাট, সিরামিক, পেট্রো-কেমিক্যাল ফার্মাসিউটক্যালস, শিপ বিল্ডিং, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্লাস্টিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল ও ইলেকট্রনিক্স, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও সমুদ্র-সম্পদসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমৃদ্ধি ও লভ্যাংশে অংশীদার হতে তাদের আহ্বান জানান। তাঁর এই আহ্বানে সাড়া হিসেবে সউদী বিনিয়োগকারী এবং তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রীর এই সফরকে বিবেচনা করা হচ্ছে। সঙ্গতকারণেই আশা করা হচ্ছে, তাদের এ সফরে সউদী বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখন এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ধারাটি অত্যন্ত শ্লথ হয়ে পড়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ঋণাত্মক পর্যায়ে রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থার সংকট বিরাজ করছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি পর্যাপ্ত অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, ব্যাংক ঋণের অতিরিক্ত সুদ, পদে পদে বিনিয়োগকারীদের হয়রানির বিষয়গুলো উঠে এসেছে। বিনিয়োগকারীদের উৎসাহমূলক পরিবেশ এবং তাদের উদ্যোগকে সহজ করার যত ধরনের প্রক্রিয়া রয়েছে, তা কোনোভাবেই মসৃণ নয়। এক সময় রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করা হলেও এখন পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। তারপরও আশানুরূপ ও স্বতঃস্ফূর্ত বিনিয়োগ হচ্ছে না। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একাধিক হাইটেক পার্ক নির্মাণে সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতার কারণে অগ্রাধিকারভিত্তিক বিনিয়োগের বাধা দূর করা যাচ্ছে না। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। অথচ ক্রয় ক্ষমতার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৭তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির দেশের একটি। আন্তর্জাতিক সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাক্স বাংলাদেশকে ‘নেক্সট ইলাভেন’ এবং জেপি মরগ্যান ‘ইমার্জিং ফাইভ’ হিসেবে অর্থনীতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশকে ‘ইমার্জিং টাইগার’ হিসেবে অখ্যায়িত করা হয়েছে। এমন সম্ভাবনার একটি দেশে বিনিয়োগ খরা দেখা দেবে তা মোটেও কাম্য হতে পারে না। কাগজে-কলমে বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে আমাদের সুস্পষ্ট অগ্রগতি লক্ষণীয়। দরিদ্র জনসংখ্যা কমে ১২.৯ শতাংশে নেমেছে। কৃষিখাতে বিপ্লব সাধিত হয়েছে। জিডিপি ৬.৮ শতাংশ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে জিডিপি ৮.৮ শতাংশে উন্নীত করতে হবে বলে বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশের জনসংখ্যার সিংহভাগ তরুণ শ্রেণী, তারা কর্মস্পৃহাসম্পন্ন এবং পরিশ্রমী, স্বল্প বেতনে শ্রমিক পাওয়ার সুবিধা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান ও নিউজিল্যান্ডের বাজারে পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা রয়েছে। বিপুল এই সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগানোর সম্ভাবনা দক্ষিণ এশিয়ার খুব কম দেশেই রয়েছে। বিদ্যমান এসব সুবিধা কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ব্যাপক হারে বিনিয়োগ। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, তা কাজে লাগানোর জন্য যে সুষম কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন, তা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সরকার আন্তরিকভাবে চাইলেও যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এসব বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে, তারা এ আন্তরিকতা যথাযথভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম না হওয়ায় উন্নয়নের গতি শ্লথ হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার হার আর্থিক বছরের প্রথম দুই মাসে গত বছরের তুলনায় (শতকরা ৩ ভাগ) এ বছর কিঞ্চিত বৃদ্ধি পেলেও (শতকরা ৩.৮৬ ভাগ) তা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যের ধারেকাছে নেই। ২০১৪ সালে এ হার ছিল শতকরা ৬ ভাগ। অথচ এ বছর বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক ভাল থাকায় স্বাভাবিকভাবে তা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল। আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করি, দেশীয় অনেক শিল্পোদ্যোক্তা ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠা করে বসে আছেন। শুধুমাত্র গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগের অভাবে উৎপাদনে যেতে পারছেন না। উপরন্তু ব্যাংকের সুদ শোধ করতে করতে তাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি হলে কিভাবে বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা আগ্রহী হবেন? বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এসে যদি এ পরিস্থিতি দেখেন, তবে তারা যে বিপুল আগ্রহ নিয়ে বিনিয়োগের জন্য আসবেন, তাদের সে আগ্রহে ভাটা পড়তে বাধ্য।
বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা ও সক্ষমতা দৃশ্যমান। এ সম্ভাবনা ও সক্ষমতা কাজে লাগাতে যেসব প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যা রয়েছে, সেগুলো দূর করতে পারলে বাংলাদেশ অচিরেই প্রস্ফুটিত গোলাপে পরিণত হবে। বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চত করণে অবকাঠামো সুবিধা বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত গ্যাস, বিদ্যুৎ প্রাপ্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিনিয়োগ বোর্ডসহ অন্যান্য যেসকল বিভাগ রয়েছে, তাদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশি হোক আর বিদেশি হোক একজন বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা যেন বিমুখ না হন, এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তারা যেন কোনোভাবে ফেরত না যান। কারণ ব্যবসায়ীদের কাছে কাস্টমার লক্ষ্মী। কাস্টমার চলে যাওয়া মানে ব্যবসার ক্ষতি। পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ রয়েছে, যারা সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করেও বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারে না। আমাদের দেশে স্বেচ্ছায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন। আমরা তা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছি না। এ পরিস্থিতি চললে বাংলাদেশ নিয়ে দেশে-বিদেশে যে উচ্চাশা, তা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। সউদী আরবের বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের যে আশা ব্যক্ত করেছেন, তা আমাদের জন্য অত্যন্ত খুশির খবর। বিনিয়োগে তাদের এ আগ্রহ ধরে রাখতে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, সরকারকে তা করতে হবে। শুধু সউদী আরবই নয়, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে যেসব সমস্যা মূল প্রতিবন্ধক হয়ে রয়েছে সেগুলো সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুততম সময়ে সমাধা করতে হবে। দেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে বিনিয়োগের পথ তৈরি করার সাথে সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে আন্তরিক ও তৎপর হতে হবে। ক্ষেত্র প্রস্তুত অথচ সমাধান যোগ্য কিছু সমস্যার জন্য সেখানে ফসল ফলানো যাবে না, তা কাম্য হতে পারে না।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
SHAUKAUT ২৫ মে, ২০১৮, ৩:০০ এএম says : 0
ONURUDH ONURUDH BOLE BANGALI JISHABE HOPOMAN BUDH HOY NA KENO ER JONNO MORGODA SHOPPONNO SHOBDO BEBOJAR KORLE GONOTANTRIK BHAB DEKHAJABE
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন