করোনা সঙ্কটে দক্ষিণাঞ্চলের অর্ধ সহস্রাধিক কিন্ডার গার্টেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার কোমলমতি শিশু ও অভিভাবকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এসব শিশুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া অনির্দিষ্টকালের জন্যই অনিশ্চিয়তার কবলে। গত বছরের আড়াই মাস ক্লাস হবার পরে বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব শিশুশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা এখন কোথায় পড়াশোনা করবে তার জবাব পাচ্ছে না। অভিভাবকরাও বাচ্চাদের কোন জবাব দিতে না পেরে নিজেরাই চরম হতাশার কবলে।
দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলাতেই এখন শিশুশিক্ষা কার্যক্রম চরম বিপর্যয়ের কবলে। হতাশ অভিভাবকরা তাদের কোমলমতি শিশুদের নিয়ে এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে ছুটছেন। কিন্তু বেশিরভাগ কেজি স্কুলই হয় বন্ধ, নয়ত অস্তিত্বহীন।
করোনা মহামারীর কারণে গত বছর ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এখন কোন খোঁজ নেই। অনেক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড থাকলেও তালা বন্ধ। আবার কোন কোন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডও নেই। বাড়িওয়ালাদের ভাড়া দিতে না পাড়ায় গত বছরের শেষেই বন্ধ হয়ে গেছে বেশিরভাগ কেজি স্কুল। আর বিপুল সংখ্যক কেজি স্কুলের শিক্ষকদের বেশিরভাগই মাসের পর মাস বেতন না পেয়ে বছরখানেক আগেই নানা পেশায় যুক্ত হয়েছেন। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের অনেক শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বরিশাল মহানগরীতে ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। শিক্ষিকাদের অবস্থা আরো করুন।
বরিশাল মহানগরীতে দেড় শতাধিক শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৫০টি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। আরো ৫০টি এখনো বন্ধ থাকলেও চালুর চেষ্টা করছে। তবে দীর্ঘ দেড় বছর বেতন ভাতা না পেয়ে বেশিরভাগ শিক্ষক অন্য পেশায় যুক্ত হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠান চালু করা যাচ্ছে না। তবে বন্ধ কোন কোন প্রতিষ্ঠানের মালিক শিক্ষাবর্ষের শেষ সময়ে কোন ঝুঁকি না নিয়ে নতুন বছরে চালু করার চিন্তা করছেন। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাড়ি ভাড়া পরিশোধ বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। যেসব কেজি স্কুল এখনো অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে, তাদের প্রায় সবগুলোরই বাড়ি ভাড়া বকেয়া ৬ মাস থেকে এক বছরেরও বেশি। ফলে কোন বাড়ি মালিকই এখন বকেয়া পরিশোধ না করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করতে দিচ্ছেন না। সে ক্ষেত্রে কিছু বকেয়া পরিশোধ করেও আপোষ রফার মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করার চেষ্টা করছেন অনেকে। কিন্তু বেশিরভাগ কেজি স্কুলের পরিচালকদের সে ধরনের সঙ্গতিও নেই।
এসব ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ৬৭৬টি কেজি স্কুল বা শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের কাছে নিবন্ধিত। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকের সংখ্যা সম্পর্কে তার দফতর অবহিত নন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, করোনা সঙ্কটের পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ সবে খুলেছে। আমরা এখনো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে কাজ করছি। কেজি স্কুল বা শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষেয়ে আমরা নজর দিতে পারিনি। সরকারি নির্র্দেশনা পেলে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে অধিদফতরকে জানানোর কথাও বলেন তিনি। তবে তার জানা মতে, এসব শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালুর ব্যাপারে সরকারি কোন সহায়তা বা নির্দেশনা এখনো নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন