শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

‘বিশ্ব হসপিস ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস’ আজ চিকিৎসার অযোগ্য ৬ লাখ রোগী সেবা থেকে বঞ্চিত এখন থেকে পাশে থাকবে চিকিৎসকরা -ডা. ইকবাল আর্সলান

প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : চিকিৎসার অযোগ্য রোগীদের জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে নিদারুণ কষ্ট-যন্ত্রণায়। বাড়ি-ঘরে উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় জীবনের শেষ সময়ে যন্ত্রণা লাঘবের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাটুকু থেকেও বঞ্চিত থাকতে হয় তাদের। অথচ ওষুধের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত, দক্ষ জনবল সৃষ্টি ও জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলেই দেশে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের (প্রশমন সেবা) বিস্তার ঘটনো সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বর্তমানে দেশে ছয় লাখ মানুষের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন। যাদের অধিকাংশই এই সেবা থেকে বঞ্চিত।
আর তাই চিকিৎসার অযোগ্য রোগীদের পাশে দাঁড়াতে দেশে প্রথমবারের মতো পালন করা হবে ‘বিশ্ব হসপিস ও প্যালিয়েটিভ কেয়ার দিবস-২০১৬’। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘ব্যথাপূর্ণ জীবন এবং ব্যথাসহ মৃত্যু : কোনোটিই কাম্য নয়’। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) দিনব্যাপী বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বে প্রতি বছর আনুমানিক ৫ কোটি ৬০ লাখ মানুষ মারা যায়। যাদের ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যুর পূর্বে ব্যথামুক্তি এবং অন্যান্য চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন পরে। কিন্তু দেশে এসব রোগীর সেবায় ক্ষুদ্র পরিসরে চালু হওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া কোন প্রতিষ্ঠানই গড়ে ওঠেনি। এমনকি ২০১৪ সালে জাতিসংঘ স্বাস্থ্যসেবার মূল ধারায় প্যালিয়েটিভ কেয়ার অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছেন। অথচ এখনো জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে বিষয়টি স্থান পায়নি। সূত্র মতে, পৃথিবীতে নিরাময়হীন রোগে আক্রান্ত রোগীর সঠিক পরিসংখ্যান নেই, তবে ২০০৭ সালে শুধুমাত্র ক্যান্সার রোগে পৃথিবীতে মারা গেছেন প্রায় ৭০ লাখ মানুষ। একই সময় এইড্স্ রোগে এ মৃত্যু ছিলো ২০ লাখ বলে অনুষ্ঠানে উল্লেখ করা হয়। এ সব আক্রান্ত মানুষের শতকরা ৭০ জন তীব্র শারীরিক ব্যথা সহ্য করেছেন মৃত্যুর আগে। যদিও খুব অল্প প্রশিক্ষণে তাদের ব্যথাবিহীন মৃত্যু নিশ্চিত করা যেতো, শ্বাসকষ্টে আরাম দেয়া যেতো, দুর্গন্ধযুক্ত ক্ষতস্থান পরিষ্কার করা যেতো। পরিসংখ্যানগত অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ প্রতি বছর নতুন ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটি ৪০ লাখ। এই সব রোগীর দুই-তৃতীয়াংশই থাকবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, যারা মোট বিশ্বস্বাস্থ্য ব্যয় খাতের মাত্র দশ শতাংশ ব্যবহার করে। তাহলে এই সব মানুষ কি জীবনের প্রান্তিক সময়টুকু কোনো চিকিৎসাই পাবে না!
দেশে ১০ লাখ ক্যান্সার রোগী বাস করেন এবং প্রতি বছর ২ থেকে ৩ লাখ নতুন রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, এ সব রোগীর শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ নিরাময় অযোগ্য অবস্থায় চিকিৎসকদের কাছে আসেন। এসব রোগীর জন্য আমাদের দেশে কোনো সংগঠিত চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা নেই। অত্যন্ত অল্প ব্যয়ে, সীমিত প্রশিক্ষণে পৃথিবীর বেশ কটি দেশ তাদের নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি জাতীয় উপসর্গ প্রশমন চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থা এবং ব্যথামুক্ত অন্তিম সময় নিশ্চিত করতে পেরেছে। দক্ষিণ ভারত, স্পেন, উগান্ডা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সমাজের সকলে মিলে ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার’ এক নতুন মাত্রার সংযোজন করেছে।
প্রফেসর ডা. নিজামুদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্রমবর্ধমান ক্যান্সার ও অন্যান্য অসংক্রামক ব্যাধি, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি দেশে প্যালিয়েটিভ কেয়ারের গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলেছে। নিজামুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্যালিয়েটিভ কেয়ারে ব্যবহার করা হয় মরফিন জাতীয় ওষুধ। এটা আমাদের দেশে ব্যবহারে সরকারি বিধি-নিষেধ আছে। সব জায়গায় পাওয়া যায় না। এরকম হলে প্যালিয়েটিভ কেয়ার নিশ্চিত করা দুষ্কর। এজন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রণীত আইন সংশোধন করতে হবে, ওষুধ কোম্পানিগুলোকে একই জাতীয় দামি ওষুধের পরিবর্তে কম দামে মরফিন প্রস্তুতে উৎসাহিত করা উচিৎ। প্রয়োজনে সরকারের এসেনসিয়েল ড্রাগস কোম্পানির মাধ্যমে মরফিন উৎপাদন ও বিতরণ নিশ্চিত করা যেতে পারে।
বিএমএ’র মহাসচিব প্রফেসর ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, আরোগ্য অযোগ্য রোগীর কষ্ট-যন্ত্রণা লাঘবে সকলের ভূমিকা আছে। চিকিৎসকদের ভূমিকা সর্বাগ্রে। আর তাই এসব রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই বিএমএ এ বছর থেকে পৃথকভাবে বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিএসএমএমইউ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিট ছোট পরিসরে চালুসহ দেশে বিভিন্ন সংগঠন প্যালিয়েটিভ সেবা ক্ষুদ্র পরিসরে প্রদান করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন