শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বদলে দিতে কী পারে দুই দেশের সীমান্ত রেখা?

ফেনী নদীর ভাঙন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

আন্তর্জাতিক ফেনী নদীর এক পাড়ে বাংলাদেশের আলিনগর এবং অপর পাড়ে ভারতের আমলিঘাট। তবে অনেকটা শান্ত এই নদীর বাংলাদেশ অংশের অনেক এলাকার নদীর পাড় ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে নদীর হঠাৎ স্রোত আর বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলন করাকে। কিন্তু নদীর প্রবণতা অনুযায়ী, একদিকে ভেঙে গেলে আরেকদিকে চর পড়তে শুরু করে। ফলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, সীমান্তের এই নদীর বাংলাদেশ অংশের পাড় ভেঙে যদি ভারত অংশে চর পড়তে শুরু করে, তাহলে হয়তো কোন কোন স্থানে সীমান্ত রেখাও পাল্টে যেতে পারে। চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার সীমান্তবর্তী একটি ইউনিয়ন করেরহাট। এই ইউনিয়নের শেষ প্রান্তে বয়ে যাচ্ছে ফেনী নদী, যার অন্যপাশে ভারত। গত কয়েক বছর ধরেই নদীর বাংলাদেশ অংশে ভাঙন হচ্ছে, এই বছর তা আরও তীব্র হয়েছে।

করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এনায়েত হোসেন নয়ন বলছেন, নদীতে বালু তোলার জন্য যাদের ইজারা দেয়া হয়েছে, তারা অনুমতির চেয়ে বেশি জায়গা নিয়ে ছোট ছোট মেশিন দিয়ে ইচ্ছামত বালু তুলছে। ফলে আমার ইউনিয়নের অনেক জায়গায় নদীর পাড় ভেঙে যাচ্ছে। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইউনিয়নের অনেক ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। অনেকে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। তিনি প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানিয়েছেন। ফেনী নদী : পানি প্রত্যাহারে কী প্রভাব পড়বে? সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর ওপর সেতু কতটা সুবিধা দেবে বাংলাদেশকে? ‘মানবিক কারণে’ ভারতকে ফেনীর পানি দিল বাংলাদেশ। ফেনী নদী থেকে আরো পানি পাবে ভারত। চট্টগ্রামের পাশাপাশি ফেনীর আরেকটি সীমান্তবর্তী মুহুরি নদীর বাংলাদেশ অংশেও ভাঙ্গন তীব্রতর হয়েছে।

চট্টগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা নাহিদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, পাহাড়ি নদী হওয়ার কারণে ঢল নেমে অনেক সময় ভাঙন দেখা দেয়। সেই সঙ্গে বালু উত্তোলনের প্রবণতার কারণেও অনেক জায়গায় নদী ভাঙছে।
মিরসরাই ছাড়াও ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, সোনাগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় নদী ভাঙ্গছে। নদীর প্রবণতা অনুযায়ী, এক পাড়ে নদী ভাঙতে শুরু করলে অন্য অংশে পলি জমতে শুরু করে। অনেক সময় উভয় পাড় ভাঙতে থাকলে নদীর মাঝে পলি জমে।

নদী গবেষক মমিনুল হক সরকার বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে নদী থেকে বালু তোলা হলে পাড়ের নীচের মাটির স্তর নেমে যায়। তখন পানির চাপে সেই পাশের পাড় দ্রুত ভেঙে পড়ে যায়। সাধারণত নদীর একপাশ ভাঙতে শুরু করলে আরেক পারে পলি জমে। বিশেষ করে বাঁক-প্রবণ নদীগুলোর বাকে পলি জমার প্রবণতা বেশি থাকে। এভাবে নদীর আকার বা অবস্থানের পরিবর্তন হতে পারে।

ফেনী ও মুহুরি নদীর কিছু অংশ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত রেখা হিসাবে কাজ করে। অর্থাৎ এই নদীটিকেই দুই দেশের সীমান্ত বলে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ অংশে যদি বেশি ভাঙন দেখা দেয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবে ভারতীয় অংশে পলি জমে নতুন চরের জন্ম হবে। তখন নদীর গতিপথও বদল হবে। ভারত ভাঙন ঠেকাতে পারলেও পারছে না বাংলাদেশ।

চট্টগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা নাহিদুজ্জামান খান এবং ফেনীর কর্মকর্তা মো. জহির উদ্দিন জানিয়েছেন, নদী ভাঙনের বিষয়টি তাদের নজরে রয়েছে এবং তার এর মধ্যে এই বিষয়ে বেশ কিছু ব্যবস্থাও নিয়েছেন। তবে তারা স্বীকার করেছেন, সীমান্ত এলাকায় জটিলতার কারণে কিছু কিছু পদক্ষেপ থমকে আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারত তাদের অংশে বেশিরভাগ স্থানেই নদীতে ভাঙন ঠেকানোর ব্যবস্থা ঠিক করে ফেলেছে। কিন্তু বাংলাদেশ যখন একই কাজ করতে যায়, তখন বাধা দিয়েছে বিএসএফ। ফলে সীমান্ত নদীর অনেক স্থানে ভাঙন তীব্রতর হওয়ার পরেও বাংলাদেশের কর্মকর্তারা সেটি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না।

কী করছে যৌথ নদী কমিশন : বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যেসব যৌথ নদী রয়েছে, সেসব নদী সংক্রান্ত সমস্যা আলোচনা ও সমাধানের জন্য দুই দেশের মধ্যে একটি যৌথ নদী কমিশন রয়েছে। এই কমিশন নদী সংক্রান্ত বিষয়ে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার পর সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু ফেনী নদীর এই ভাঙন ঠেকাতে গিয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা যে বাধার মুখোমুখি হচ্ছেন, তা নিয়ে এই কমিশন কী করছে?

বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মো. মাহমুদুর রহমান বলছেন, ভারতের সাইডে বেশিরভাগ জায়গায় নদী প্রোটেকশন করে ফেলেছে। বাংলাদেশ সাইডে সেটা করা যায়নি। কিছু শুরু করেছে, কিছু ইন্ডিয়ান সাইডের বাধার কারণে কমপ্লিট করতে পারেনি। তাই বর্ষার সময় আমাদের অংশেই ভাঙনটা বেশি হয়।

তিনি জানান, যৌথ নদী কমিশনের আলোচনার মাধ্যমেই সীমান্ত নদীতে কাজের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তারপরেও অনেক স্থানে সীমান্ত এলাকার নদী রক্ষার কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ বাধার মুখোমুখি হয়। এরকম অনেক অভিযোগ কমিশনের কাছে আসে। সেটা আবার ভারতের অংশের সদস্যদের জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়।

তিনি আরো বলেন, অফিশিয়ালি কিন্তু ঠিক আছি। যখনই কোন সমস্যা হয়, আমরা জয়েন্ট রিভার কমিশন দুই সাইডেই সমাধান করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করি। কিন্তু অন গ্রাউন্ড যখন কাজ করতে যাই, তখন তাদের স্বার্থের কোন ব্যাঘাত হলে কাজ করতে দেয় না বা সাময়িক বাধা দিয়ে রাখে।

সীমান্তের অদলবদল হওয়ার সম্ভাবনা কতটা? : বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত নদী রয়েছে ৫৪টি। মিয়ানমারের সঙ্গে রয়েছে তিনটি নদী। এসব নদীর কোন কোনটি সীমান্ত দেয়াল, কাঁটাতার বা পিলার দিয়ে সীমানা চিহ্নিত রয়েছে। আবার কোন কোন নদীর পানিই দুই দেশের সীমানা। অর্থাৎ সেসব নদীর অর্ধেক পানির মালিক একদেশ, বাকি অর্ধেকের মালিক আরেক দেশ।

নদী গবেষক মমিনুল হক সরকার বলেন, ফেনী নদীও সেইরকম একটি নদী। এই নদীর অবস্থান যেখানে থাকবে, তার পানির অর্ধেক বাংলাদেশের, বাকি অর্ধেকের মালিক ভারত। ফলে সেখানে যদি নদী পাড়ের কোন পরিবর্তন হয়, তাহলে সীমান্ত রেখারও পরিবর্তন হবে। পাহাড়ি নদীর ক্ষেত্রে এইরকম পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। তবে কোন কারণে নদী ভাঙন তীব্রতর হলে বাংলাদেশ অংশের ভূখণ্ড কমে যেতে পারে। আবার ভারত অংশে চর পড়লে তাদের ভূখণ্ড বাড়বে।

যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মো. মাহমুদুর রহমানও বলছেন, বাংলাদেশ অংশের নদী ভাঙন তীব্রতর হলে আমরা ভূখণ্ড হারাবো। তবে যখনই আমাদের সাইডে ভাঙন দেখা দেয়, আমরা তো প্রটেকশনের ব্যবস্থা নেই। তবে এটা ঠিক যে, এটাই ধরে নেয়া হয় যে, এই নদীর স্রোত যেখানে থাকবে, সেটাই দুই দেশের সীমানা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Hassan Khan ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৯:১০ এএম says : 0
এখানে ভারতের ষড়যন্ত্র আছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে।
Total Reply(0)
মুক্তিকামী জনতা ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৯:১০ এএম says : 0
ভারত নদী ভাঙনের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের দিকে চাপ দেয় কিনা খেয়াল রাখতে হবে।
Total Reply(0)
নুর নাহার আক্তার নিহার ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৯:১১ এএম says : 0
নদীর ভাঙনে কত কিছু বদলে যায়...
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন